লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের দিনভর ব্যাটিং, এবং বিমূঢ় অস্ট্রেলিয়া
Published: 14th, March 2025 GMT
২০০১, ইডেন গার্ডেন, কলকাতা। মুখোমুখি ভারত-অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্পটা লেখা হয়েছিল ওই ম্যাচে। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে পিছিয়ে পড়া ভারত ফলো অন করতে নেমে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছিল ২৩২ রানে। সেই ম্যাচও পরে ভিভিএস লক্ষন ও রাহুল দ্রাবিড়ের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে অকল্পনীয়ভাবে জিতে গিয়েছিল ভারত। ১৪ মার্চ ২০০১ ছিল সেই বিখ্যাত টেস্টের চতুর্থ দিন। লক্ষণ ও দ্রাবিড় সারা দিন ব্যাট করে ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছিলেন এই দিনে। সর্বকালের অন্যতম সেরা সেই টেস্টটা প্রথম আলো থেকে কাভার করেছিলেন উৎপল শুভ্র। ইডেন থেকে লেখা প্রথম আলোয় প্রকাশিত তাঁর সেদিনের প্রতিবেদন পাঠকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে দুই যুগ আগে….
দিনের শুরুটা খুব ভালো হয়নি ভেংকট লক্ষ্মণের। সকালে পত্রিকা হাতে নিয়েই দেখলেন শিরোনাম দখলের লড়াইয়ে পরাজিত তিনি আরেক লক্ষ্মণের কাছে। ভারতের হতাশ করা পারফরম্যান্সের পরও টেস্টের প্রথম তিন দিন স্থানীয় পত্রিকাগুলোর শিরোনাম হয়েছে খেলাই।
আগের দিনের লক্ষ্মণের ওই পারফরম্যান্সের পর গতকালও তা হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। অথচ সকালে পত্রিকা হাতে নিয়ে লক্ষ্মণ দেখলেন, সবগুলো পত্রিকায় আট কলাম ব্যানার হেডলাইন দখল করে নিয়েছেন আরেক লক্ষ্মণ-শুধু যার নামের আগে ভেংকটের পরিবর্তে বঙ্গারু!
ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি বঙ্গারু লক্ষ্মণ প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে টাকা নিয়েছেন। গোপনে ভিডিও করে গত পরশুই তা বাজারে ছেড়েছে ভারতীয় ওয়েব সাইট তেহেলকা ডট কম। নামটি পরিচিত মনে হচ্ছে? মনোজ প্রভাকরের বহুল আলোচিত ভিডিওটিও ছিল তাদেরই করা। সেই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিজেপি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ আর বিজেপি সরকারের টলোমলো অবস্থার খবর পত্রিকার নিচের দিকে ঠেলে দিয়েছিল ভেংকট লক্ষ্মণের ব্যাটিং-বীরত্বকে।
কাল সারা দিন মাঠে যা হলো, সেটি যদি তার সে সময়কার প্রতিজ্ঞার রূপায়ণ হয়, তাহলে তিনি শতকরা দুশো ভাগ সফল! ভারতীয় পত্রিকাগুলো আজ ভেংকট লক্ষ্মণ-বন্দনার জন্য প্রথম পাতার আসল জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য।
গতকাল অর্থাত্ টেস্টের চতুর্থ দিন যা হলো, চাইলে তা এক কথাতেই সেরে ফেলা যায়, আবার তা নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কাব্য রচনাও করা যায়। টেস্ট ক্রিকেটে একদিনে একটি উইকেটও না পড়া একেবারে বিরল কিছু নয়।
কিন্তু প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅন করতে নামা কোনো দলের এই রেকর্ড আছে কি না, ইডেন প্রেসবক্সের সবজান্তা স্কোরার রহমানও তা বলতে পারলেন না। এর সঙ্গে প্রতিপক্ষ দলটির কথা একটু বিবেচনায় নিন।
১৯২১ সালের ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের অস্ট্রেলিয়া, ১৯৪৮ সালের স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া, আশির দশকের ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যারা সর্বকালের সেরার দৌড়ে নামতে বাধ্য করেছে, টানা ১৬টি জয়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়া সেই স্টিভ ওয়াহর দলের বিপক্ষে এই পারফরম্যান্স! ইডেন গার্ডেন সত্যিকার বীরত্ব কাকে বলে, তা দেখল এদিন।
আরও পড়ুনথ্রি ডব্লুস এবং ‘কবিতা’র মতো ফ্র্যাঙ্ক ওরেল১৩ মার্চ ২০২৫দেখালেন ভাঙিপুরাপ্পু ভেংকট সাই লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়। সকালে লড়াই শুরু করেছিলেন তারা, দিন শেষেও সেই লড়াইয়ে অপরাজিত। রেকর্ডের পর রেকর্ড পায়ে লুটিয়ে পড়েছেই, তার চেয়েও বড় কথা অ-নেক অ-নেক দিন ক্রিকেট বিশ্বকে একটি দৃশ্য উপহার দিয়েছে তা। গত বছর দেড়েকের মধ্যে এই প্রথম অস্ট্রেলীয় কোচ বুকানন প্রতিপক্ষকে চালকের আসনে বসে পড়ার স্বীকৃতি দিচ্ছেন। আর ক্যারিয়ারে এই প্রথম অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টেস্ট ক্রিকেটে জয় ছাড়া অন্য অনুভূতির সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা বিমূঢ়। স্টিভ ওয়াহর দল এবার সত্যিকার পরীক্ষার সামনে!
চতুর্থ দিনে শেষে মাঠ ছাড়ছেন দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও বিপিএলের পুরো পাওনা পাননি শরিফুল-ইমনরা
বিপিএল শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই—জানুয়ারির শুরুতেই পর্দা নেমেছে আসরের। তবে এখনও চিটাগং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়দের প্রাপ্য পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে মেলেনি। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন, পেসার শরিফুল ইসলাম এবং শামীম হোসেন পাটোয়ারি—এই তিনজনসহ প্রায় সবাই অর্ধেক টাকা এখনও পাননি।
২০২৫ বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি ছিল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক। ফাইনালের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। আজ মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ডিপিএলের অনুশীলনের ফাঁকে ইমন জানান,
‘৫০ শতাংশ পেয়েছি, আর এখনও পাইনি। বলছে… দিবে, দিবে। কিন্তু এখনও দিচ্ছে না। আমি, শরিফুল, শামীম ভাই—সব দেশি খেলোয়াড়ই বিপিএলের পর কোনো টাকা পাইনি। যা পেয়েছি, বিপিএলের সময়ই পেয়েছি।’
পারিশ্রমিক নিয়ে দুশ্চিন্তা পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে বলেও মন্তব্য করেন ইমন। বাঁহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘আমরা সবসময় পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিতে চাই। কিন্তু যখন টাকার চিন্তা মাথায় চলে আসে, তখন মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।’
এর আগে বিপিএল চলাকালে পারিশ্রমিক ইস্যুতে ইমন নাকি দলের ক্যাম্পে না যোগ দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন—এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল। যদিও পরে তা অস্বীকার করে দুই পক্ষই। তবে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরী একবার সরাসরি বলেছিলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট না হলে টাকা কেন পাবে!’
শুধু দেশি ক্রিকেটারই নন, ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত বিদেশি হোস্ট ইয়েশা সাগর এবং শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আসা শহীদ আফ্রিদির পুরো পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।