জরিপ বলছে, ভারতের ঘরে ঘরে আছে ‘মিসেস’ সিনেমার রিচা
Published: 14th, March 2025 GMT
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউডের সিনেমা ‘মিসেস’ এর রিচাকে ভারতে ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি দেশটিতে সরকারি এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, ভারতীয় নারীরা গড়ে দিনে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ঘরের কাজ এবং পরিবারের সদস্যদের সেবাযত্নে ব্যয় করেন। এ জন্য তাঁদের কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। গৃহস্থালি কাজে একজন নারীর তুলনায় একজন পুরুষের অবদান অর্ধেকেরও কম।
মিসেস সিনেমার রিচার ঘরের কাজ করতে করতে নাজেহাল অবস্থা হয়। ব্লেন্ডারে চাটনি করলে হবে না, শিলপাটাতে বেটেই করতে হবে। রুটি আগে ভেজে রাখলে হবে না, চাই চুলা থেকে গরম-গরম নামানো ফুলকো রুটি। আজ রান্নার এই ভুল, কাল কাজের ওই ভুল। আর এসব করতে করতে নাচকে ঘিরে রিচার স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয় না।
ওই জরিপে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, একজন নারী দৈনিক গড়ে ২৮৯ মিনিট বিনা পারিশ্রমিকে ঘরের কাজে ব্যয় করেন এবং ১৩৭ মিনিট বিনা পারিশ্রমিকে পরিবারের সদস্যদের সেবাদান কাজে ব্যয় করেন। সেখানে পুরুষ ৮৮ মিনিট ঘরের কাজে আর ৭৫ মিনিট সেবা দানে ব্যয় করেন।
ছয় বছর আগে ভারতে এ ধরনের একটি জরিপ হয়েছিল এবং সেখানেও একই ধরনের ফলাফল দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। অথচ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ভারত সরকার থেকে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই জরিপ বলেছে, ওই সব উদ্যোগ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি।
ইন্ডিয়াস টাইম ইউস সার্ভের জরিপকারীরা সারা দেশে ৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীদের আগের দিন তাঁরা কী কাজ করেছেন, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। গত সপ্তাহে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথম জরিপটি হয়েছিল ২০১৯ সালে।
আগেরবারের সঙ্গে এবারের ফলাফলে দুটি মূল পার্থক্য হলো আগের বারের চেয়ে এবার ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীরা বিনা মজুরিতে গৃহস্থালি কাজে ১০ মিনিট সময় কম ব্যয় করেছেন। আর মজুরিসহ কর্মক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ ৩ শতাংশের সামান্য বেশি বেড়েছে।
ওই জরিপের সারসংক্ষেপে এ বিষয় দুটির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নারীদের ‘বিনা মজুরির কাজ থেকে মজুরি দেওয়া হয়—এমন কাজের দিকে অগ্রসর হওয়া’ একটি ইতিবাচক লক্ষণ। তাঁরা এখনে গৃহস্থালি কাজে কম সময় দিয়ে মজুরি দেওয়া হয়—এমন কাজে বেশি সময় দিচ্ছেন।
যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এটা আসলে প্রকৃত সত্য নয়। এমনকি যদি গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান সামান্য কমেও তার অর্থ এই নয় যে নারীদের সংগ্রাম কমে গেছে। তাঁদের এখনো পুরুষদের তুলনায় চাকরি এবং সংসারের কাজ নিয়ে অধিক হিমশিম খেতে হয়।
ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অশ্বিনী দেশপান্ডে বলেছেন, নারীরা কীভাবে তাঁদের সময় কাটান, সেটা গভীরভাবে বুঝতে হলে টিইউএস জরিপের তথ্য পাশাপাশি ভারতের ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (এফএলএফপিআর) পর্যালোচনা করা উচিত। এফএলএফপিআর ১৫ বা তার বেশি বয়সের নারীদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের হিসাব করে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এফএলএফপিআর ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।
অধ্যাপক অশ্বিনী বলেন, কাজের সুযোগ বেড়েছে শুধু এই কারণে ভারতের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়েনি। বরং অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণেও চাপে পড়ে নারীরা অর্থ উপার্জনের জন্য বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন।
অর্থনীতির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘নারীরা একটি চাকরি করার জন্য গৃহস্থালি কাজে তাঁদের সময় কম ব্যয় করার অপেক্ষা করছেন না। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পারিবারিক আয় বাড়াতে আর্থিক মূল্য আছে—এমন কাজ করতে চাইছেন। এর ফলে তাদের দ্বিগুণ কাজ করতে হচ্ছে, বাইরে অর্থের বিনিময়ে কাজ এবং ঘরে বিনা পারিশ্রমিকের কাজ।’
শুধু ভারতীয় নারীদের এ অবস্থা নয় বরং পুরো বিশ্বের বাস্তবতা এটাই। বিশ্বে গড়ে নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন ঘণ্টা বেশি সময় গৃহস্থালি ও সেবাদান কাজ করেন।
ভারতীয় নারীদের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান প্রায় ৪ ঘণ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘর র ক জ ক জ করত ক জ কর গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাচেলর পয়েন্টের ‘পলি চেয়ারম্যান’ খ্যাত গুলশান আরা মারা গেছেন
নাটক ও সিনেমার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে মৃত্যু হয়েছে তার।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছন পরিচালক এম রাহিম। তিনি জানান, শ্রদ্ধেয় শুলশান আরা আহমেদ আজ আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। জংলি আপনার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। আপনি আজীবন আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে থাকবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিচালক কাজল আরেফিন অমি। পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের গুলশান আরা আহমেদ আপা আপা আজ সকাল ৬:৪০-এ ইন্তেকাল করেছেন।’
অমি আরও লিখেছেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে উনি কাবিলার আম্মা, নোয়াখালীর চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনাকে আমরা মিস করবো আপা। আল্লাহ পাক ওনাকে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে, জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।’
জানা গেছে, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন অভিনেত্রী। দ্রুতই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। গুলশান আরা আহমেদের ফেসবুক আইডি থেকে মাঝরাতে লেখা হয়, ‘আমার আম্মু গুলশান আরা আহমেদ আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউরের জন্য। আপনার সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।’
পরে শোনা যায় মৃত্যুর খবর, অর্থাৎ লাইফ সাপোর্ট থেকে আর ফেরানো যায়নি তাকে। ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিনেত্রীকে দাফন করা হবে। অভিনেত্রীর বোনের ছেলে অভিনেতা আর এ রাহুল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন অভিনেত্রী। তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
গুলশান আরা ২০০২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেন। তবে নিজেকে একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা থেকেই গুলশান আরা প্রথম অভিনয় করেন প্রয়াত এনায়েত করিম পরিচালিত ‘কদম আলী মাস্তান’ চলচ্চিত্রে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘চরিত্র’, ‘ডনগিরি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘পোড়ামন’ এর মতো জনপ্রিয় সব ছবি।