Samakal:
2025-04-14@07:43:31 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

Published: 15th, March 2025 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

‘বড় হয়ে আমি ডাক্তার হবো’– যে শিশুটি মাঝেমধ্যেই বলত এমন কথা, সে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের পর থেকে পার্বতীপুরের এই শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিশুটি ঘর থেকে বের হতে পারে না, লেখাপড়াও বন্ধ । আশপাশের কারও কারও কটু কথা শুনতে হয়। ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরের ঘটনা। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়ায় এই কন্যাশিশুকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষণ করে তার খেলার সাথী রেশমার বাবা সাইফুল ইসলাম। ব্লেড দিয়ে শিশুটির প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয় ছোট্ট শরীরে। এদিকে, প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলায় পাঁচ বছর অনিয়ন্ত্রিত মূত্র সমস্যার কারণে সে চলাফেরা করতে পারেনি। পরে রাজধানীর বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, সমাজসেবীর সহায়তায় তার চিকিৎসা হলে বর্তমানে প্রায় আধঘণ্টা মূত্র আটকে রাখতে পারে। ৯ বছর ধরে সে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।  

ওই বছরের ২০ অক্টোবর তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুলের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে সে আপিল করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে উই ক্যান অ্যালায়েন্সের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক সমকালকে বলেন, ‘কোন গ্রাউন্ড দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে এই আসামি জামিন পায়, তা বোধগম্য নয়। মেয়েটার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। আসামিরা এভাবে জামিন পেলে নারী নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে। ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে সমাজের মানুষের আচরণ স্বাভাবিক নয়। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বিভিন্নভাবে এই পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন তো মেয়েটির ঘরের সামনে দিয়েই চলাচল করে আসামি। তাদের ঘরের পাশেই আসামির ঘর। 
শুধু এই শিশুই নয়, ধর্ষণ কিংবা শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার অসংখ্য শিশু ও নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরও জামিন হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীরা আতঙ্কে আছেন। 
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়া প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওয়ালিউর রহমান দোলন বলেন, শুধু ধর্ষণ মামলার আসামিই নয়, এসিড সহিংসতাসহ বিভিন্ন আলোচিত ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বিভিন্ন উপায়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধকে ম্লান করে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোর্টের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। কোর্টের বাদীপক্ষকে এসব মামলার ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানী ও কঠোর মনোভাবাপন্ন হওয়া উচিত। 

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় সাত ভাগেরও কম। সাজা পায় স্বল্পসংখ্যক আসামি। আইনের ত্রুটি, ফরেনসিক পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ, অর্থের দাপট এবং সামাজিক কারণে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও ধর্ষক ভীত হচ্ছে না। 
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান 

(এ্যানী) বলেন, ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। অনেক ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করতে সাহস পায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থ বা পেশির দাপটে মামলা তুলে নেওয়া হয়। এতে আসামিরা পার পেয়ে যায়। এখনতো ধর্ষণের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও জামিন দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবহার। পুরুষরা যাই করুক না কেন, সবকিছুতেই তারা পার পেয়ে যায়। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা দিতে পারে না। বর্তমানে কন্যাশিশু ও নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনোভাবেই যেন ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিন না পায়। এমনটি ঘটতে থাকলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকবে না।

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইলিশের দাম যেন ঠিক থাকে, তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না: উপদেষ্টা ফরিদা

ইলিশকে গ্লোবাল ফিস উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘যে ১১টা দেশে ইলিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ইলিশ বিশ্বের মধ্যে একটা সম্পদ, যা বাংলাদেশে আছে। ইলিশের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে বিশ্বের কাছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই ইলিশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে। জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।’

শনিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনার ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরুপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের যেতে চাই না। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ইলিশ প্রকৃতি থেকে আসা একটা মাছ। এটা প্রাকৃতিকই রাখা ভালো। একই সঙ্গে জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে তা আমাদের দেখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।

পরিবেশ ওপর গুরুত্বরোপ করে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার প্রভাবতো আছেই, সেই সঙ্গে বৃষ্টি হওয়া না হওয়ার সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার একটা সম্পর্ক আছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য গবেষকদের আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর ৯৫ ভাগ জেলেরা যদি ইলিশ ধরা বন্ধের সময় তারা না ধরে তাহলে কেন আমরা বাকি কাজটা করতে পারব না। জেলারা যেখানে মাছ ধরতে যায়, সেখানে দস্যুরা আক্রমণ করে। তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। আমরা যে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকি তা যেন জেলেরাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

ইলিশের অর্থনৈতিক মূল্যের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মৌসুমে দেশ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব। আমরাও ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। তবে আগে আমাদের দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে।

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, যারা ইলিশ খায় তাদের বুঝতে হবে ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। একদিন পরেই পহেলা বৈশাখে তখন যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন তারা মূলত জাটকা খাবেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন প্রফেসর ড. ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইলিশের দাম যেন ঠিক থাকে, তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না: উপদেষ্টা ফরিদা