মানুষের মতো নদীরও সুস্থ-সুন্দর থাকার অধিকার রয়েছে : মো. হোসাইন
Published: 14th, March 2025 GMT
২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট একটি রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি)’ বলে আদেশ জারি করেন। এর অর্থ মানুষের মতো নদীরও সুস্থ-সুন্দর থাকার অধিকার রয়েছে।
রায়ে রাষ্ট্রকে এই অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নদী দখল, দূষণ ও ভরাটের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।
২০১৯ ও ২০২০ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রায় ৬৬ হাজার নদী দখলদারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেও সেই উচ্ছেদ সফল হয়নি। ফলে জীবন্ত সত্তা নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মো.
নদী বিধৌত এ'দেশে ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে আর শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। এ নদীগুলো সারাদেশে রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বহমান। মেঘনা ব্রহ্মপুত্র শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গা আর বালু নদী পরিবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জ জেলা।
এই নদীগুলো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে নদীর সাথে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠত নদীর পাড়ের মানুষগুলো।
কৃষি, মৎস্য, জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুর একমাত্র উৎস ছিল এই নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস্য এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কিন্তু আমাদের দায়িত্বহীনতায় নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার।
গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছি। এ নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতকে হত্যা করা।
কিন্তু সেই নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত। নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর নানাবিধ কারণের মধ্যে অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে বড় বড় কলকারখানা, শত শত বাঁধ।
দূষণ-দখলের কবল থেকে কিছুতেই বাঁচানো যাচ্ছে না শীতলক্ষ্যা নদীকে। প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ; বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যাও। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখলের উৎসবে মেতেছে। খাল, নদ-নদী, নর্দমা হয়ে অপরিশোধিত অবস্থায় নদীগুলোতে জমা হচ্ছে।
নদীগুলোকে গিলে খাচ্ছে পলিথিনসহ শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, ওয়াসার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও নদীর পাড়ে।
তিনি আরো বলেন, মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। জীব বৈচিত্রও নেই। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীগুলো এখন 'জুরিসটিক পারসন' বা 'লিগ্যাল পারসন'। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
সুতরাং নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা। আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সব নদীই মূল্যবান এবং সংবিধান, বিধিবদ্ধ আইন ও পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদ দ্বারা সংরক্ষিত। বাংলাদেশকে 'নদীমাতৃক' বলা হয়। নদী মায়ের মতো; নদী মা হিসেবে স্বীকৃত। নদী দূষনও মাকে হত্যা করার সামিল।
এই নদী দূষণ ও দখলে জারা জড়িত তাদের সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোর অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ সকল অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেগুলো প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের জন্য উন্নয়ন।
নদী দখল দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ কোটি মানুষের জীবনের হুমকি। তাই উন্নয়নের নামে অসাধু ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। যারা নদী দখল করে নদীর নাব্যতা ভিন্ন করছে তাদের কেউ শাস্তির আওতায় আনার জন্য উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা দাবি জানান।
পরিশেষে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করলে নদীপাড়ের লাখো মানুষের সমন্বয়ে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ নদ গ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ঘোষণাপত্রে যা বলা হলো
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ ঘোষিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৩টার কিছুক্ষণ পরে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
বিকেল ৪টার দিকে ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শেষ হয়। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি—সমবেত হয়েছি। গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চার স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-
আমাদের প্রথম দাবিগুলো- জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। কারণ, তারা সব জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে;
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল। এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
তাই আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি:
১। জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে;
২। যুদ্ধবিরতি নয়—গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে,
৩। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে;
৪। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;
৫। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে;
মাহমুদুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে, গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে।
আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি। আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়; এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্ৰতিচ্ছবি। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র, এবং প্রতিটি নেতৃত্বের উপর অর্পিত সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ;
ইসরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তারা সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা;
আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসি'র মত মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই-
১। ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে।
২। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৩। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
৪। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে।
৫। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে;
আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই-
১। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে।
২। সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।
৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানিনীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে।
৫। জায়নবাদের দোসরদের ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়—বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর।
৬। পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।
কারণ—রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত। আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।
আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা। আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদসকে বল একটি শহর নয়—এটি ঈমানের অংশ।
আমরা জানি, বাইতুল মোকাদ্দাসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয়—আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে। আমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্ম বিস্মৃতির ফল।
আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন; কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে, যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে।
গাজা আমাদের জন্য এক আয়না—যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা।
আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য—একটি অঙ্গীকার করছি।
১। আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো—প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে।
২। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত কররো, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ।
৩। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে।
৪। আমরা বিভাজিত হবো না—কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।
আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।
আমরা শুরু করব, নিজেদের ঘর থেকে, ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ—সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।
আমরা মনে রাখবো- গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দোয় চান না—তারা আমাদের প্রস্তুতি চান।
শেষকথা
শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের ওপর—তাদের ওপর, যারা নজিরবিহীন সবর করেছেন, অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন।
যারা ধ্বংসস্তূপের মাঝে ও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন। বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসি মুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন।
শান্তি বর্ষিত হোক তাদের ওপর, যারা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে। হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহসহ সব শহীদের ওপর, যাদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্র ভূমি আরও পবিত্র হয়েছে, যাদের চোখে ছিল প্রতিরোধে অগ্নিশিখা।
শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মোকাদ্দাসের গর্বিত অধিবাসীদের ওপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!
গাজার জনগণকে অভিনন্দন—
আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন, ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি আমরা, বাংলাদেশের মানুষ—শাহজালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দোয়া।
হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়ানিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ।