Samakal:
2025-04-14@07:33:36 GMT

যুক্তিতর্কে বিজয়ী যারা

Published: 14th, March 2025 GMT

যুক্তিতর্কে বিজয়ী যারা

যুক্তি-পাল্টা যুক্তি আর বক্তব্য খণ্ডনের মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় শেষ হলো ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিতর্ক উৎসব ২০২৪-২০২৫। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জলঢাকা, নীলফামারী আর রানার্স আপ হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এবং ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি ১০ই মার্চ মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিলো– নারীর ক্ষমতায়নে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চাইতে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিতার্কিকরা নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ, বাস্তব উদাহরণ এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে। এ সময় প্রতিযোগী দুটি দলের মধ্যে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি আর বক্তব্য খণ্ডনের মনোজ্ঞ উপস্থাপনা উপভোগ করেন উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথি, বিচারকমণ্ডলী এবং দর্শকরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট বিতার্কিক ও গণমাধ‍্যম ব্যক্তিত্ব ডা.

আব্দুন নূর তুষার। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সদস্যরা বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ দল এবং শ্রেষ্ঠ বক্তার হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে ১৩টি ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬১৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছিল মেয়ে শিক্ষার্থী। পুরো প্রতিযোগিতাটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক রাউন্ড, এরপর আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, জেলাভিত্তিক সেমিফাইনাল এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ফাইনাল। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর সেরা দুটি দল চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়। n

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই

নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।

গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।

হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।

হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’

‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’

রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।

এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ