শ্রমিকদের বেতন–বোনাস পরিশোধ করা হোক
Published: 15th, March 2025 GMT
যে শ্রমিকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করে কারখানা সচল রাখেন, সেই শ্রমিকদের যদি বেতন ও বোনাসের দাবিতে ফি বছর আন্দোলন করতে হয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো কারখানা লে–অফ ঘোষণা করেছেন মালিক। ঈদের আগে এটা শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুরতাই বটে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরে গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে আন্দোলন করে আসছেন। কখনো কারখানা বন্ধ করে, কখনো মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা আন্দোলন করছেন। গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকার কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ বেশি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদ ও পোশাক কারখানা খোলার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন কারখানার গেটে গেলে আশপাশের অন্তত ১৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এটা খুবই উদ্বেগের খবর। এক কারখানার কারণে অন্য কারখানা কেন বন্ধ ঘোষণা করা হবে? প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কারখানায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক।
শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন পাওনার দাবিতে। আর মালিকেরা সুযোগ পেলেই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। গাজীপুরের একটি বন্ধ কারখানার এক শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘অনেক কষ্টে আছি আমরা। বাচ্চাদের খাবার কিনে দিতে পারি না। বেতন না পেলে আমরা কীভাবে সংসার চালাব।’
মালিকদেরও সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু তার সমাধান কারখানা বন্ধ করা নয়। সমাধান খুঁজতে হবে কারখানা চালু রেখেই। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কেবল উৎপাদনই ব্যাহত হচ্ছে না, সড়ক–মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকার কারণে রোজার দিনে যাত্রীদেরও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
গাজীপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টার্সে বিশেষ কল্যাণ সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সড়ক অবরোধ করে ঈদের সময় যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চ মাসের আংশিক বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। আমরা শ্রমিক ভাই ও বোনদের বলতে চাই, তাঁদের ন্যায়সংগত পাওনা আদায়ে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় আছি। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’
আইজিপি যে শ্রমিকদের পাশে থাকার কথা বলেছেন, কিন্তু সেটা কেবল মুখে বললে হবে না, কাজেই প্রমাণ করতে হবে। মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করলে তঁাদের আন্দোলন থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন নতুন কোনো দাবিতে নয়, বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাস পাওয়ার জন্য। অনেক কারখানায় শ্রমিকেরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পাননি। মার্চ মাসের শেষে ঈদের ছুটি। তার আগে মার্চের অর্ধেক বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন মালিকেরা। এটা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার নয়।
ঈদের আগে শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মালিক–শ্রমিক উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ঈদের আগে যাতে সব কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেন, সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখে কখনো শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান থেকে এলো ২৬ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল
পাকিস্তান থেকে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। জাহাজে আসা চালের নমুনা পরীক্ষা শেষে সেগুলো খালাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শনিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমদাদ ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারি সম্পাদিত
জি টু জি চুক্তির আওতায় পাকিস্তান থেকে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি মরিয়ম জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।