স্ত্রীকে ফোনে রেখে ‘বিদায়’ বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন যুবক
Published: 14th, March 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীকে ফোনে রেখে ‘বিদায়’ বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে কাটা পড়ে তিনি নিহত হন। এর আগে তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘শ্রীপুর রেলস্টেশন! আজ রেলে কাটা লাশ হয়ে যাব।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকের আউটার সিগন্যালের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা অভিমুখে দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মরদেহ পড়েছিল।
ওই যুবকের নাম খাইরুল বাসার (৩৫)। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুরশা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামে থাকতেন। সেখানে থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
খাইরুল বাসারের (সুজন) ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, মৃত্যুর সাত ঘণ্টা আগে তিনি দুই দফা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘সুখে থাকিস রাজকুমারী। আর কয়েক ঘণ্টা পরে আমার মৃত্যুর খবর শুনতে পাবি। অনেক ভালোবাসতাম তোকে। কিন্তু তুই আমাকে বাঁচতে দিলি না।’ অপর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘শ্রীপুর রেলস্টেশন! আজ রেলে কাটা লাশ হয়ে যাব।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামে খাইরুল বাসারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মোসা.
খাইরুলের স্বজন মো. আশিক বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে এসে খাইরুল বাসারের মরদেহ শনাক্ত করেছেন। স্ত্রীকে ফোনকলে রেখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে এমনটি হতে পারে, তা ধারণা করতে পারছেন না।
শ্রীপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার শামীমা জাহান বলেন, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন ঢাকার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশন অতিক্রম করার পর স্টেশনের কাছে ওই ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। রেল পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভ্যুত্থানের সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শতাধিক ব্যক্তি শনাক্ত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হামলাসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম। উপাচার্যের কার্যালয়সংলগ্ন লাউঞ্জে প্রায় ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি উপাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পরে কাজী মাহফুজুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হামলা হয়েছে, আমরা তার সবকিছু এ প্রতিবেদনে আনার চেষ্টা করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।’
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘১২২ জন ঢাবি শিক্ষার্থী, যারা হামলায় জড়িত, তাদের প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া বহিরাগতও অনেক শিক্ষার্থীর প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এ প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট থেকে পাশ হয়ে এলে আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানাব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। এ ছাড়া যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলা হয়েছে।’
আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ জুলাই বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় আমরা দেখেছি, মল চত্বরে যারা হামলা করেছে তাদের মাথায় সাদা ক্যাপ ছিল। এরপর যারা আহত হয়েছে তারা যখন ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছে, তাদেরও হামলা করেছিল ছাত্রলীগ। এরপর ডাক্তারদের বলা হয়েছিল চিকিৎসা না দিতে, যেখানে আমাদের প্রশাসনেরও যোগসাজশ থাকতে পারে।’
কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা তদন্ত করার সময় বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গেলে সেখানে তার কোনো হার্ডডিস্ক পাইনি। সব হার্ডডিস্ক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে একটা মেইল ও নম্বর পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীরা সেখানে জুলাইয়ে হামলার নানা ছবি-ভিডিও পাঠিয়েছে। এ ছাড়া আমরা ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল পত্রপত্রিকার সংবাদগুলো দেখেছি। সেটার ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলাকালীন ৭০ জন শিক্ষককে পাওয়া গেছে, যাঁরা শিক্ষার্থীদের জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল, রাজাকার বলে ট্যাগিং (তকমা) করেছেন, যেটা আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছে। কেননা শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীরা প্রভাবিত হবে, সেটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে স্বীকার করেছেন এবং সেটার জন্য “সরি” বলেছে।’
প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট অন্য শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।