২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট একটি রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি)’ বলে আদেশ জারি করেন। এর অর্থ মানুষের মতো নদীরও সুস্থ-সুন্দর থাকার অধিকার রয়েছে।

রায়ে রাষ্ট্রকে এই অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নদী দখল, দূষণ ও ভরাটের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। 

২০১৯ ও ২০২০ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রায় ৬৬ হাজার নদী দখলদারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেও সেই উচ্ছেদ সফল হয়নি। ফলে জীবন্ত সত্তা নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে।

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মো.

হোসাইন বলেন, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকেই কেন্দ্র করে। মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়; তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর দান বলা যায়। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অভিন্ন ৫৭টি নদী।

নদী বিধৌত এ'দেশে ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে আর শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। এ নদীগুলো সারাদেশে রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বহমান। মেঘনা ব্রহ্মপুত্র শীতলক্ষ্যা ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গা আর বালু নদী পরিবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জ জেলা।

এই নদীগুলো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে নদীর সাথে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠত নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

কৃষি, মৎস্য, জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুর একমাত্র উৎস ছিল এই নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস্য এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কিন্তু আমাদের দায়িত্বহীনতায় নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার।

গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছি। এ নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতকে হত্যা করা।

কিন্তু সেই নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত। নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর নানাবিধ কারণের মধ্যে অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে বড় বড় কলকারখানা, শত শত বাঁধ।

দূষণ-দখলের কবল থেকে কিছুতেই বাঁচানো যাচ্ছে না শীতলক্ষ্যা নদীকে। প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ; বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যাও। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখলের উৎসবে মেতেছে। খাল, নদ-নদী, নর্দমা হয়ে অপরিশোধিত অবস্থায় নদীগুলোতে জমা হচ্ছে।

নদীগুলোকে গিলে খাচ্ছে পলিথিনসহ শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, ওয়াসার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য ও নদীর পাড়ে। 

তিনি আরো বলেন, মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। জীব বৈচিত্রও নেই। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীগুলো এখন 'জুরিসটিক পারসন' বা 'লিগ্যাল পারসন'। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।

সুতরাং নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা। আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সব নদীই মূল্যবান এবং সংবিধান, বিধিবদ্ধ আইন ও পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদ দ্বারা সংরক্ষিত। বাংলাদেশকে 'নদীমাতৃক' বলা হয়। নদী মায়ের মতো; নদী মা হিসেবে স্বীকৃত। নদী দূষনও মাকে হত্যা করার সামিল।

এই নদী দূষণ ও দখলে জারা জড়িত তাদের সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোর অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ সকল অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেগুলো প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের জন্য উন্নয়ন।

নদী দখল দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ কোটি মানুষের জীবনের হুমকি। তাই উন্নয়নের নামে অসাধু ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। যারা নদী দখল করে নদীর নাব্যতা ভিন্ন করছে তাদের কেউ শাস্তির আওতায় আনার জন্য উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা দাবি জানান।

পরিশেষে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করলে নদীপাড়ের লাখো মানুষের সমন্বয়ে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ নদ গ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশের ‘বিশ্বকাপের সুপারস্টার’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ানও। প্রথমটি অ‌্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। পরেরটি নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে হ‌্যামিল্টনে। দুটোই ২০১৫ বিশ্বকাপে।

সর্বশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপেও ছিল মাহমুদউল্লাহর আরেকটি সেঞ্চুরি। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে আরেকটি তিন অঙ্কের ম‌্যাজিকাল ফিগার।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি তিন সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন তার দখলে। ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে মাহমুদউল্লাহ অবসরের দিনটিতে আইসিসি মনে করাল, বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারকে। যিনি বিশ্বকাপের মতো আসরেই কেবল তিন সেঞ্চুরি করেছেন। একাধিক বিশ্বকাপে শতরানে রঙে রঙিন করার একমাত্র কীর্তি তারই।

শুধু তা-ই নয়, আইসিসির পঞ্চাশ ওভারের আরেকটি প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও রয়েছে তার সেঞ্চুরি। তবে, বিশ্বকাপই তার অর্জনের ডালা সাজিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপে শুধু তিন সেঞ্চুরি নয়, আরো কিছু রেকর্ড মাহমুদউল্লাহর পক্ষে কথা বলছে।

২০১১, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। সব মিলিয়ে চার বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচে তার রান ৯৪৪। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। মাহমুদউল্লাহর চেয়ে তারা দুজনই একটি বিশ্বকাপ বেশি খেলেছেন, ২০০৭। কিন্তু, তাদের দুজনের চেয়ে গড়ে মাহমুদউল্লাহ অনেক এগিয়ে।

৪১.৬২ গড়ে সাকিবের রান ১৩৩২। ৩৪.৮০ গড়ে মুশফিকের রান ১০৭৯। মাহমুদউল্লাহ ৫২.৪৪ গড়ে করেছেন ৯৪৪ রান। কমপক্ষে পাঁচ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ফিফটি ছোঁয়া গড় একমাত্র তারই। শুধু তা-ই নয়, স্ট্রাইক রেটেও মাহমুদউল্লাহ এগিয়ে। সাকিবের স্ট্রাইক রেট ৮২.২৭। মুশফিকের ৭৯.৩৯। মাহমুদউল্লাহর ৮৪.৮১।

চার আসর মিলিয়ে বিশ্বকাপে ২৫টি ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু, ‌১৫টিও মারতে পারেননি বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান। দুটি ভিন্ন বিশ্বকাপে ৩০০ রানের ঠিকানায় পৌঁছতে পারা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ।

২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ৬০৬ রান করেছিলেন। মুশফিকুর রহিম একই আসরে করেছিলেন ৩৬৭ রান। মাহমুদউল্লাহ ২০১৫ বিশ্বকাপে ৩৬৫ রানের পর গত আসরে ৩২৮ রান করেছিলেন। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটার বিশ্বকাপের দুই আসরে তিনশর বেশি রান করতে পারেননি।

পরিসংখ্যান, রেকর্ড বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর অবদানকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। এর বাইরেও তার নিবেদন, একাগ্রতা, নিষ্ঠা তাকে করে তুলেছে মহামূল্য। তিনি যেন বাংলাদেশের ‘বিশ্বকাপের সুপারস্টার।’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বরেকর্ডের পথে শাকিল
  • দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক অক্ষর
  • দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত সেতুতে মরছে যশোরের নদ-নদী
  • মাইকেল চাকমাকে পাসপোর্ট দিতে রুল হাইকোর্টের
  • ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন উপ-সচিব রেজাউল করিম
  • মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশের ‘বিশ্বকাপের সুপারস্টার’
  • গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. টাঙ্গারা ঢাকায়