‘দলে যারা আছে তারা যোগ্য, মানিয়ে নিতে সময় লাগতে পারে’
Published: 14th, March 2025 GMT
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না, এই বাক্যটি চিরন্তন সত্য। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এতদিন সংশয় রয়ে গিয়েছিল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতেই সব সংশয় দূর হয়ে গেল। দল এখন পুরোপুরি তরুণদের। আর এদের মাঝেই আশা দেখছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিকল্প তৈরি ছিল। এখনো আছে জানিয়ে ফাহিম বলেন, "সময় এলে তো পুরোনোদের যেতেই হবে। কিন্তু গত কিছুদিন আমরা নতুন কিছু খেলোয়াড়দের দেখেছি যারা যথেষ্ট যোগ্যতা রাখে জাতীয় দলে খেলার। আমরা যদি মিডিয়াতেও দেখি, অনেক আলোচনায় ও কেন দলে নেই, সে কেন নেই। এ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্কও দেখি। এর মানে হচ্ছে যারা চলে যাবে, তাদের বিকল্পও আমাদের হাতে আছে।"
সিনিয়ররা চলে যাওয়ায় নতুনরা কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবে, এমন সংশয়ও থাকছে। তবে ফাহিম কোন সমস্যা দেখছেন না। তার মতে, নতুনদের মানিয়ে নিতে সময় লাগলেও প্রতিভা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
এ প্রসঙ্গে ফাহিম বলেন, "আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা কেমন করবে, এটা আগে থেকে বলা মুশকিল। কিন্তু ওদের যতটুকু আমরা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে ওরা হয়তো করতে পারবে। হতে পারে একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় নতুন যে প্রজন্ম উঠে আসছে, সেখানে যথেষ্ট প্রতিভা আছে। যোগ্য হিসেবে তারা দলে সুযোগ পাবে।"
জাতীয় দলে সিনিয়র ক্রিকেটের বলতে এখন শুধু মুশফিকুর রহিম। কেবল সাদা পোশাকে খেলবেন মুশফিক। কয়েকদিন আগেই ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন এই ক্রিকেটার। এরপর অবসর নিয়েছেন রিয়াদ। তাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক সময়েই নিয়েছেন বলে ফাহিমের অভিমত। এতে তরুণরা পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে বলে জানালেন তিনি।
ফাহিম আরো বলেন, "আমার মনে হয় এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমরা সময় মতো পদক্ষেপগুলো নিই এবং নতুনদের সুযোগ দেই। তাদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তারা যোগ্য। আমরা সবাই যদি মনে করি তারা যোগ্য না। যারা চলে যাচ্ছে তাদের চেয়ে খারাপ। তাদের মতো খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমার মনে হয় না নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে। আমাদের ও তাদের বিশ্বাস করতে হবে তারা যোগ্য। আমি বিশ্বাস করি তারা খুব ভালো পারফরম্যান্স করবে।"
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।