জাতীয় নির্বাচনের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি লাগে ইসির
Published: 14th, March 2025 GMT
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, ওই সময় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরুও করেছে তারা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন করতে কী কী প্রস্তুতি লাগে কমিশনের, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে অনেকের মনেই।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মোটাদাগে নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে আছে—ছবিসহ একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো কাজগুলো। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হয়। আর কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তফসিল ঘোষণার পর।
গত চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেখা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি নিজে নির্বাচনী আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিল। নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও আয়োজন করা হয়েছিল। নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে শুরু করা হয়েছিল প্রস্তুতিমূলক কাজ।
গত চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেখা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি নিজে নির্বাচনী আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিল। নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও আয়োজন করা হয়েছিল। নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে শুরু করা হয়েছিল প্রস্তুতিমূলক কাজ।নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজ হলো, ভোটার তালিকা তৈরি ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা। ভোটার তালিকা তৈরি করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ইসি প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে এ তালিকা হালনাগাদ করে। এ ছাড়া প্রয়োজনে যেকোনো সময় তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা (২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে) প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমও চলছে। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করা যাবে বলে মনে করছে ইসি। তবে এটি চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। এর আগে নির্বাচন হলে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করতে আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতে পারে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করাও ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা আছে। আইন অনুযায়ী, কোনো আদমশুমারির পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে ও ইসি চাইলে যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। নির্দিষ্ট আইনের ভিত্তিতে কাজটি করতে হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করে শুনানির মাধ্যমে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর আসনবিন্যাস চূড়ান্ত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণে দেড় মাস ও সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ কাজে চার মাসের মতো সময় নিয়েছিল ইসি।
নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ও নির্বাচনের পরিবেশ। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসির ওপর নির্ভর করে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির বিষয়টি পুরোপুরি ইসির একার ওপর নির্ভর করে না। এখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের সম্পাদকভোটকেন্দ্র স্থাপন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য একটি নীতিমালা আছে। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে হয়।
সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়ে থাকে ইসি। এ জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। কিছু শর্ত পূরণ করলে দেওয়া হয় নিবন্ধন। প্রথমে করা হয় আবেদন যাচাই-বাছাই। কাগজপত্র ঠিক থাকলে মাঠপর্যায়ের তথ্য সরেজমিন যাচাই করে ইসি। এরপর নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নেয়। এ কাজ করতেও কয়েক মাস লাগে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগে ভাগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অন্য সামগ্রীর বেশ কিছু কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় ভোটের তফসিলের সময়। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। আর প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। এটি চূড়ান্ত করা হয় তফসিল ঘোষণার পর। এরপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের।
ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে থাকে ইসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক এ কাজগুলো অনেকটা ‘রুটিন ওয়ার্কের’ মতো। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তফসিল ঘোষণার পর সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব। এর আগে পরিবেশ তৈরির মূল ভূমিকা সরকার ও দলগুলোর।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা তৈরি ও আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ—এ দুটি কাজে একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়। প্রস্তুতির বাকি কাজগুলো আসলে চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য বেশি সময় প্রয়োজন হয় না।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ও নির্বাচনের পরিবেশ। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসির ওপর নির্ভর করে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির বিষয়টি পুরোপুরি ইসির একার ওপর নির্ভর করে না। এখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র পর ব শ ত র ভ টক ন দ র স ধ রণত ন র জন র জন য হয় ছ ল ন করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।