পূর্ণসেবা ও নতুন শিষ্যত্ব দিয়ে ভাঙল সাধুর হাট
Published: 14th, March 2025 GMT
সাধুসঙ্গ, রাখালসেবা, অধিবাস, পূর্ণসেবাসহ নানা রীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাঙ্গ হলো ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্যের মাধ্যমে শুরু হয় সাধুসঙ্গ। সর্বশেষ শক্রবার দুপুরে লালন ভক্ত সাধু-গুরুদের পূর্ণসেবার মাধ্যমে উৎসব শেষ হয়েছে। সকালে বাল্যসেবায় পায়েস ও মুড়ি দেওয়া হয় ফকির বাউল ভক্তদের। দুপুরে পূর্ণসেবায় ছিল ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দই। এর পর লালন মতে দীক্ষিতদের খেলাফত (শিষ্যত্ব) প্রদান করেন তাদের নিজ নিজ গুরুরা।
দোল পূর্ণিমা তিথিতে প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় ফকির লালন শাহর স্মরণোৎসব। সাধু-গুরু, লালন ভক্তদের সরব উপস্থিতি, গান ও গ্রামীণ মেলায় জমজমাট হয়ে ওঠে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এ উৎসবের আয়োজন করে। এবার রমজানের কারণে এক দিনই লালন স্মরণোৎসব হয়েছে। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন। ফলে উৎসবে লালন ভক্ত বাদে অন্য লোকজনের উপস্থিতিও ছিল কম।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লালন একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ওই দিন রাত ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে খণ্ড খণ্ড দলে ভাগ হয়ে আসর বসিয়েছেন বাউল সাধুরা। একতারা বাজিয়ে গানে গানে তারা স্মরণ করছেন ফকির লালন শাহকে। এ সময় তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।
উৎসবে আগত ফকির রাজ্জাক শাহ বলেন, ‘সাঁইজি (ফকির লালন) পূর্ণিমা তিথিতে সাধুসঙ্গ করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও এমন আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছি। অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্য, রাখালসেবা, অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার মাধ্যমে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। এবার সাধুসঙ্গে আসল বাউলরা অংশ নেওয়ায় কোনো ভিড় বা ঠেলাঠেলি ছিল না। এতে খুশি আমরা।’
ফকির হৃদয় শাহ বলেন, ‘আমরা চাই পারস্পরিক উৎসবে আসা সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হোক। প্রেমের জায়গা গভীর হোক ও ঘৃণা দূর হোক। দোল পূর্ণিমা তিথিতে লালন শাহ তাই করতেন।’
আখড়াবাড়ির ভারপ্রাপ্ত খাদেম মশিউর রহমান বলেন, দুপুরে পূর্ণসেবার মাধ্যমে শেষ হয়েছে সাধুসঙ্গ। এবারও লালন ভক্ত অনুসারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল আখড়াবাড়ি। আসছে ১ কার্তিক ফকির লালনের তিরোধান দিবসে আবার মিলনমেলায় শরিক হবেন লালন ভক্ত ও প্রেমীরা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব, শিকড়ে ফেরা, রঙে রাঙানো একদিন
চৈত্রের শেষ বিকেল। সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ফিকে হতে শুরু করেছে দিনের আলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের নীলাভ আকাশে তখন শত রঙিন ঘুড়ির মেলা। কোনোটা সাদা, কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি। রঙের বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে ঘুড়ির আকার ও নামেও আছে বৈচিত্র্য। শত শত নারী-পুরুষ, শিশুরা রঙিন ঘুড়ির নেশায় মত্ত।
ঘুড়ি নিয়ে কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা ওড়াতে ব্যস্ত। আবার কারও কারও ঘুড়ি না ওড়ায় হতাশ, তবে আকাশে ওড়াতে চেষ্টার শেষ নেই। অন্যদিকে চলছে মোরগ লড়াই, দড়ি টানাটানি খেলা। মাঠের একপাশে নাগরদোলায় চলছে উল্লাস। ছবি, সেলফি আর আড্ডায় খেলার মাঠটি যেন রঙে রঙিন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবে রোববার বিকেলে এভাবেই মেতে উঠেছিলেন সবাই। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নন, সেই আনন্দে শরিক হয়েছিলেন খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আনন্দ আর প্রাণের এমন উচ্ছ্বাস যেন হারিয়ে যাওয়া এক গ্রামবাংলার চিত্র ফুটে ওঠে মাঠে। ক্লাস আর পরীক্ষার একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা এই দিনটিতে নিজেদের সংস্কৃতি ও শিকড়ের সঙ্গে মিশে যান।
চলছে মোড়ক লড়াই। রোববার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে