‘পাঞ্জাবিদের শাসন করো, সিন্ধিদের ভয় দেখাও, পশতুদের টাকা দিয়ে কিনে নাও, আর বালুচদের সম্মান করো।’
ব্রিটিশরা এই নীতিতেই ভারতবর্ষ শাসন করত। তারা জানত, সব জাতিগোষ্ঠীকে একই নিয়মে বশে আনা যায় না। বিশেষ করে দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে তাদের মাথাব্যথা ছিল সবচেয়ে বেশি—পশতু আর বালুচ। তাদের দমানো সহজ নয়। তারা জন্মগতভাবেই বিদ্রোহী। কারও শাসন মানতে চায় না।
ব্রিটিশরা প্রথমে চেষ্টা করেছিল শক্তি দিয়ে দখল নিতে। কিন্তু ১৮৪২ সালে কাবুল থেকে তাদের সৈন্যরা লজ্জাজনকভাবে পিছু হটে।
আফগান যুদ্ধের সেই হার তাদের চোখ খুলে দিল। বুঝল, শুধু লাঠির জোরে পশতু ও বালুচদের দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই তারা কৌশল বদলাল। যুদ্ধের বদলে চুক্তি করল, মোটা অঙ্কের ভাতা দিল। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে নিরুৎসাহিত করল, বাধা দিল।
এক গোত্রকে আরেক গোত্রের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিল। সেই ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি—ভাগ করে শাসন করো। সবকিছু মিলিয়ে এমন এক চাল চালল, যাতে গোষ্ঠীগুলো নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে লড়তে থাকে, ব্রিটিশদের দিকে নজর না দেয়।
তবে ব্রিটিশরা কিন্তু এই গোষ্ঠীগুলো যে শক্তিধর, তাদের মানসিকতা যে অন্যান্য গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা, সেটা পুরোপুরি অস্বীকার করেনি। বরং তারা বলল, ‘এই জাতগুলো যুদ্ধ করতে ভালোবাসে, লড়াই এদের রক্তে মিশে আছে। তাহলে আমরা এদের আমাদের জন্যই লড়াইয়ে নামাই!’
এভাবেই তৈরি হলো পশতুদের নিয়ে ‘পাঠান রেজিমেন্ট’ আর বালুচদের নিয়ে ‘বালুচ রেজিমেন্ট’। পরে পাঠান রেজিমেন্টকে একীভূত করা হয় ‘ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট’-এর সঙ্গে।
পশতু আর বালুচ—এই দুই জাতের মানুষই কঠোর নিয়মকানুন মানে। তবে পার্থক্যও আছে। সেটা কোথায়? পশতুদের কাছে ধর্ম ছিল সবচেয়ে বড়। ধর্মের জন্য তারা জীবন দিতেও রাজি। আর বালুচদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজের ভূমি, নিজের গোত্র আর নিজের সরদার। তাদের কাছে এই তিনটিই ছিল আসল সত্য।
এদের মধ্যে বালুচদের সামলানো পশতুদের তুলনায় কিছুটা সহজ ছিল। ব্রিটিশরা বুঝতে পারল, গোত্রপ্রধানদের খুশি করতে পারলে গোটা গোত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাই তারা কিছু প্রভাবশালী বালুচ সরদারকে সম্মান দিল। যেমন কালাতের খান। তাঁর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হলো, যাতে তিনি অন্য বালুচ সরদারদের বশে রাখতে পারেন।
এ ছাড়া একটা সুবিধা ছিল। আর তা হলো বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান। অঞ্চলটা বিশাল। মরুভূমি আর পাহাড়ে ঘেরা। কোথাও কোথাও যেতে কয়েক দিন লাগত। ফলে এই বিচ্ছিন্ন এলাকায় কেউ কী করছে, ব্রিটিশদের সেদিকে তেমন নজর দিতে হয়নি। বরং তারা একটা সহজ কৌশল নিল—‘তোমরা নিজেরা নিজেরা থাকো, কিন্তু আমাদের বিরোধিতা কোরো না!’
এই নীতির জন্য তারা বালুচদের অনেক ছাড় দিল। যেমন তাদের অনেক এলাকা প্রশাসনের বাইরে রাখা হলো, মোটা অঙ্কের অনুদান দেওয়া হলো, এমনকি প্রয়োজনে অস্ত্রও দেওয়া হলো! কিন্তু এসবের মধ্যেও কিছু সরদার ছিলেন, যাঁরা ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন। বিশেষ করে মাররি, বুগতি গোত্রের সরদাররা কখনোই পুরোপুরি ব্রিটিশদের বশে আসেননি। তাঁরা ছিলেন চিরকাল স্বাধীনচেতা, লড়াকু।
কিন্তু এটাও নতুন কিছু নয়। এ অঞ্চলে শত শত বছর ধরেই বিদ্রোহ চলে আসছে, লড়াই চলছে। ব্রিটিশরা শুধু সেই পুরোনো যুদ্ধটাকে নিজেদের স্বার্থে নতুন মোড় দিল।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা ব্রিটিশদের পুরোনো শাসনকৌশল এক ধাক্কায় উলটে দিল। নতুন দেশ, নতুন শাসনব্যবস্থা, নতুন নিয়মকানুন। সবকিছুই বদলে গেল। পাকিস্তানে গণতন্ত্রের একটা পরীক্ষা শুরু হলো। আর তার সঙ্গেই বদলে গেল ক্ষমতার ভারসাম্য, নীতি আর সম্পর্কের ধরন।
স্বাধীনতাকামী বালুচদের সমাবেশ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই ৭ বদভ্যাস ধীরে ধীরে আপনাকে অলস বানাচ্ছে
ইশপের সেই গল্প তো আমাদের প্রায় সবারই জানা। খরগোশ আর কচ্ছপ একদিন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামল। খরগোশ এক নিমেষেই অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল কচ্ছপ অনেক পেছনে। তখন খরগোশ ভাবল, একটু বিশ্রাম নিই। এই বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল খরগোশ। ওদিকে ধীরে ধীরে কচ্ছপ পৌঁছে গেল শেষ দাগে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই খরগোশের মতো আয়েশ করতে গিয়ে অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে পড়ি। অলসতা এক দিনে তৈরি হয় না, বরং দিন দিন কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাসের মাধ্যমে অলসতা আমাদের পেয়ে বসে। একসময় জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। যা আমাদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি মানসিক শক্তিও কমিয়ে দেয়। চলুন দেখে নিই বিষয়গুলো।
ঘুম থেকে দেরিতে ওঠাঘুম থেকে দেরি করে উঠলে অলসতার সঙ্গেই আসলে দিনের শুরুটা হয়। এতে দেহঘড়িরও ছন্দপতন হয়। এ ছাড়া দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে কাজ করার সময় কমে যায়, দিনভর বিষণ্ন লাগে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একবার স্ক্রল করতে শুরু করলে অবচেতনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়