Risingbd:
2025-04-13@06:19:42 GMT

রমজানে মুমিন নারীর করণীয় 

Published: 14th, March 2025 GMT

রমজানে মুমিন নারীর করণীয় 

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দশক গত হয়েছে। সৌভাগ্যবান তারাই যারা সময়টুকু আল্লাহর ইবাদত, স্মরণ ও তিলাওয়াতের মাধ্যমে মূল্যবান করে তুলতে পেরেছেন। আফসোস তাদের জন্য যারা উদাসীনতায় সময়টুকু কাটিয়েছেন। কেননা রমজান মুমিনের জীবনে শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসকে আল্লাহ বহু পুরস্কার ও দানে ভরপুর করেছেন। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক কাজে অতিবাহিত করা।

ইবাদত, নৈকট্য, পুরস্কার ও প্রতিদানে আল্লাহ নারী ও পুরুষের ভেতর তারতম্য করেননি। এক পুরুষ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে যতটা পুরস্কার ও প্রতিদান লাভ করতে পারেন, একজন নারীও ঠিক ততটুকুই পুরস্কার ও প্রতিদান লাভ করতে পারেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি নেককাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশের নারীরা রমজানে ঘরের কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের অনেকেই ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন না। পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় তাদের ফরজ নামাজ পর্যন্ত ছুটে যাওয়ার উপক্রম হয়। কোনো সন্দেহ নেই, পরিবারের জন্য নারীর শ্রম ও আত্মত্যাগের পুরস্কার আছে, তবে তা কখনোই মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির সমতুল্য নয়। পরকালে প্রত্যেকেই তার নিজ আমলনামা হাতে নিয়ে উঠবে, সেখানে পরিবার-পরিজন কোনো উপকারে আসবে না, বরং কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতায় মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় সম্পর্ক ভুলে যাবে। তাই পরকালীন মুক্তি অর্জনে নারী-পুরুষ সবাইকে আত্মমুখী হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহ বলেন, যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে, তার মা, তার বাবা, তার স্ত্রী ও তার সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৩-৩৭)

আরো পড়ুন:

দশ শ্রেণীর রোজাদার ও তাদের বিধান

রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব ও যারা অগ্রাধিকার পাবে 

সেই ভয়াবহ দিনে মানুষ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যাবে : এক যারা নেক আমলের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে। তারা থাকবে হাস্যোজ্জ্বল, দুই যাদের নিজস্ব ভাণ্ডার হবে শূন্য এবং পৃথিবীতে যাদের আপনজন ভাবত তারাও তাকে ছেড়ে যাবে। তাদের চেহারা হবে মলিন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল। আর অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে ধূলিধূসর, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৮-৪০)

রমজানে নারীর করণীয়

স্নেহশীল ও মমতাময়ী নারীদের প্রতি অনুরোধ পরিবারের সেবা-যত্নের পাশাপাশি আপনারা নিজেদের ইবাদত ও জিকিরের প্রতি কিছুটা মনোযোগী হোন। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, আপনার জন্যও উপার্জনের। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি করণীয় হলো :
কাজের রুটিন করা : রুটিন মাফিক কাজ করলে সময়ের বরকত পাওয়া যায়। রমজানে প্রতিদিনের কাজের একটি রুটিন করুন। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করুন যাতে ঘরোয়া কাজের পাশাপাশি ইবাদতেরও অবকাশ মেলে। রুটিন অনুসারে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। ইবাদত ও ঘরোয়া কাজের ভেতর ভারসাম্য আনুন এবং পরকালকে ইহকালের ওপর প্রাধান্য দিন। মহান আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো, ‘যে অবাধ্য হয়েছে এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে তার আশ্রয় জাহান্নাম। আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাত হবে তার আবাস।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৩৭-৪১) 

বাহারি আয়োজন পরিহার করুন : রমজান সংযম ও সাধনার মাস। রমজানে বাহারি খাবারের আয়োজন পরিহার করাই উত্তম। রমজানে পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোযোগী হলে নারীদের কাজের চাপ কমে যাবে। এতে যেমন আপনার ইবাদতের সুযোগ বাড়বে, তেমনি পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও হবে।

ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করুন : পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করা আবশ্যক। যেন পুরো পরিবারে ইবাদতের একটি পরিবেশ তৈরি হয়। তাহলে নেক আমলে সবাই পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচলিত থাকো। আমি তোমার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১৩২)

কাজের সময় জিকির করুন : ঘরের কাজ উপেক্ষা করা নারীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই ঘরের কাজ করার সময়কেও মূল্যবান করে তুলতে পারেন জিকিরের মাধ্যমে। বেশির ভাগ ঘরোয়া কাজের সময় মুখে জিকির অব্যাহত রাখা সম্ভব। সর্বোত্তম জিকির কোরআন তিলাওয়াত। কাজ করার সময় কোরআনের যতটুকু মুখস্থ আছে তা তিলাওয়াত করুন। অথবা হাদিসে বর্ণিত তাসবিহগুলো পাঠ করুন। যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার ইত্যাদি।

সাওয়াবের নিয়ত করুন : রোজাদারের সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। আপনি পরিবারের খাবার প্রস্তুত করার সময় সাওয়াবের নিয়ত করতে পারেন। এতে আপনার নেকির পাল্লা ভারি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। আর রোজাদারের সাওয়াবও কমানো হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব কাজের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)

সাওয়াব যেন নষ্ট না হয় : পরচর্চা, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, গালমন্দ ইত্যাদি কাজ রোজার মাহাত্ম্য নষ্ট করে। নারী-পুরুষ সবার উচিত এমন কাজ পরিহার করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায় কথাবার্তা ও কাজ ছেড়ে দেয় না, তার পানাহার ত্যাগ আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭০৭)

পুরুষের দায়িত্ব

নেক কাজে নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহযোগী। তাই পুরুষের দায়িত্ব হলো নারীকে নেক কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। পুরুষ নারীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করে ইবাদতের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে এবং তাকে নেককাজের প্রতি উৎসাহিতও করতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)। অন্য হাদিসে এসেছে,  ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

আসুন! নেককাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করে একটি সুন্দর পারিবারিক জীবন গঠন করি। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন পর ব র র ঘর র ক জ র জন য ক জ কর র সময় সহয গ আপন র ন করব রমজ ন ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

পয়লা বৈশাখে থাকছে র‌্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা 

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব। এমনকি নববর্ষ উপলক্ষে কেউ যেন অপপ্রচার চালাতে না পারে সেজন্য সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে রমনা বটমূলে নববর্ষের নিরাপত্তা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সারা দেশে ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ সর্বমোট ২ হাজার ৪৪৯ জন র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে বলেও তিনি জানান।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, “বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কুচক্রী মহল যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ”

“বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, শিশু একাডেমি এবং রমনা বটমূলসহ ঢাকার যেসকল স্থানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সে সকল স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেকপোস্ট, টহল ও অবজারভেশন পোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।”  

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। দেশব্যাপী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য থাকবে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, চেকপোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিং। এছাড়া, যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ থাকবে।”

গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে নাশকতাকারীদের যেকোন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে র‌্যাব প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র‌্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে।”

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে আগত নারীদের উত্যক্ত, ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি রোধকল্পে মোবাইলকোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি ‍উল্লেখ করেন।  

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, “কেউ কোনো ধরনের হেনস্থার স্বীকার হলে অবশ্যই কর্তব্যরত র‌্যাব সদস্যদেরকে জানাবেন। আমরা কঠোর হস্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

ঢাকা/এমআর/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ