বাংলাদেশের মতো স্বাস্থ্য খাতে এত কম বাজেট বিশ্বে আরও কোথাও নেই, এমনকি স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের মানুষের পকেট ব্যয় আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘মেডিকেল ও স্বাস্থ্যখাতে আফগানিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশের মানুষের পকেট ব্যয়ের অবস্থা বেশি খারাপ। এজন্য বিএনপি যুক্তরাজ্যের এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) মডেলের মতো সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত আমরা পরিপূর্ণভাবে পালন করব। এজন্য ডাক্তারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশের কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত চিকিৎসক সমাবেশ ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), চট্টগ্রাম শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি বড় ধরনের পরিবর্তন সবাই প্রত্যাশা করছে। সে পরিবর্তন ডাক্তারদের কাছ থেকেও আসতে হবে। যারা প্র্যাক্টিস করেন, হাসপাতালে আছেন বা যেখানেই আছেন সবাই সহযোগিতা করেন, এ পরিবর্তন সম্ভব। বাজেটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির এক শতাংশের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এত কম বাজেট বিশ্বের আর কোথাও নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি ১ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করব। কিন্তু আপনাদের ডাক্তার-রাজনীতিবিদদের সংস্কৃতি পরিবর্তন না করলে কোনোকিছু কাজ করবে না। আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারি। আমাদের পেশাজীবী, রাজনীতিবিদদের যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’

প্রসঙ্গক্রমে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের ভূমিকার মাধ্যেমে আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসব। এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহে থাকতে পারেন। বাজেট আসবে, আইনগত পরিবর্তন আসবে। সকলকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ আগস্ট ও শেখ হাসিনার পলায়নের পর মানুষের মনোজগতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সে পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা কিন্তু অনেক বেশি। এজন্য রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, পেশাজীবী সকলের প্রতি এত প্রত্যাশা মানুষের। এটা অনুধাবন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সেসব মানুষের মনোজগতের কথা ধারণ করতে হবে। সেভাবে আমাদের রাজনীতিতে যদি ডাক্তার-পেশাজীবীদের কার্যক্রম গুণগত পরিবর্তন আমরা করতে না পারি, তাহলে আমরাও কিন্তু বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না।’ এ সময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সেখান থেকে যদি ঘুরে দাঁড়াতে হয় তাহলে চিকিৎসকদের সার্বিক সহযোগিতা দরকার বলেও মন্তব্য করেন।

ড্যাব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুর রহমান, জেলা সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ঢালী, নগর সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম লিটনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন, ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হারুন আল রশিদ, মহাসচিব আবদুস সালাম, সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুস সেলিম ও জেলা সভাপতি তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

হামি ইন্ডাস্ট্রিজের চার বছরের আর্থিক হিসাব তদন্তে কমিটি

পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

এই লক্ষ্যে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়
পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে অ্যাকশন প্ল্যান দেওয়ার নির্দেশ

ড. আনিসুজ্জামানের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক বুধবার

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, সহকারী পরিচালক সৌরভ মল্লিক ও মোহাম্মদ রুমন হোসেন।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চার বছরের আর্থিক বিবরণী যাচাই, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চার বছরে হামি ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ, দায়, শেয়ারধারীদের মূলধন (ইকুইটি), মুনাফা ও নগদ প্রবাহের সত্য ও সঠিক চিত্র উপস্থাপন করেছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং আন্তর্জাতিক অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডের (আইএসএ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল কি না, তা যাচাই করবে।

কোম্পানির বিভিন্ন সম্পদ, যেমন- প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি ও ভবন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন ইত্যাদির মালিকানা, প্রকৃত অস্তিত্ব ও ব্যবহারযোগ্যতা পর্যালোচনা করা।

সম্পদগুলো কোনো ঘোষিত বা অঘোষিত ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে কি না তা যাটাই করা।

ব্যালেন্স শিটে দেখানো অগ্রিম, আমানত ও প্রি-পেমেন্ট যাচাই করা।

বিক্রয়, উৎপাদন খরচ, গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ গ্রহণ, হিসাবযোগ্য প্রাপ্য, নগদ ও নগদ সমমানের সম্পদ, মজুত পণ্য, কাঁচামাল ক্রয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সত্যতা যাচাই করা।

চলমান মূলধন প্রকল্প (ক্যাপিটাল ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস) পর্যালোচনা করা।

প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ চলমান কার্যক্রমে হুমকি আছে কি না, তা নিরূপণ করা।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ যাচাই করা।

শেয়ার মূলধন, পুনঃবিনিয়োগ সংরক্ষণ তহবিল, ডেফার্ড ট্যাক্স, পরিশোধযোগ্য কিস্তি, ব্যয়জনিত দায়, প্রদানযোগ্য হিসাব, অগ্রিম ভাড়ার অর্থ, অবিতরণকৃত লভ্যাংশ, করের জন্য সংরক্ষিত অর্থ যাচাই করা।

প্রয়োজনবোধে অন্য যেকোনো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে খতিয়ে দেখা।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৬ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.১৯) টাকা। এদিকে নয় মাসে বা তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) মিলে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.২১ টাকা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৫৬) টাকা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯.১০ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি

হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পূর্ব নাম ছিল ইমাম বাটন লিমিটেড। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ থেকে কোম্পানিটি উভয় পুঁজিবাজারে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নামে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭৭ লাখ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩২.৫২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭.৯৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.১৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৮.৩৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ