বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একইসঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চার দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব। এরপর, তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তিনি ঢাকার সংস্কার অ্যাজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বিশ্বে ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর’ মধ্যে অন্যতম রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি আমি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই। আমরা এখানে আপনার সংস্কারকে সমর্থন করতে এসেছি। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করি। আমরা যা করতে পারি, আমাদের জানান।

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস আশা প্রকাশ করেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের ‘প্রকৃত পরিবর্তন’ আনতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, আমি জানি, সংস্কার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে।

আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে তিনি মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি এমন জনগোষ্ঠী আগে কখনো দেখিনি, যারা এত বেশি বৈষম্যের শিকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সহায়তা কমানো এক ধরনের অপরাধ।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অপরিসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে। রোহিঙ্গারা আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনার আসার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারত না। আপনার এই সফর শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী।

রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এবং তাদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তা চান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছি। বিশ্বকে জানতে হবে তারা কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে। হতাশার একটি অনুভূতি কাজ করছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আশ্বাস দেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহে অগ্রাধিকার দেবেন।

গুতেরেস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কার্যক্রম অসাধারণ। বাংলাদেশ একটি ন্যায়সংগত বিশ্বের জন্য সামনের সারিতে কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টাও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এসব মিশনে অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করছে। এই মোতায়েন আমাদের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে।

বৈঠকে ভূরাজনীতি, সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতকে নিয়ে একটি দক্ষিণ এশীয় বিদ্যুৎ গ্রিড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যা হিমালয় অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, যা দেশকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলবে এবং নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাপান, তাদের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে।

অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর সরকার একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত, কমে যাওয়া রিজার্ভ ও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে। রপ্তানি মাসের পর মাস বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আগের চেয়ে ভালো।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এতটাই হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এই সংস্করণে, মূল তথ্যের কোনো পরিবর্তন না করে, বাক্যগুলো আরও সহজ এবং স্পষ্ট করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় জটিলতা পরিহার করে, তথ্যগুলো সরাসরি উপস্থাপন করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স দ র জন য আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাটারি কারখানায় ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে শ্রমিকদের জিম্মি করে লুট

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একটি ব্যাটারি কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২০-২২ দুর্বৃত্ত আগ্নেয় ও দেশীয় অস্ত্রের মুখে ১৮ শ্রমিককে মারধর পরে জিম্মি করে ব্যাটারি তৈরির সিসা, প্লেট, কানেক্টরসহ অন্তত ৫৫ লাখ টাকার সামগ্রী লুট করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসব সামগ্রী ট্রাকে করে নিয়ে গেছে তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তাড়াশ-বারুহাঁস সড়কের পশ্চিম দিকে হেদার খালে ভাই ভাই ব্যাটারি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের মারধরে কারখানার শ্রমিক আব্দুল হান্নান, মোস্তাক হোসেন, শামীম হোসেনসহ অনন্ত আটজন আহত হয়েছেন। তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাজমুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কারখানার মালিক মো. শয়নুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শয়নুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি বড় ট্রাকে ২০ থেকে ২২ জন কারখানায় আসে। তারা টিনের বেড়া ভেঙে কারখানায় ঢুকে আগ্নেয় ও দেশীয় অস্ত্রের মুখে শ্রমিক আব্দুল হান্নান, মোস্তাক, শামীমসহ ছয়জনকে জিম্মি করে। তারা বাধা দিলে মারধর করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। বিশ্রামাগারে ঘুমিয়ে থাকা আরও ১০-১২ শ্রমিককে জিম্মি করে লুটপাট শুরু করে।

প্রায় চার ঘণ্টায় তারা কারখানা থেকে তিন টন ব্যাটারি তৈরির সিসা, ৩৪০ টাকা কেজি মূল্যের ১ হাজার ২০০ কেজি কানেক্টর, ২৫০ টাকা কেজির ১৬ টন প্লেট, ৬৩ হাজার টাকার ৯টি পুরোনো ব্যাটারিসহ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের মালপত্র লুট করে ট্রাকে করে চলে যায়। তারা চলে গেলে শ্রমিকরা একে অপরের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে পুলিশে খবর দেন।

তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাজমুল কাদের বলেন, খবর পেয়ে দুই দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাই ভাই ব্যাটারি কারখানায় ডাকাতির সত্যতা পাওয়া গেছে। ডাকাতি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ