Samakal:
2025-03-15@02:55:58 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

Published: 15th, March 2025 GMT

সমাজে তাদের ভয়ের জীবন

‘বড় হয়ে আমি ডাক্তার হবো’– যে শিশুটি মাঝেমধ্যেই বলত এমন কথা, সে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের পর থেকে পার্বতীপুরের এই শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিশুটি ঘর থেকে বের হতে পারে না, লেখাপড়াও বন্ধ । আশপাশের কারও কারও কটু কথা শুনতে হয়। ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরের ঘটনা। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়ায় এই কন্যাশিশুকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষণ করে তার খেলার সাথী রেশমার বাবা সাইফুল ইসলাম। ব্লেড দিয়ে শিশুটির প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয় ছোট্ট শরীরে। এদিকে, প্রজনন অঙ্গ কেটে ফেলায় পাঁচ বছর অনিয়ন্ত্রিত মূত্র সমস্যার কারণে সে চলাফেরা করতে পারেনি। পরে রাজধানীর বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, সমাজসেবীর সহায়তায় তার চিকিৎসা হলে বর্তমানে প্রায় আধঘণ্টা মূত্র আটকে রাখতে পারে। ৯ বছর ধরে সে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।  

ওই বছরের ২০ অক্টোবর তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুলের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে সে আপিল করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে উই ক্যান অ্যালায়েন্সের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক সমকালকে বলেন, ‘কোন গ্রাউন্ড দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে এই আসামি জামিন পায়, তা বোধগম্য নয়। মেয়েটার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। আসামিরা এভাবে জামিন পেলে নারী নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে। ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে সমাজের মানুষের আচরণ স্বাভাবিক নয়। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বিভিন্নভাবে এই পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন তো মেয়েটির ঘরের সামনে দিয়েই চলাচল করে আসামি। তাদের ঘরের পাশেই আসামির ঘর। 
শুধু এই শিশুই নয়, ধর্ষণ কিংবা শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার অসংখ্য শিশু ও নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরও জামিন হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীরা আতঙ্কে আছেন। 
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়া প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওয়ালিউর রহমান দোলন বলেন, শুধু ধর্ষণ মামলার আসামিই নয়, এসিড সহিংসতাসহ বিভিন্ন আলোচিত ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বিভিন্ন উপায়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধকে ম্লান করে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোর্টের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। কোর্টের বাদীপক্ষকে এসব মামলার ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানী ও কঠোর মনোভাবাপন্ন হওয়া উচিত। 

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় সাত ভাগেরও কম। সাজা পায় স্বল্পসংখ্যক আসামি। আইনের ত্রুটি, ফরেনসিক পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ, অর্থের দাপট এবং সামাজিক কারণে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও ধর্ষক ভীত হচ্ছে না। 
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান 

(এ্যানী) বলেন, ধর্ষণের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। অনেক ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করতে সাহস পায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থ বা পেশির দাপটে মামলা তুলে নেওয়া হয়। এতে আসামিরা পার পেয়ে যায়। এখনতো ধর্ষণের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও জামিন দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবহার। পুরুষরা যাই করুক না কেন, সবকিছুতেই তারা পার পেয়ে যায়। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা দিতে পারে না। বর্তমানে কন্যাশিশু ও নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনোভাবেই যেন ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিন না পায়। এমনটি ঘটতে থাকলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকবে না।

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিলুপ্তপ্রায় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় সুস্বাদু দেশীয় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল বিজ্ঞানী।

মিঠাপানির জলাশয় বিশেষ করে পাহাড়ী ঝর্ণা ও অগভীর স্বচ্ছ নদী এদের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, আত্রাই ছাড়াও  নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, কংস, সিলেটের পিয়াইন, পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে এক সময় মাছটির প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। এখন মাছটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

মাছটির কৃত্রিম প্রজনন এবং পোনা তৈরির কলাকৌশল উদ্ভাবনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিএফআরআইয়ের পাবলিকেশন অফিসার এসএম শরীফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ২৬১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে গোটালি (বৈজ্ঞানিক নাম Crossochelius latius)  একটি গুরুত্বপূর্ণ সুস্বাদু ছোট মাছ। মাছটি অঞ্চলভেদে কালাবাটা নামেও পরিচিত।”

তিনি আরও বলেন, “জলাশয় দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীতে বান ও কারেন্ট জালের ব্যবহার, খরা মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা, বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়াসহ নানা কারণে অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের ন্যায় এ মাছের প্রাপ্যতাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য মতে, ২০১৫ সালে মাছটি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রজাতিটি বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাছটি সংগ্রহ করেন। এরপর উপকেন্দ্রের গবেষণা পুকুরে অভ্যস্তকরণ ও কৃত্রিম প্রজননের জন্য গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রথমবারের মত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়।

এ গবেষণায় নেতৃত্বে দেন বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী। এছাড়াও গবেষক দলে ছিলেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. সোনিয়া শারমীন, মালিহা হোসেন মৌ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা।

এসএম শরীফুল ইসলাম বলেন, “বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এ মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় মাছটি চাষের আওতায় চলে আসবে। এতে উত্তর জনপদে তথা দেশের মৎস্য খাতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে এবং মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকেও রক্ষা পাবে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিলুপ্তপ্রায় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য