তহবিল সংকটের কারণে সৃষ্ট সমস্যাসহ রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

তহবিল সংকোচনের মানবিক মূল্য অত্যন্ত গুরুতর বলে তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “যতদিন না পর্যন্ত শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন আমরা হাল ছাড়ব না।”

শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার: পদপিষ্ট হয়ে নিহত ১

‘আগামী ঈদ যেন নিজ মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারেন সেই চেষ্টা চলছে’ 

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংকটের কথা টেনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই তাদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গুতেরেস বলেন, কারণ এই মানুষগুলো এরই মধ্যে অসীম কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন পার করছে।

তিনি বলেন, “এটি সেই জায়গা যেখানে বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি।” 

পবিত্র রমজান মাসে, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান যে তারা যেন শুধু কথায় নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপ ও কার্যকর সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। ঘোষিত অর্থের সহায়তা হ্রাসের কারণে ২০২৫ সালে মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। এটি সম্পূর্ণ বিপর্যয় হবে।”

তিনি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মানুষ এখানে কষ্ট পাবে, মারা যাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন। এর আগে তারা বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে শরণার্থী শিবিরে পৌঁছালে রোহিঙ্গারা হাত নেড়ে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। উভয় নেতা সাদরে হাত নেড়ে তাদেরও প্রতি শুভেচ্ছা জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত অনেক এনজিও বর্তমানে ব্যাপক তহবিল সংকোচনের মুখোমুখি। এই তহবিল সংকোচনের সরাসরি এবং ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাবে কি না, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা মিলবে কি না, অন্যান্য জরুরি সেবা ও সুরক্ষা বজায় থাকবে কি না, তা নির্ভর করবে এই অর্থায়নের ওপর।

তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এখানে স্পষ্ট, বাজেট কমানো শুধুমাত্র হিসাবের সংখ্যা নয়।”

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই, কারণ মানবিক সহায়তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনছে। 

তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের বিশাল সহায়তার স্বীকৃতি দিতে হবে, যারা তাদের জমি, বন, সীমিত পানি ও স্বল্প সম্পদ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।”

২০১৮ সালে সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করা গুতেরেস বলেন, তারা শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনেক উন্নতি দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন স্তরে এখনও বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই ক্যাম্পগুলো এবং আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রীষ্মকাল অসহনীয়ভাবে গরম, যার ফলে আগুন লাগার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও বিপজ্জনক ভূমিধস বাড়িঘর এবং জীবন ধ্বংস করে।

প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি এখানকার মানুষ শিক্ষার সুযোগ, দক্ষতার উন্নয়ন এবং স্বাধীন জীবিকার জন্যও আকুল।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “সীমিত সুযোগের কারণে সহিংসতা, অপরাধ ও অন্যান্য নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার অনুভব করে যে তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই, ফলে তারা প্রাণঘাতী সমুদ্রযাত্রার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়।”

গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা তাদের বিশেষ দায়িত্ব এবং এটি প্রমাণ করতে হবে যে বিশ্ব এখনও তাদের ভুলে যায়নি।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো সময়েও এই সহায়তা কখনোই পর্যাপ্ত ছিল না। আর এখন আমরা একেবারেই ভালো সময়ে নেই।” 

পবিত্র রমজান মাসে সংহতির বার্তা নিয়ে গুতেরেস কক্সবাজার সফরে এসেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে। 

গুতেরেস বলেন, “আমি এখানে এসেছি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাশাপাশি তাদের সম্ভাবনার ওপরও বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।” 

দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তারা অত্যন্ত সহনশীল। তারা বিশ্ববাসীর সহায়তা চান। তিনি বলেন, কয়েক দশকের বৈষম্য ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার ফলে তাদের বিশাল সংখ্যায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

চার দিনের বাংলাদেশ সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস। শুক্রবার সকালে ঢাকায় একাধিক বৈঠকের পর রওনা দেন কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শনের জন্য। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইফাতরে অংশ নেন তিনি।

ঢাকা/তারেকুর/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ত র স বল ন তহব ল স ক শরণ র থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই ৭ বদভ্যাস ধীরে ধীরে আপনাকে অলস বানাচ্ছে

ইশপের সেই গল্প তো আমাদের প্রায় সবারই জানা। খরগোশ আর কচ্ছপ একদিন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামল। খরগোশ এক নিমেষেই অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল কচ্ছপ অনেক পেছনে। তখন খরগোশ ভাবল, একটু বিশ্রাম নিই। এই বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল খরগোশ। ওদিকে ধীরে ধীরে কচ্ছপ পৌঁছে গেল শেষ দাগে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই খরগোশের মতো আয়েশ করতে গিয়ে অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে পড়ি। অলসতা এক দিনে তৈরি হয় না, বরং দিন দিন কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাসের মাধ্যমে অলসতা আমাদের পেয়ে বসে। একসময় জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। যা আমাদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি মানসিক শক্তিও কমিয়ে দেয়। চলুন দেখে নিই বিষয়গুলো।

ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা

ঘুম থেকে দেরি করে উঠলে অলসতার সঙ্গেই আসলে দিনের শুরুটা হয়। এতে দেহঘড়িরও ছন্দপতন হয়। এ ছাড়া দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে কাজ করার সময় কমে যায়, দিনভর বিষণ্ন লাগে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একবার স্ক্রল করতে শুরু করলে অবচেতনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ