পাবনার সাঁথিয়ায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ যান নছিমন ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে সাঁথিয়া-মাধপুর আঞ্চলিক সড়কের নন্দনপুর ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া মোল্লাপাড়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন সিএনজির আরও চার যাত্রী।

নিহতরা হলেন- পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামের আজিজুল হক (৪০) ও তার ছেলে আবু হুরায়রা (৩)। আহতরা হলেন- নিহত আজিজুল হকের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (২৫), পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের মৃত ছগির উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৮), চকলক্ষীপুর ভাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের হাফসা খাতুন (১৭) ও আতাইকুলা থানার আলম শেখের ছেলে আকাশ (৩০)।

দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান।

নিহতদের পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে সাঁথিয়া থেকে যাত্রী বোঝাই একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা মাধপুরে যাচ্ছিল। এসময় সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি নন্দনপুর ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে মাধপুর থেকে ছেড়ে আসা সাঁথিয়াগামী শ্যালো ইঞ্জিলচালিত নছিমনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ছয় যাত্রী আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আজিজুল হক ও তার ছেলে আবু হুরায়রাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নসিমনটি জব্দ করা হয়েছে, কবে চালক পলাতক। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত সড়ক দ র ঘটন স এনজ

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য ঘটনার ‘কেশারি টু’

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ভারত উপমহাদেশের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হন ১৫-২০ হাজার ভারতীয়। তাদের অধিকাংশই ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের। তারা সেখানে একত্র হয়েছিলেন পাঞ্জাবি নববর্ষ উদযাপন করতে। নবান্ন উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি তাদের উদ্দেশ্য ছিল দমন-নিপীড়নমূলক রাওলাত আইনের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো। এই আইনের ফলে খর্ব হয়েছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। শুরু হয়েছিল বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার এবং অনির্দিষ্ট সাজার অন্যায্য সুযোগ। ফলে সাধারণ মানুষ এক হয়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বৈশাখী উৎসব উদযাপন করতে আসা জনতা তখনও জানে না কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। হঠাৎ সেই বাগানে ঢুকে পড়ে ৫০ জন ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাসদস্য। কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে সাধারণ নাগরিকদের বাগান থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর আদেশে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে সৈনিকেরা। টানা ১০ মিনিটে প্রায় ১৬৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে সৈনিকেরা। কী হচ্ছে তা বুঝে ওঠার আগেই প্রাণ হারায় উপস্থিত জনতার একাংশ। পালানোর পথ না পেয়ে দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে অন্য পাশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। কেউ সফল হয়ে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে যান, কেউ ব্যর্থ হয়ে প্রাণটা হারান। ব্রিটিশদের হিসাবে এ হত্যাকাণ্ডে নিহত হন প্রায় ৪০০ জন। ভারতীয়দের হিসাবে তা ১ হাজারের কাছাকাছি।

১০৬ বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত হয়েছে বলিউডের নতুন সিনেমা। নাম ‘কেশারি চ্যাপ্টার টু: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব জালিয়ানওয়ালাবাগ’। পুষ্পা পালত ও রঘু পালতের লেখা বই ‘দ্য কেস দ্যট শক দ্য এম্পায়ার’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন কারণ সিং ত্যাগী। এই সিনেমায় আইনজীবী চেত্তুর সি শংকরণ নায়ারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার। শংকরণ ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন দেশপ্রেমিক আইনজীবী এবং ব্রিটিশ শাসনের তীব্র সমালোচক। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ রাজত্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন আইনজীবী সি শংকরণ নায়ার। সিনেমাটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত অক্ষয় কুমার। তিনি এখন ব্যস্ত সিনেমার প্রচার ও প্রচারণার কাজে।

সিনেমাটি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অক্ষয় বলেন, ‘আমার দাদু নিজে সেই বিভীষিকা দেখেছিলেন। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা তিনি আমার বাবাকে বলেছিলেন, আর বাবা আমাকে। ছোট থেকেই জানি– এই ইতিহাস কতটা বেদনার, কতটা সত্য। আমি ইতিহাসবিদ নই। আমি একজন অভিনেতা মাত্র। এ সিনেমাটি একটি বই অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। বইটি পড়ে যা বুঝেছি এবং বাবার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি, ‘কেশারি চ্যাপ্টার ২’ এ সব কিছুরই সংমিশ্রণ। আমি চাই সিনেমাটি সব ধরনের দর্শক দেখুক। তাহলে মানুষ অন্তত বুঝতে পারবে আদতে কী ঘটেছিল সেই সময়।’ কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে সিনেমার ট্রেলার। যার ক্যাপশনে লেখা আছে, একজন সাহসী মানুষ তাঁর সাহস দিয়ে পুরো সাম্রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার সময়।’ এই সিনেমায় আর মাধবনও ব্রিটিশদের আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অনন্যা পাণ্ডেকে দেখা যাবে আইনের ছাত্রীর ভূমিকায়। ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে, মাধবন আর অক্ষয়ের আইনি লড়াই। যেখানে অক্ষয় কুমারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, জালিয়ানওয়ালাবাগের সত্য সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন তিনি। ২০১৯ সালে মুক্তি পায় অক্ষয় অভিনীত ‘কেশারি’। এ সিনেমায় অক্ষয় দেখিয়েছিলেন, ১৮৯৭ সালের যুদ্ধে শিখ সৈন্যদের বীরত্বের কথা। এবার তিনি নিয়ে এসেছেন ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের কথা। সিনেমাটি আগামীকাল ভারতজুড়ে মুক্তি পাবে। এখন দেখার বিষয় আগের কেশারি সিনেমার মতো এই সিনেমাটি দর্শকরা কেমন পছন্দ করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ