গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জিম্মি মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে হামাস। এর অংশ হিসেবে পাঁচ জিম্মিকে মুক্তি দেবে তারা। যাদের মধ্যে একজন জীবিত আছেন। আর বাকি চারজন মারা গেছেন। তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিক। যে জীবিত জিম্মি মুক্তি পাবেন, তার নাম ইডান আলেক্সান্ডার। তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, পাঁচ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস। তারা শুক্রবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, বৃহস্পতিবার হামাস নেতৃবৃন্দ মধ্যস্থতাকারী ভাইদের কাছ থেকে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব পায়। এর পর গতকাল সকালে হামাস নেতৃবৃন্দ এতে দায়িত্বশীলতা ও ইতিবাচকভাবে জবাব দেয়। যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি সেনা ইডান আলেক্সান্ডারের মুক্তির চুক্তিটি। যার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও রয়েছে। এর সঙ্গে চার দ্বৈত নাগরিকের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে হামাস।

এদিকে গাজা পুনর্গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন করতে পূর্ব আফ্রিকার তিনটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে শুক্রবার এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব নিয়ে সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এই প্রস্তাব সুদান তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দিয়েছে। আর সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনবিষয়ক কোনো প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগই করা হয়নি। 

গতকাল আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গুলি ছুড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়ও। দুই ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধে অবরুদ্ধ গাজায় বিভিন্ন ধরনের রোগ বাড়ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ