রাজবাড়ীর প্রবীণ সাংবাদিক সানাউল্লাহ’র দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
Published: 14th, March 2025 GMT
রাজবাড়ী জেলার প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ’র দ্বিতীয় মৃত্যুবাষিকী আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ)। এ উপলক্ষ্যে রাজবাড়ীর বড় মসজিদ এবং মরহুমের নিজ বাসভবন বিনোদপুরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
মরহুম মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাকে রাজবাড়ীর ভবানীপুর কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে দাফন করা হয়েছে।
সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ পাকিস্তান আমলে ‘পাক যমহুরিয়াত’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। তিনি দৈনিক ‘পূর্ব পাকিস্তান’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে তিনি ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকার মফস্বল সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। এরপর ‘দৈনিক বাংলা’, ‘দৈনিক যুগান্তর’, ‘দৈনিক সমকাল’, ‘বিডি নিউজ ২৪’ ও দীর্ঘ সময় ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
‘যত বেশি সংবাদ প্রকাশিত হবে, গণতন্ত্র তত উন্নত হবে’
বাংলাদেশ নিয়ে গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সাংবাদিক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ রাজবাড়ী জেলার রেড ক্রিসেন্ট ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ছাত্রজীবনে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ও ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
ঢাকা/রবিউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মদুনাঘাটে রকেট হামলা, তুমুল যুদ্ধ
রাতে আবদুল মান্নানসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রওনা হলেন তাঁদের লক্ষ্যস্থল অভিমুখে।
সবার আগে একজন পথপ্রদর্শক। তাঁর পেছনে দলনেতা ও আবদুল মান্নান। তাঁদের পেছনে সহযোদ্ধারা। তাঁদের কাছে ভারী অস্ত্র মাত্র দুটি। একটি আরএল (রকেট লঞ্চার) ও একটি এলএমজি। অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এসএমজি, স্টেনগান, রাইফেল এবং কয়েকটি হ্যান্ড গ্রেনেড।
সেদিন তাঁরা মদুনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রে (সাবস্টেশন) আক্রমণ করেন। চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত মদুনাঘাট। সাবস্টেশনের অবস্থান চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের উত্তর পাশে এবং হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল পাকিস্তানি সেনা ও কিছু রাজাকার। সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যা ৩০-৩৫। সাবস্টেশনের চারদিকে ছিল বাংকার।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক অবস্থান ছিল মদুনাঘাটের অদূরেই। এর আগে তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় রেকি করেন। নির্ধারিত দিন মধ্যরাতে তাঁরা কেন্দ্রের ৫০-৬০ গজ দূরে অবস্থান নেন। রাত যখন তিনটা, তখন তাঁরা আরএল দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়েকটি রকেট ছোড়েন। নির্ভুল নিশানায় সেগুলো আঘাত হানে। তিনটি ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে যায়।
পাকিস্তানি সেনারা সজাগই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। চারদিকের বাংকার থেকে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও জোর আক্রমণ চালান। গুলির খই ফোটে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আবদুল মান্নান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করে চলেন।
তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে আবদুল মান্নান হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বুকে কয়েকটি গুলি লাগে। শহীদ হন তিনি। সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তিনি শহীদ ও দলনেতা সুলতান মাহমুদসহ (বীর উত্তম) তিন-চারজন আহত হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবরের।
মদুনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংসের অপারেশন ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। এই অপারেশনের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ বিদেশি বেতার ও সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচার পায়। অবশ্য এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে আবদুল মান্নান শহীদ হন।
আবদুল মান্নান পুলিশে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ১ নম্বর সেক্টরের ঋষিমুখ সাবসেক্টরে। বিভিন্ন জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধ বা অপারেশনেই তিনি পুরোভাগে থাকতেন।
# আবদুল মান্নান, বীর বিক্রম
গ্রাম: নোয়াগাঁও, ইউনিয়ন শ্যামগ্রাম, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বাবা আবদুল লতিফ, মা রাবেয়া খাতুন। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৬। শহীদ হন ৬ অক্টোবর ১৯৭১।
সূত্র: একাত্তরের বীর যোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন। (প্রকাশ: মার্চ, ২০১৩)।