আছিয়া চলে গেলো, আমরা কি প্রতিবাদ থামিয়ে দেবো?
Published: 14th, March 2025 GMT
মাগুরার আছিয়া চলেই গেলো! যাওয়ার আগে পুরো বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে গেলো। মনে দাগ কাটেনি- এমন মানুষ পাওয়া ভার। তার সাথে কি হয়েছিলো কেন হয়েছিলো- তা দেশশুদ্ধ সবাই জানে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি কি শাস্তি হওয়া উচিত, তা নিয়েও পুরো দেশে হইচই হচ্ছে। এ বয়সী কন্যা ঘরে ঘরে আছে। আকারে ইঙ্গিতেও একে সমর্থন করার কোন উপায় নেই। মাগুরার ঘটনা প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও বহুবার এই জাতীয় ভয়ংকর বিকৃত অপরাধ ঘটেছে, আমরা শোরগোল করেছি, তারপর ভুলে গেছি। ভুলতে পারে না কেবল সেই পরিবার। কিন্তু তাদের খবর আর কে রাখে! কেবল শিশু নয়, নারী নির্যাতনও বাড়তির দিকে।
মানুষের ভেতর অপরাধ প্রবণতা থাকে। সব দেশে, সব সমাজেই থাকে। যেকোনো নির্যাতনের প্রথম শিকার হয় দুর্বলেরা। দুর্বলতার দিক থেকে সবচেয়ে নিচের স্তরে আছে প্রাণীরা, যারা এই পৃথিবীতেই থাকে কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। তাদের ভাষা থাকলেও আমরা বুঝি না এবং তাদের জন্য কোন আইন আদালত থাকলেও তারা নিজে নিজে যেতে পারে না। সমাজে নিষ্ঠুরতার প্রথম শিকার হয় প্রাণীরা। মন চাইলেই আমরা কুকুর বিড়ালের দিকে ঢিল এমনকি গরম পানি ছুঁড়ে মারি, মেরে ফেলতেও দ্বিধা করি না এবং একে অন্যায় বলেও মনে করি না। বরং বিকৃত আনন্দ পাই। গত ১০ই মার্চ বরগুনা সদরে একটি গুলিবিদ্ধ মদনটাক পাখি আহত হয়ে তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় আশ্রয় নেয়। ৭ থেকে ১০ বছর বয়েসি কিছু শিশু পাখিটিকে দেখতে পেয়ে এলাকার অভিভাবকদের জানায়। এবং এলাকার লোকজন উল্লাস করে পাখিটিকে জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। শিশুরা কি শিখল? যে দুর্বল গুলিবিদ্ধ পাখিটি প্রাণ বাঁচাতে মানুষের কাছে এসেছিল, সেই মানুষ উল্লাস করে তাকে মেরে খেল! এই নিষ্ঠুরতা দেখে বড়ো হয়ে তারা কি নিষ্ঠুরতাকেই স্বাভাবিক মনে করবে না? ঠিক তার পরের দিন ১১ই মার্চ রাঙ্গামাটি রাজস্থলী উপজেলায় একটি মা হাতি ৯০ কেজি ওজনের একটি বাচ্চা পেটে নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় টানা কয়েকদিন স্থানিয়দের তাড়া খেয়ে ধকল সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে। মানুষ মায়ের কষ্টের চাইতে হাতি মায়ের কষ্ট কোনভাবেই কম থাকার কথা না। কতো কষ্ট পেয়ে সেই মা মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা মৃত্যুর আগে মানুষ সম্পর্কে কি কি ভেবেছে, তা আমরা জানি না। জানার প্রয়োজন ও বোধ করি না। এগুলো সমাজে অহরহই ঘটছে। এই সবই ভয়াবহ নিষ্ঠুরটা!
সমাজে বর্বরতার প্রথম শিকার হয় প্রাণী, তারপর নারী , দরিদ্র, তারপর শিশু। কারণ তারা দুর্বল। সবলেরা তাদের পেয়ে বসে। দুর্বল-সে যেই হোকনা কেন, নির্যাতন অপরাধ। সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে হইচই হলে নিপীড়ক, খুনি, ধর্ষকদের অপরাধ প্রবণতা কমবে। বেছে বেছে প্রতিবাদ নয়, প্রতিবাদ হোক দুর্বলের প্রতি সব অপরাধের বিরুদ্ধে!আমরা যেন প্রতিবাদ থামিয়ে না দেই।
আরো পড়ুন:
জাপানিরা ড্রয়িং রুম যেভাবে সাজায়
নখের যে রং গুরুতর রোগের জানান দেয়
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র বল অপর ধ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রোজায় কিডনির রোগীরা যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন
কাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ
যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগী, যাঁদের কিডনি বিকল হয়ে পঞ্চম ধাপে আছেন, যাঁদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে, যাঁদের মূত্রনালির ইনফেকশনের চিকিৎসা চলছে, আকস্মিক কিডনি বিকল রোগী, যাঁর কিডনির কোনো জরুরি অপারেশন করাতে হচ্ছে, তাঁদের জন্য রোজা রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগীদের রক্তের উপাদানে কোনো জটিলতা দেখা দিলে বা রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাঁদের এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রোজা রাখতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগী
যাঁরা কিডনির রোগের প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত আছেন, কিন্তু কোনো জটিলতা নেই, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে পারবেন। তবে আমিষ–জাতীয় খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ পরিমিতভাবে খেতে হবে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ও ঝাল-মসলা এড়িয়ে চলতে হবে। পটাশিয়ামযুক্ত শাকসবজি ও ফল সীমিত পরিমাণ খাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তের উপাদান মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। যাঁদের শরীরে অতিরিক্ত পানি আছে বা শরীর ফোলা, তাঁরা একবারে অনেক বেশি পানি খাবেন না। সাহ্রির সময় ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ পরিমিত খেতে পারেন। ইফতারে খেজুর, চিড়া, দই, ডিমের পুডিং, সেমাই, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি খেতে পারেন।
আরও পড়ুনডায়াবেটিসে রোজা রাখা কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঘন ঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন
প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহ্রির সময় ও ইফতারের পরপর বেশি পানি পান করবেন। কমপক্ষে তিন লিটার প্রতিদিন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন।
কিডনিতে পাথর
পানি কম পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই যাঁদের পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাঁদের ইফতার থেকে শুরু করে সাহ্রি পর্যন্ত ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে কাঁচা লবণ পরিহার করতে হবে এবং আমিষ–জাতীয় খাবার, বিশেষ করে গরু-খাসির মাংস কম খেতে হবে।
আরও পড়ুনরোজা রেখে পর্যাপ্ত না ঘুমালে কী হয়০৬ মার্চ ২০২৫দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগীদের খাদ্যতালিকা
মাছ-মাংস: মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ পরিমিত।
শাক: লালশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, মিষ্টিকুমড়ার শাক, লাউশাক, শর্ষেশাক ও কচুশাক।
সবজি: ডাঁটা, পটোল, করলা, ঝিঙে, কাঁকরোল, লাউ, শসা, চালকুমড়া, বিচি ছাড়া শিম, ধুন্দুল, বেগুন, গাজর, চিচিঙ্গা ও আলু (সামান্য)।
ফল: আপেল, পাকা পেঁপে, পাকা পেয়ারা, আনারস, নাশপাতি, জামরুল, পাকা বেল।
অন্যান্য: চাল, আটা, ময়দা, মুড়ি, চিড়া, মুগ ডাল (অল্প পরিমাণ), সেমাই, সুজি, বার্লি, কর্নফ্লেক্স, ভুট্টা, কর্নফ্লাওয়ার ইত্যাদি।
কিডনি সংযোজনের রোগী
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কিডনি সংযোজিত রোগীরা রোজা রাখতে পারেন। তবে তাঁদের ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত।
ডা. সুরাইয়া আক্তার, মেডিসিনবিশেষজ্ঞ, এ কে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আজম খান ফাউন্ডেশন লিমিটেড, গাজীপুর
আরও পড়ুনক্যানসারের রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবেন১০ মার্চ ২০২৫