ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে গত অক্টোবরে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন। ঢাকা ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাৎ তনিম।

সমকাল: আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে চাকরি শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক হয়ে এখন আপনি ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দীর্ঘ এই ব্যাংকিং ক্যারিয়ার নিয়ে জানতে চাই।
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেছি। সাধারণত কমার্স বিভাগ থেকে যারা পড়াশোনা করেন তাদের স্বপ্ন থাকে ব্যাংকে কাজ করার। আমার বড় ভাই আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে কাজ করতেন। মূলত তাঁকে দেখেই ব্যাংকে কাজের আগ্রহটা প্রবলভাবে আসে। ১০ বছর বিদেশি ব্যাংকে কাজ করার পর দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো কীভাবে অপারেট হয় তা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহী হই। ২০০৫ সালের শেষের দিকে আমি ইস্টার্ন ব্যাংকে যোগ দিই। অল্প কিছুদিন কাজ করার পর ২০০৭ সালের দিকে সিটি ব্যাংক থেকে অফার পাই। তবে আমার দীর্ঘ ২৭ বছরের চাকরি জীবনের বেস্ট অর্গানাইজেশন ছিল আমেরিকান এক্সপ্রেস।
সমকাল: দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। এতো ব্যাংকের মধ্যে গ্রাহক আপনাদের আলাদা করবে কীভাবে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংকের নামে কখনও খারাপ সংবাদ পাবেন না। এটিই একটি শক্তশালী দিক এই ব্যাংকের। ঢাকা ব্যাংক হলো ধীরগতির ক্রমবর্ধমান ব্যাংক। আমাদের করপোরেট ব্যাংকিং অনেক শক্তিশালী। ঢাকা ব্যাংক সেকেন্ড জেনারেশনের প্রথম সারির ব্যাংক, যারা গত ৩০ বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে সেবা দিয়ে আসছে। অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল লোন, ডিজিটাল ডিপোজিট স্কিম রয়েছে আমাদের। এছাড়া আমাদের ক্রেডিট কার্ড সেবার মান বাজারের সেরা।
সমকাল: ব্যাংক খাতে এখন তারল্য সংকট চলছে। এর মধ্যেও গত অক্টোবরে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকে তহবিল সহায়তা দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এই শক্তি অর্জন কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমত, গ্রাহকের আস্থা রয়েছে আমাদের ওপর। দ্বিতীয়ত, আমাদের পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট অনেক শক্তিশালী। তারা আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের মতো ইকোনমিতে কোনো ব্যাংক ফেইল করা সামগ্রিক অর্থনীতিতে একবারেই ভালো কিছু না। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করেছি। আমরা চাই আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, গ্রাহকের আস্থা বাড়ুক।
সমকাল: ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশে ডলার সংকট চলছে। আইএমএফের শর্ত মেনে ডলার দর নির্ধারণ পদ্ধতি কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এরপরও কি ডলার সংকট পুরোপুরি সমাধান হয়েছে বলে মনে করেন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ডলারের অবস্থা আগের থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে। এটি সামনে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তবে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অবকাঠামো খাতের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। বিনিয়োগ বাড়লে আমদানি বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদা আবার বাড়বে। 
সমকাল: ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। এ সমস্যার সমাধানে কী করা উচিত?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমে আর্থিক খাতে সুশাসন আনতে হবে। ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপির কারণে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা স্বীকার করতে হবে। এ জাতীয় ঘটনা সামনে যেন আর না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথায় কোন ব্যাংক কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা আনতে হবে। সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।
সমকাল: দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে এই দুর্বল ব্যাংকগুলোর ক্ষতটা কতটুকু গভীর। ক্ষত অনুযায়ী প্রতিকারমূলক পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যেখানে ডিপজিটররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে। মুনাফা দেখে নয়, ব্যাংকের মূল ভিত্তি, ম্যানেজমেন্ট দেখে টাকা রাখা উচিত। সঠিক পরিচালনা, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও সরকারি তারল্যসহায়তার মাধ্যমে সামলানো সম্ভব।
সমকাল: ঢাকা ব্যাংকের আগামী দিনের পরিকল্পনা জানতে চাই
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ খুবই দূরদর্শী। যার ফলে ব্যাংকটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমাদের 
জনবল দক্ষ, অপ্রয়োজনীয় জনবল নেই। এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হলে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন, যা আমরা পেয়েছি। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। দেশের ও গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী করপোরেট ঋণ আগের মতোই 
থাকবে। এর পাশাপাশি খুচরা ঋণ, এসএমই, কৃষিঋণ ও ক্রেডিট কার্ড খাতে আরও মনোযোগ দেওয়া হবে। এসব ঋণের প্রবাহ ও বিতরণ যুগোপযোগী করা হবে। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে চাই, যাতে কম খরচে বেশি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। আমরা শুধু মুনাফার দিকে তাকাচ্ছি না, মূলধন শক্তিশালী করার দিকেও নজর দিচ্ছি। আমরা দক্ষ জনবল নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই, যা বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ খ ম হ ম মদ ম র ফ দ র বল ব য ক জ কর র পর চ ল আম দ র সরক র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিষয়ক দপ্তর তাদের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আকার কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের তৎপরতা চলার মধ্যে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষা দপ্তরের প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্যে পড়তে পারেন। ২১ মার্চ থেকে তাঁদের ছুটিতে পাঠানো হতে পারে।

ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে চাইছেন। এটা রক্ষণশীলদের একাংশের দীর্ঘদিনের চাওয়া। তবে শিক্ষা দপ্তরকে বিলুপ্ত করতে হলে এ বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।

মার্কিন শিক্ষা দপ্তরের বার্ষিক বাজেটের পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেখানকার কর্মীর সংখ্যা চার হাজারের বেশি। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিভাগ সরকারি স্কুলগুলোর তহবিল তত্ত্বাবধান, শিক্ষার্থীদের ঋণ এবং নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা কর্মসূচি পরিচালনা করে।

মার্কিন শিক্ষা দপ্তর নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। তা হলো, এ দপ্তরের আওতায় মার্কিন স্কুলগুলো পরিচালিত হয় এবং এটি পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে। আসলে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ডিস্ট্রিক্ট) এসব কাজ করে থাকে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ তহবিলের তুলনামূলক সামান্য অংশ (প্রায় ১৩ শতাংশ) কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে আসে। আর তহবিলের সিংহভাগ আসে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

মার্কিন নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থী ঋণ দেওয়ার কাজটি পরিচালনা ও তদারকির মধ্য দিয়ে শিক্ষা দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা বিভাগের চূড়ান্ত লক্ষ্যের অংশ হিসেবে প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মী কমাতে আজ (মঙ্গলবার) বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা দপ্তরের সব বিভাগেই এ ছাঁটাইয়ের প্রভাব পড়বে। শিক্ষার্থী, মা-বাবা, শিক্ষক ও করদাতাদের আরও ভালোভাবে সেবা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দপ্তরের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ট্রাম্প যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন সংস্থাটিতে ৪ হাজার ১৩৩ জন কর্মী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের ১৫টি সংস্থার মধ্যে শিক্ষা দপ্তরের কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে কম।

ছাঁটাইয়ের পর শিক্ষা দপ্তরে ২ হাজার ১৮৩ জন কর্মী বহাল থাকবেন। এর মধ্যে এই বছরের শুরুতে অবসরে যাওয়া এবং স্বেচ্ছায় অবসরের প্রস্তাবে সম্মত হওয়া কয়েক শ কর্মীও রয়েছেন।

এক বিবৃতিতে কর্মীদের বলা হয়েছে, ছাঁটাই হওয়া সবাই ৯ জুন পর্যন্ত তাঁদের স্বাভাবিক বেতন ও সুবিধা পাবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা কত দিন ধরে বিভাগে কাজ করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে আর্থিক পাওনাও পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের প্রায় অর্ধেক জনবল ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা
  • প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ