ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় জাতিহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের
Published: 14th, March 2025 GMT
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমানভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ব্যবহার করছে। তারা মাতৃত্বকালীন ও প্রজননস্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রগুলো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে ‘জাতিহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ গঠিত একটি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকাটির পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় বিভিন্ন প্রসূতি ওয়ার্ড ধ্বংস করা হয়েছে। একটি প্রজননস্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রে ভ্রূণ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্ম রোধ করার কৌশল নির্দেশ করতে পারে। আর আইনগত সংজ্ঞায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে জাতিহত্যা বলে।
ইসরায়েল এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে তা নাকচ করেছে।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে একটি ইহুদিবিদ্বেষী, পচা, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক সংস্থা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দিকে নজর না দিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাটি ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ইসরায়েলকে আক্রমণ করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ২০২১ সালে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের সব ধরনের লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করা। কমিশনের সদস্যসংখ্যা তিন।
কমিশন বলেছে, যৌন ও প্রজননসংক্রান্ত সহিংসতার শিকার মানুষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে তাদের নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জেনেভায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের গণশুনানিতে কথা বলেছেন। এ ছাড়া যাচাই–বাছাই করা ছবি-ভিডিও ফুটেজ, নাগরিকসমাজ ও নারী অধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলোর তথ্যের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারপ্রধান নাভি পিল্লাই কমিশনের নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, যে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা শোচনীয়ভাবে বেড়েছে।
নাভি পিল্লাইয়ের মতে, ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখাতে, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ইসরায়েল এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ধরনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো জোরপূর্বক জনসমক্ষে পোশাক খুলে ফেলা, নগ্নতা, ধর্ষণের হুমকিসহ যৌন হয়রানি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন সহিংসতা ইসরায়েলের শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের স্পষ্ট আদেশে অথবা পরোক্ষ উৎসাহে সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ১৭ মাসের যুদ্ধে সেখানকার যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত সেবাকেন্দ্রগুলো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যথাযথ সেবা না পাওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় বা সন্তান প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতায় ফিলিস্তিনি নারীরা মারা যাচ্ছেন। এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলের হামলায় ৪৮ হাজার ৫২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বাসিন্দাদের বেশির ভাগকেই বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। সেখানকার প্রায় ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়োনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকট তৈরি হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রথম ধাপের এই যুদ্ধবিরতি ১ মার্চ শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় জাতিহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমানভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ব্যবহার করছে। তারা মাতৃত্বকালীন ও প্রজননস্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রগুলো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে ‘জাতিহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ গঠিত একটি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকাটির পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় বিভিন্ন প্রসূতি ওয়ার্ড ধ্বংস করা হয়েছে। একটি প্রজননস্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রে ভ্রূণ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্ম রোধ করার কৌশল নির্দেশ করতে পারে। আর আইনগত সংজ্ঞায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে জাতিহত্যা বলে।
ইসরায়েল এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে তা নাকচ করেছে।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে একটি ইহুদিবিদ্বেষী, পচা, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক সংস্থা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দিকে নজর না দিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাটি ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ইসরায়েলকে আক্রমণ করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ২০২১ সালে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের সব ধরনের লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করা। কমিশনের সদস্যসংখ্যা তিন।
কমিশন বলেছে, যৌন ও প্রজননসংক্রান্ত সহিংসতার শিকার মানুষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে তাদের নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জেনেভায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের গণশুনানিতে কথা বলেছেন। এ ছাড়া যাচাই–বাছাই করা ছবি-ভিডিও ফুটেজ, নাগরিকসমাজ ও নারী অধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলোর তথ্যের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারপ্রধান নাভি পিল্লাই কমিশনের নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, যে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা শোচনীয়ভাবে বেড়েছে।
নাভি পিল্লাইয়ের মতে, ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখাতে, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ইসরায়েল এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ধরনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো জোরপূর্বক জনসমক্ষে পোশাক খুলে ফেলা, নগ্নতা, ধর্ষণের হুমকিসহ যৌন হয়রানি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন সহিংসতা ইসরায়েলের শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের স্পষ্ট আদেশে অথবা পরোক্ষ উৎসাহে সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ১৭ মাসের যুদ্ধে সেখানকার যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত সেবাকেন্দ্রগুলো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যথাযথ সেবা না পাওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় বা সন্তান প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতায় ফিলিস্তিনি নারীরা মারা যাচ্ছেন। এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলের হামলায় ৪৮ হাজার ৫২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বাসিন্দাদের বেশির ভাগকেই বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। সেখানকার প্রায় ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, পয়োনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকট তৈরি হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রথম ধাপের এই যুদ্ধবিরতি ১ মার্চ শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে আলোচনা চলছে।