বর্ষা মৌসুমে পানি খালের মাধ্যমে নদীতে গিয়ে পড়বে। দূর হবে এলাকার জলাবদ্ধতা। শুষ্ক মৌসুমে সেই খালে পানি সংরক্ষণ করা হবে। কৃষকেরা পাবেন সেচ সুবিধা। এত সব উপকারিতার কথা তুলে ধরে খাল খনন করেছিল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তিন বছর না যেতেই সেই খালই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের জন্য। তারা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ভুগছেন ও শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করছেন।
প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচসুবিধা সম্প্রসারণ’। ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার এই প্রকল্পের আওতায় বাঘার মুর্শিদপুর থেকে নওটিকা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার, চারঘাটের মেরামতপুর কাঁকড়ামারী বিল থেকে পিরোজপুর পদ্মা নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার ও চারঘাটের ইউসুফপুর পদ্মা নদী থেকে পবা উপজেলার কাঁটাখালী হয়ে ছত্রগাছি পর্যন্ত ১১ দশমিক ২০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়। ২০১৯ সালে ২৪ মে উদ্বোধন করা খাল খননকাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের শেষের দিকে। 
বিএমডিএ সূত্র জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ২১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল খনন, এক হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার খালপাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, চারটি ফুট ওভারব্রিজ, ২০টি সৌরচালিত পাতকুয়া ও ১০টি সৌর এলএলপি স্থাপন করা হয়। সবই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ির আশপাশে বসানে হয়েছে। অপারেটর হিসেবে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাদের। পাতকুয়া থেকেও সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকেরা। বাস্তবায়ন হয়নি এক হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল চাষাবাদের আওতায় আনার বিষয়টি। খালের পাশে ৮ হাজার ফলদ ও বনজ চারা রোপণের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 
খালপারের কৃষকেরা বলছেন, জরিপ ছাড়াই কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেই খাল ভরাট হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহিত হয় না। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.

নাজিরুল ইসলামের দাবি, জলাবদ্ধতা দূর করা ছিল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এখন এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয় না। তবে কেউ প্রভাব খাটিয়ে খাল ভরাট করলে তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব তাঁর নয়। 
চারঘাটের মেরামতপুর কাঁকড়ামারী বিল-পিরোজপুর পদ্মা নদীসংলগ্ন খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর অংশে সরু খাল খনন করে তার ওপরে পাটাতন দিয়ে পিচঢালা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নালার মতো খালের ভেতরে আবর্জনা ও মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। একবিন্দু পানি চলাচলের উপায় নেই। 
পিরোজপুরের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কালভার্টের মুখে পুকুর খনন করে পুরো কাঁকড়ামারী বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছিল। অথচ তাদেরই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আগে শুধু বিলে জলাবদ্ধতা ছিল, এখন বসতবাড়িতেও জলাবদ্ধতা হয়। উল্টো খাল খননের সময় দেড় কোটি টাকার নতুন সড়ক নষ্ট করা হয়েছে। 
বাঘার মুর্শিদপুর-নওটিকা খালে গিয়ে দেখা যায়, মুর্শিদপুর থেকে চণ্ডীপুর এলাকা পর্যন্ত সরু নালার মতো খনন করা হয়েছে। কোথাও চার ফুট আবার কোথাও মাত্র তিন ফুট প্রস্থ। অপরদিকে চণ্ডীপুর থেকে নওটিকা পর্যন্ত পুকুর সমান খাল খনন করা হয়েছে। তবে কোনো অংশেই পানি নেই। বেশির ভাগ জায়গা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 
বাজু বাঘা ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে খালে বৃষ্টির পানি কিছু অংশে জমে থাকে। বাকি সময় পানিশূন্য। এ অবস্থায় যে যার মতো খাল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। 
একই অবস্থা চারঘাটের ইউসুফপুর-পবার কাঁটাখালী এলাকার খালের। বেশির ভাগ অংশই পৌরসভার বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। যেটুকু টিকে আছে সেখানে বাজারের পানি জমে দুর্গন্ধ ও মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। 
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত কিংবা জনমতের গুরুত্ব না দিয়ে তড়িঘড়ি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালীরা ওপর মহল থেকে অর্থ ছাড় করিয়েছেন। বাস্তবে জনগণ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তা মূল্যায়ন হয়নি। এ প্রকল্পে জড়িত আমলা থেকে রাজনীতিবিদ সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সেবায় ছাত্রদল

শেরপুর জেলা শহরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মাঝে কলম, পেন্সিল, পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করেছে শেরপুর জেলা ছাত্রদল। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে জেলা শহরের জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে ছাত্রদল এ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এ সময় সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা, অভিভাবকদের তীব্র গরম থেকে স্বস্তি দিতে ছায়ায় বসার ব্যবস্থা করে সংগঠনটি। এছাড়াও মোবাইল, ব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র জমা রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়েছে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নিয়ামুল হাসান আনন্দ। এ সময় সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন, থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শারদুল ইসলাম মুরাদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সাবেক নাট্য বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনালসহ জেলা ছাত্রদলের অধীনস্থ শহর, থানা ও কলেজ ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

তিয়ানশির জালে কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা, স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা

কুয়েটের ৫ হলের তালা ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা, ভিসির পদত্যাগের একদফা

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান উজ্জ্বল বলেন, সারা দেশে গরম পড়ছে। এতে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় তাদের কিছুটা হলেও প্রশান্তি দেওয়ার জন্য পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেওয়া অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা, তাদের পানি ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হয়।

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ