চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে সকাল ১১টার দিকে গ্রিন রোডের তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ জুমা ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে ঈদগাহ মাঠে ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।    

এর আগে গতকাল রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। 

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ছোট ভাই সাইফুল্লাহ সিদ্দিক তুহিন গতকাল বলেন, মস্তিষ্কে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

তিনি জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্তমতে, আজিমপুরে বাবা-মায়ের কবরের পাশে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে দাফন করা হবে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিউরোসার্জন অধ্যাপক নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ পড়ে যান। পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। এরপর তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন আরেফিন সিদ্দিক।

২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে পুনরায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই তাকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি পদাধিকারবলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ ও ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া স্পেনের রাজার পক্ষ থেকে ২০১১ থেকে ২০১২ সালে নারী উন্নয়ন, নারী শিক্ষা ও সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এই শিক্ষাবিদ ‘অর্ডার অব সিভিল মেরিট’-এ ভূষিত হন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর

চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হয় যশোর সদরের ১১টি সড়কে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলোর কয়েকটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচ বছর আগেই। তবে এত বছরেও মাত্র ৫০-৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদাররা। ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রোলার ব্যবহার করলেও বছরের পর বছর কার্পেটিং (পিচের প্রলেপ) না করায় সড়কগুলোর অনেক স্থানেই আবার খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ইটের গুঁড়া ও বালুতে পথচারী ও সড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। আর বৃষ্টি হলে কাদায় চলা দায় হয়ে পড়ছে। 
এলজিইডি অফিস থেকে জানা গেছে, যশোর উপশহরের তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। একই বছরের ৬ আগস্ট সংস্কার শেষ হওয়ার কথা ছিল দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে। তবে এই কাজও হয়েছে ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলারই হুদার মোড় থেকে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফ ট্রেডিং অ্যান্ড স্টিল হাউস। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই কাজ শেষের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। 

এ ছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কের ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল, কিসমত-হৈবতপুরে শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২০ আগস্ট, কিসমত হৈবতপুরে ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালের মে মাসে, বলাডাঙ্গা-মথুরাপুর সড়কের ২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং মালঞ্চী কোল্ডস্টোর থেকে আরবপুর ইউপি সড়ক ২০২১ সালের জুলাইয়ে, শর্শনাদাহ-ভবানীপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক ২০২৪ সালের জুনে, একই বছরের সেপ্টেম্বরে মনোহরপুর যোগীপাড়া থেকে ওসমানপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ডিসেম্বরে চুড়ামনকাটি সড়ক সংস্কারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।  
দীর্ঘদিনেও সড়কগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আরবপুরের ইজিবাইক চালক মহসিন আলী বলেন, রাস্তায় ইট দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ফেলে রাখছে। যেমন ধুলাবালি ওড়ে, আবার গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো চলার কোনো উপায়ই থাকে না।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। ইটের খোয়া বিছানোর পর চার থেকে পাঁচ বছর ফেলে রাখায় খানাখন্দের পাশাপাশি অনেক স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এর পর খোয়া দেয়। কিন্তু কার্পেটিং করার সময় খোঁজ পাওয়া যায় না। 
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের সড়ক দিয়ে কৃষক সবজি-ধান আনা-নেওয়া করে। কয়েক বছর ধরে এই রাস্তা সংস্কারের নামে ফেলে রাখায় কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার দাবি করেন, নানা সংকটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফের দাবি, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। এ জন্য কাজে দেরি হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করবেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেক সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো কাজগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা দ্রুত কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর
  • শূকরের খোঁয়াড়ের মতো নোংরা এক বাসায় কেটেছে ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলো
  • শেষ সিনেমার জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন সালমান শাহ?
  • কেনাকাটা সহজ করেছে ক্রেডিট কার্ড
  • কুবির শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্তরসহ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ, পরীক্ষা স্থগ