ছিনতাইয়ের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাসায় হাজির আসামির ছেলে, ভয়ে বাসাবদলের চিন্তা
Published: 14th, March 2025 GMT
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তিনি। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার আদাবর এলাকায়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ শেষে বাসায় ফেরার জন্য তিনি শেরেবাংলা নগর থেকে একটি লোকাল বাসে ওঠেন। বসেন বাসের ডান দিকে, জানালার পাশে।
বাসটি শ্যামলী স্কয়ারে এসে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য গতি খুব ধীর করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ডান হাতে একটি দামি মুঠোফোন ছিল। হঠাৎ বাসের বাইরের দিক থেকে তাঁর ডান হাত বরাবর চাপাতি দিয়ে এক যুবক আঘাত করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক যুবক। শিক্ষকের ডান হাতে থাকা মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেন তাঁরা।
চাপাতির আঘাত ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শিক্ষক হতবিহ্বল-আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করেন। চালককে বাস থামাতে বলেন।
কিছুটা দূরে বাস থামলে তিনি হন্তদন্ত হয়ে নেমে পড়েন। ঠিক যে স্থান (শ্যামলী স্কয়ার) থেকে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়, সেখানে ছুটে যান তিনি। মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া যুবকদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রায় ৩০ মিনিট শ্যামলী স্কয়ারে অবস্থান করেন তিনি। যুবকদের খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে পরে রিকশায় বাসায় ফেরেন।
ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনে দুটি অপারেটরের সিম ব্যবহার করছিলেন এই শিক্ষক। বাসায় ফিরেই তিনি তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন থেকে দুটি অপারেটরকে ফোন দেন। বলেন, তাঁর মুঠোফোন ছিনতাই হয়েছে। দ্রুত যেন তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নম্বর সচল আছে নাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা বুঝতে ঘটনার দিন দিবাগত রাত ১২টার পর তিনি তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন থেকে ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনে কল দেন। মুঠোফোনে কল ঢোকে, কিন্তু কেউ ধরেনি। এতে তিনি আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
পরদিন সকাল ৯টার পর তিনি তাঁর হিসাব (অ্যাকাউন্ট) থাকা ব্যাংকে যান। ব্যাংক হিসাবের বিবরণী তোলেন। বিবরণীতে দেখতে পান, তাঁর মুঠোফোনে থাকা অ্যাপস ব্যবহার করে ছিনতাইকারীরা হিসাব থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন।
বিবরণীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেন, তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে দুটি মুঠোফোন নম্বরে এই টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুনছিনতাইকারীদের কবলে পড়া ঢাবি অধ্যাপকের মুখে ভয়ানক পরিস্থিতির বিবরণ০৭ মার্চ ২০২৫ব্যাংক থেকে এই শিক্ষক সোজা চলে যান আদাবর থানায়। থানার পুলিশ তাঁকে বলে, ঘটনাস্থল শ্যামলী স্কয়ার। এলাকাটি মোহাম্মদপুর থানার মধ্যে পড়েছে। তাই তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আদাবর থানা থেকে তিনি যান মোহাম্মদপুর থানায়। পরে তিনি এই থানায় দণ্ডবিধি (ছিনতাই) ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
ব্যাংক হিসাব থেকে যে দুটি মুঠোফোন নম্বরে টাকা স্থানান্তর হয়েছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলায় আসামি হিসেবে কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কয়েকজনকে করা হয় অজ্ঞাত আসামি।
মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কামাল হোসেন (৫১) ও রাসেল মিয়া (২১) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুনরাজধানীর কল্যাণপুরে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনির শিকার যুবক কারাগারে২২ ঘণ্টা আগেপুলিশের তথ্য বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কামাল একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য। আর রাসেলের সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। কামালের কাছ থেকে ছিনতাইকারী দলটির নেতা হিসেবে সম্রাটের নাম জানতে পারে পুলিশ। তবে এই সম্রাটকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আসামির ছেলে বাসায় হাজিরকামাল ও রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার দিন কয়েক পরের ঘটনা। আদাবর এলাকার বাসায় অবস্থান করছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। হঠাৎ বাসার নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে জানান, দুজন লোক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান।
পরে তিনি দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন, দেখা করেন। দুই ব্যক্তির একজন নিজেকে গ্রেপ্তার হওয়া কামালের ছেলে বলে পরিচয় দেন।
কামালের ছেলে এই শিক্ষককে প্রস্তাব দেন, তিনি যেন মামলাটি তুলে নেন।
আরও পড়ুন‘টেস্ট ড্রাইভের’ কথা বলে গাড়ি ছিনতাই, খুদে বার্তায় বললেন, ‘লেটস প্লে’০৯ মার্চ ২০২৫আসামির ছেলের মুখে এ কথা শুনে ভয় পেয়ে যান শিক্ষক। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোন ছিনতাই করল। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা নিয়ে নিল। আমি মামলা করলাম। যে দুজন আমার মোবাইল ফোন ছিনতাই করল, তাদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারল না। এখন দেখছি, ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা আমার বাসাও চিনে ফেলেছে। মামলা উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলছে। এখন আমার স্ত্রী-সন্তানেরা বলছে, বাসা পরিবর্তন করতে। আমিও বাসা পরিবর্তন করার চিন্তা করছি।’
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ছিনতাইকারী দলের নেতাসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
দিন কাটছে আতঙ্কেছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহযোগী অধ্যাপকের। তিনি জানান, এখন মুঠোফোন নিয়ে বাইরে চলাচল করতে ভয় পান। আরও ভয় পান এটিএম কার্ড নিয়ে বের হতে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন নাগরিক যদি রাত-বিরাতে চলাচল করতে ভয় পান, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কা যদি সারাক্ষণ তাঁর মধ্যে কাজ করে, তাহলে বিষয়টি ভীষণ উদ্বেগের। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর আমি ট্রমাটাইজড (মানসিক আঘাতের ধকল) হয়ে পড়েছি। নতুন মোবাইল কিনেছি, কিন্তু সেটি নিয়ে চলতে আমার ভয় লাগে।’
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে নারী আইনজীবীর গলার চেইন ছিনতাই২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫একটি মুঠোফোনে একজন ব্যক্তির নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য থাকে বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা আমার মোবাইল ফোনে থাকা গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকে যে হিসাবে আমার বেতন আসে, তার সঙ্গে আমার মোবাইল ফোন যুক্ত। তাই আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ছিনতাইকারীরা আমার বেতনের টাকা তুলে নিয়ে যায় কি না। তারা বেতনের টাকা নিতে পারেনি। কিন্তু আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে নিল। পরে আমি দুটি নম্বরই বন্ধ করে দিই। নতুন সিম নিই। কিন্তু মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে যদি ছিনতাইকারী কিংবা অন্য কেউ কোনো অপরাধ করে, তখন দায়ভার তো মূল ব্যবহারকারীর ঘাড়েই চলে আসবে।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিদিন কারও না কারও মোবাইল ফোন ছিনতাই হওয়ার খবর জানতে পারি। বেশির ভাগ মোবাইল ফোন উদ্ধার হয় না। যার মোবাইল যায়, সে জানে, কতটা ঝুঁকিতে সে পড়েছে।’
আরও পড়ুনউত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুজনকে পিটুনির পর ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয় উল্টো করে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনঅভিনেতাকে চিনতে পেরে ছিনতাইকারী বলল, মোবাইল নেওয়ার দরকার নাই...০২ মার্চ ২০২৫
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র থ ন র হওয় র ব যবহ র আম র ব
এছাড়াও পড়ুন:
ব্র্যাক ব্যাংক ও বিএসআরএম গ্রুপের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি
ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে একটি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপ।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিভিন্ন বিশেষায়িত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করাই এই পার্টনারশিপের উদ্দেশ্য।
বিএসআরএম গ্রুপ ব্র্যাক ব্যাংকের বিস্তৃত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এবং উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে কাস্টমাইজড কর্পোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং সেবাগুলোর সুবিধা গ্রহণ করবে।
২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সদরঘাটে অবস্থিত বিএসআরএম গ্রুপের কর্পোরেট অফিসে এই পার্টনারশিপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএসআরএম গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমীর আলীহোসাইন এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব কর্পোরেট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং তারেক রেফাত উল্লাহ খান।
এছাড়াও বিএসআরএম গ্রুপের পক্ষে ডিরেক্টর যোহায়ের তাহেরালী, হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি শেখর রঞ্জন কর এফসিএ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব রিজিওনাল কর্পোরেট কায়েস চৌধুরীসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই পার্টনারশিপ উভয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ও পরিচালনাগত উৎকর্ষ সাধনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি ব্র্যাক ব্যাংকের আধুনিক, দক্ষ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কর্পোরেট গ্রাহকদের ক্ষমতায়িত করার প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।
ঢাকা/সাজ্জাদ/এসবি