চট্টগ্রামের পীতাম্বর শাহর দোকান ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ। অবাক লাগলেও বাস্তব– এই দোকান দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। বন্দরনগরীর খাতুনগঞ্জে অবস্থিত দোকানটি প্রায় ১৮৪ বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। এ দোকান সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে– ‘যাহা নাই এই জগতে, তাহা মিলিবে পীতাম্বর শাহর দোকানে।’
পীতাম্বর শাহর দোকান মূলত ভেষজ ওষুধের জন্য পরিচিত হলেও, এখানে সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে বাঘের দুধ পর্যন্ত সবকিছু পাওয়া যায়। দোকানে পাওয়া যায় অর্জুনের ছাল, অশোক, ত্রিফলা, চিরতা, সুন্দরবনের মধু, যষ্টিমধু, ময়ূরের পালক, হরিণের কস্তুরি, শতমূল, জিনসেং, লতাকস্তুরি, সমুদ্র ফেনা, লোহজারণ, স্বর্ণমাক্ষী, তামাজারণ, মুক্তা, দস্তা, নিমতৈল, পদ্মমধু, বিষমধু, বাঘের তেল, বাঘের চামড়া, বাঘের হাড়, ময়ূরপুচ্ছ, মারজান, হযরত পাথর, তুলসী, বিভিন্ন ধরনের সিন্দুর, চন্দনবীজ, কর্পূর, শালপানি, অশ্বগন্ধ, আমলকী, আফিম, কোয়াসিয়া, কাঞ্চন অয়েল, কুশুম দানা, কায়াবতি তেল, কডলিভার তেল ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিয়ে, পূজা-পার্বণ, ঈদ-কোরবানির সরঞ্জাম।
একসময় পীতাম্বর শাহর দোকানে বাঘের দুধ পাওয়া যেত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে বাস্তবে এটি ছিল বাঘের বাচ্চাদের দুধ পান করার সময় নিচে পড়ে যাওয়া দুধ, যা পাহাড়ি আদিবাসীরা সংগ্রহ করে দোকানে সরবরাহ করতেন। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং সেই আদিবাসীদের অনুপস্থিতির কারণে এই দুধ আর পাওয়া যায় না।
বাংলা নববর্ষে হালখাতা উদযাপন বাঙালি ব্যবসায়ীদের একটি পুরোনো প্রথা, যেখানে পুরোনো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নতুন খাতা খোলা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এ প্রথা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে, তবে পীতাম্বর শাহর দোকানে এখনও হালখাতা উদযাপন করা হয়। তারা এখনও হাতে লেখা খাতায় হিসাব রাখেন এবং নববর্ষে ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন।
বলা হয়, গুরুজির নির্দেশে ১৮৪ বছর আগে পীতাম্বর শাহ ঢাকা থেকে হেঁটে ১৫-২০ দিন পর চট্টগ্রামে পৌঁছেন। চট্টগ্রামে এসে দোকানটি কিনে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। পরে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, ১৮৪ বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তারা একই পদ্ধতিতে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দোকানটি পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তনকারী পীতাম্বর শাহের চতুর্থ প্রজন্ম।
পীতাম্বর শাহর দোকান শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এখানে পাওয়া যায়। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণ, মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ-কোরবানি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এখানে মেলে। এ ছাড়া মাজারের ওরসের জন্য বড় মোমবাতি, প্রতিমার চুল, তালপাতার পাখা, ঢালা, কুলা, ঝুড়ি ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়।
লোকে বলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টেছে, কিন্তু পীতাম্বর শাহর দোকানের কোনো কিছুই পাল্টেনি। গুরু পীতাম্বর শাহ যেভাবে ব্যবসা শিখিয়ে গেছেন, তাদের বংশধররাও এখনও সেভাবেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। দিনবদলের ভিড়ে ব্যতিক্রম নগরীর পীতাম্বর শাহর দোকান। যেখানে এখনও টিকে আছে হালখাতার ঐতিহ্য। নববর্ষে এখনও এ দোকানে পালন করা হয় হালখাতা উৎসব। বলা যায় বাঙালি ঐতিহ্যের বিলুপ্ত প্রায় অনুষঙ্গ এ হালখাতার শেষ আশ্রয় এই পীতাম্বর শাহর দোকান। এ দোকান চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ত ম বর শ হ র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও বিপিএলের পুরো পাওনা পাননি শরিফুল-ইমনরা
বিপিএল শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই—জানুয়ারির শুরুতেই পর্দা নেমেছে আসরের। তবে এখনও চিটাগং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়দের প্রাপ্য পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে মেলেনি। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন, পেসার শরিফুল ইসলাম এবং শামীম হোসেন পাটোয়ারি—এই তিনজনসহ প্রায় সবাই অর্ধেক টাকা এখনও পাননি।
২০২৫ বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি ছিল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক। ফাইনালের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। আজ মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ডিপিএলের অনুশীলনের ফাঁকে ইমন জানান,
‘৫০ শতাংশ পেয়েছি, আর এখনও পাইনি। বলছে… দিবে, দিবে। কিন্তু এখনও দিচ্ছে না। আমি, শরিফুল, শামীম ভাই—সব দেশি খেলোয়াড়ই বিপিএলের পর কোনো টাকা পাইনি। যা পেয়েছি, বিপিএলের সময়ই পেয়েছি।’
পারিশ্রমিক নিয়ে দুশ্চিন্তা পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে বলেও মন্তব্য করেন ইমন। বাঁহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘আমরা সবসময় পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিতে চাই। কিন্তু যখন টাকার চিন্তা মাথায় চলে আসে, তখন মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।’
এর আগে বিপিএল চলাকালে পারিশ্রমিক ইস্যুতে ইমন নাকি দলের ক্যাম্পে না যোগ দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন—এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল। যদিও পরে তা অস্বীকার করে দুই পক্ষই। তবে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরী একবার সরাসরি বলেছিলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট না হলে টাকা কেন পাবে!’
শুধু দেশি ক্রিকেটারই নন, ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত বিদেশি হোস্ট ইয়েশা সাগর এবং শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আসা শহীদ আফ্রিদির পুরো পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।