২০ রোজার মধ্যে ঈদ বোনাস ও সব বকেয়া পরিশোধের দাবি
Published: 14th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে ২০ রোজার মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের এক মাসের বেতনের সমান ঈদ বোনাস ও সব বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধের দাবিতে সমাবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। একই সঙ্গে ঈদের আগেই তাঁরা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আয়োজক সংগঠনের জেলা সভাপতি এম এ শাহীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, সহসভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের জেলার সভাপতি গাজী নূরে আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে নেতারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত ঈদ বোনাস ও সব বকেয়া পাওনা ২০ রোজার মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কারণ, বর্তমান বাজারে শ্রমিকেরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে তাঁদের পরিবারের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। এরপরও ১২ মাস টানাটানির মধ্যে ধারদেনা করে চলে। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সামর্থ্য ও সময়–সুযোগ কোনোটাই থাকে না। ঈদ এলেই কেবল শ্রমিকেরা একটু ভালো খাবার ও নতুন জামাকাপড় কেনার কথা ভাবেন। শ্রমিকদের এই আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন কোনোভাবেই নস্যাৎ করা যাবে না।
বক্তারা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, অনেক কারখানার মালিক বেতন–বোনাস নিয়ে কারখানায় সংকট তৈরি করেছেন। কোনো কোনো কারখানার মালিক নামমাত্র বোনাস ৫০০ বা এক হাজার টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় করেছেন। আবার কোনো মালিক সেটিও দেননি। এবার সরকারি নিয়মে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের এক মাসের (বেসিক) বেতনের সমান ঈদ বোনাস দিতে হবে। ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি পাঁচ দিন ভোগ করতে দিতে হবে। কোনো ধরনের বৈষম্য করা চলবে না। পাশাপাশি ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন দিতে হবে। এ ব্যাপারে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ ও সরকারের পক্ষ থেকে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লবণের লাভ যেভাবে সিন্ডিকেটের পকেটে
কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়নের হাজারীপাড়া ও নুইন্যাছড়ি গ্রামের মাঠজুড়ে এখন শত শত মণ লবণের স্তূপ। প্রতিটি স্তূপে আছে ২০ থেকে ৫০ মণ লবণ। কিন্তু বিক্রি তেমন হচ্ছে না। কারণ, লোকসান। এক মণ লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের খরচ ৩৫০ টাকা। অথচ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতি মণে লোকসান দাঁড়াচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। কিন্তু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বাজারে এ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। প্রতি মৌসুমে চাষিদের জিম্মি করে শুধু কুতুবদিয়াতেই দুই হাজার কোটি টাকা দালাল-সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিলেও দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠে উৎপাদিত লবণ কত টাকায় বিক্রি হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেয় সিন্ডিকেট। কুতুবদিয়ায় উৎপাদিত লবণ সাগরপথে চট্টগ্রাম-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় পৌঁছাতে হয় কার্গো বোট দিয়ে। এ কারণে সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কিছুই করতে পারেন না চাষিরা। কার্গো বোটগুলোও থাকে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। চার হাজারের বেশি প্রান্তিক চাষিসহ উপজেলায় লবণ উৎপাদন ও পরিবহনে জড়িত অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, গত মৌসুমে কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ হাজার ৮৪২ একর মাঠে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। চাষির সংখ্যা ৪ হাজার ৬১ জন। লবণশ্রমিক আছেন ১২ হাজার। চাষিরা জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদন হবে।
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
কুতুবদিয়ায় চাষিদের কাছ থেকে দুবার হাত বদল হয়ে লবণ পৌঁছায় ঢাকা–নারায়ণগঞ্জের মিলে। আর হাত বদলের সময় প্রতিবারই মুনাফা করেন ব্যবসায়ীরা। অথচ লোকসান গুনতে হয় লবণচাষিদের।
লেমশীখালীর হাজারীপাড়ার চাষি নুর মোহাম্মদ এবার সাত কানি (কানিতে ৪০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করছেন। গত আড়াই মাসে মাঠে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার মণ। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পাঁচ দফায় ১২ হাজার মণ লবণ বিক্রি করেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। অবশিষ্ট লবণ দুটি গর্তে মজুত রেখেছেন। কারণ জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ (৫৬) প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি মণ লবণ বিক্রি করে ১৭০ টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। দাম বাড়লে বিক্রির জন্য ১০ হাজার মণ লবণ গর্তে মজুত করেছি।’
কুতুবদিয়ায় লবণ পরিবহনের কার্গো বোট আছে ৩০টির বেশি। ব্যবসায়ী আছেন দুই হাজারের বেশি। ব্যবসায়ী, কার্গো বোটের মালিক ও জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে লবণশ্রমিকদের বঞ্চনার চিত্র উঠে এসেছে। লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ চাষিই ভূমিহীন। এ কারণে তাঁরা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। ধানের জমি বর্গা নিতে যেখানে চাষিদের খরচ হয় সাত হাজার টাকার মতো, সেখানে লবণের জমি বর্গা নিতে খরচ হয় ৮০ হাজার টাকার মতো। আর বর্গার টাকাও শোধ করতে হয় লবণ বিক্রির টাকা দিয়ে। সেই লবণের দামই পান না চাষিরা।
চাষিদের কাছ থেকে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়