‘সব কিছু নিখুঁতভাবে শেষ হয় না। তার পরও একটা সময় শেষ বলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়’– বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া অবসরের ঘোষণায় এই দুটি লাইনে মাহমুদউল্লাহর আক্ষেপটা টের পাওয়া যায়।
কী নিয়ে আক্ষেপ, সেটা সবার জানা। আর মাহমুদউল্লাহ একা নন; মাশরাফি মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম– বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্ম হিসেবে খ্যাত এই পাঁচজনের একই আক্ষেপ। মাঠের বদলে তাদের অধিকাংশের বিদায় নিতে হয়েছে ফেসবুক থেকে! যাদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সিংহভাগ অর্জন, তাদের এমন আক্ষেপভরা বিদায় কেন? দায়টাই বা কার?
মাশরাফি মুর্তজাকে দিয়ে এই পঞ্চপাণ্ডবের বিদায়ের সূচনা। ১২ মার্চ মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। তবে মুশফিকুর রহিম এখনও টেস্ট থেকে অবসর নেননি। মাশরাফি অবশ্য অবসরের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। ২০০৯ সালে উইন্ডিজ সফরে চোট পাওয়ার পর থেকে তিনি আর টেস্ট খেলেননি।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অভিমান করেই টি২০ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়েন। এরপরই গুঞ্জন ওঠে মিরপুরে বিদায়ী ম্যাচ খেলতে চান মাশরাফি। বিসিবি থেকেও আয়োজনের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কী এক কারণে সেই ম্যাচ হয়নি।
সাকিব আল হাসান দেশের মাটি থেকে অবসর নেওয়া ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট শেষে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, শেষ টি২০ খেলে ফেলেছেন, দেশের মাটিতে টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটোর একটাও হয়নি।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জেরে গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর দেশে ফিরতে পারেননি। তাঁর নামে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তাই সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়।
তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে নাটক হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় দলে খেলবেন নাকি অবসর নেবেন, এ নিয়ে প্রায় দুই বছর নানা আলোচনার পর গত ১০ জানুয়ারি ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। ফলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেটি জাতীয় দলের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।
মুশফিকুর রহিম টি২০ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের জেরে সমালোচনার শিকার হলে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে কুড়ি ওভারের ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাজ পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচনা হলে ওয়ানডে থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেন ৫ মার্চ।
গত বুধবার মাহমুদউল্লাহর অবসরের পর একটা বিষয়ে জোরেশোরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন তারা মাঠ থেকে অবসর নিতে পারলেন না? মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার সংস্কৃতি কী দেখা যাবে?
এ বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘ওদের (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ) ক্যারিয়ারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য উজ্জ্বল ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছিল ওরা। আমি মনে করি মাঠ থেকে অবসর ওদের প্রাপ্য। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নিল না, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।’
বিষয়টা নিয়ে আফসোস করেছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও, ‘মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। সেটা তাদের প্রাপ্যও। বাংলাদেশ দলের জন্য যা করেছে, মাঠ থেকে নিতে পারলে খুব ভালো হতো। ভরা স্টেডিয়াম থেকে নিতে পারলে বিদায়টা প্রকৃত অর্থেই সুন্দর হতো।’
মাহমুদউল্লাহর বিদায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই বিষাদের একটি মুহূর্ত। প্রায় দুই দশক জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান ভরসা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। খেলার প্রতি তাঁর নিবেদন ও পারফরম্যান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা মানদণ্ড তৈরি করেছে।’ তবে মাঠ থেকে বিদায় বিষয়ে কিছু বলেননি বিসিবি সভাপতি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন অবসর ন ফ সব ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফুটবল ইশ্বর আমাদের সঙ্গে নেই’- স্পার্স কোচ
ইউরোপা লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করার পর টটেনহ্যাম হটস্পারের কোচ অ্যাঞ্জ পোস্টেকগলু দলের ভাগ্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। গ্রীক বংশোদ্ভূত এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ বলেছেন, এই মৌসুমে ফুটবল ইশ্বর যেন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
ঘরের মাঠ টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়ামে ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই হুগো একিতিকে ফ্রাঙ্কফুর্টকে এগিয়ে দেন। ঠিক তাঁর ২০ মিনিট পর রাইট ব্যাক পেদ্রো পোরোর দারুণ গোলে সমতায় ফেরে স্পার্স। তবে ম্যাচে প্রচুর সুযোগ নষ্ট করে বসে স্বাগতিকরা। যার ফলে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে জার্মানিতে দ্বিতীয় লেগে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে লন্ডনের ক্লাবটি।
ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মিডফিল্ডার লুকাস বার্গভাল গোলমুখে শট মারেন, এরপর রদ্রিগো বেন্টাকুরের হেড লাগে ক্রসবারে। ফ্রাঙ্কফুর্ট গোলকিপার কাওয়া সান্তোস দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ঠেকাতে থাকেন সব শট। বিশেষ করে অতিরিক্ত সময়ে মিকি ভ্যান দ্য ভেনের হেড ঠেকিয়ে স্পার্সকে জয়বঞ্চিত করেন।
আরো পড়ুন:
গোলখরা কাটাতে মনোবিদের শরণাপন্ন রিচার্লিসন
টটেনহ্যামে হোঁচট খেলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে পোস্টেকগলু বলেন, “আমি এখন বুঝে গেছি যে, ফুটবল ইশ্বর এই মৌসুমে অন্য দল নিয়ে ব্যস্ত! আমাদের দিকে তাকানোর সময় পাচ্ছে না। তাই আমাদের যা কিছু করতে হবে, সেটা নিজেদের চেষ্টাতেই করতে হবে, কোনো ঐশ্বরিক সহায়তা দিয়ে নয়।”
এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের স্পার্সের দ্বিতীয় মৌসুমটা ভীষণ হতাশাজনক। একের পর এক ইনজুরিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা ছিটকে গেছেন, সঙ্গে ধারাবাহিক খারাপ পারফরম্যান্স মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে ক্লাবটি নেমে গেছে ১৪তম স্থানে, যেখানে তারা অর্ধেকেরও বেশি ম্যাচ হেরে বসেছে। ইউরোপা লিগ এখন স্পার্সের একমাত্র সুযোগ কিছু জেতার, একই সাথে ১৭ বছরের ট্রফি খরা কাটানোর।
বৃহস্পতিবার স্পার্স কাঙ্ক্ষিত জয় না পেলেও, পোস্টেকগলু দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং কিছু খেলোয়াড়ের বিশেষ প্রশংসা করেছেন, “পুরো দলটাই ভালো খেলেছে। আমি মনে করি রদ্রি (বেন্টানকুর) অসাধারণ ছিল। দুই ফুলব্যাক রক্ষণে এবং আক্রমণে দারুণ অবদান রেখেছে। কুতি (ক্রিস্টিয়ান রোমেরো) আর মিকি (ভ্যান দ্য ভেন) প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভালোভাবে সামলেছে, শুধু যে গোলটা খেয়েছি, সেটা ছাড়া সবই ভালো ছিল।”
স্পার্স তাদের পরবর্তী প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে রোববার (১৩ এপ্রিল) উলভারহ্যাম্পটনের মুখোমুখি হবে। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) তারা দ্বিতীয় লেগ খেলতে জার্মানিতে ফ্রাঙ্কফুর্ট সফরে যাবে।
ঢাকা/নাভিদ