ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে রাশিয়া। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছেন,  যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোর সুরাহা করতে হবে। আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।  

ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে মস্কো পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। তারা প্রাথমিকভাবে এক মাসের যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিয়েভ ও ওয়াশিংটন মনে করে, এই এক মাসের মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। 

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উইটকফ মস্কো সফর করছেন। 

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মস্কোয় বেলারুশ নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব সামনে এগিয়ে নিতে হলে বেশ কিছু সুক্ষ্ম ও গুরুতর বিষয়ে সমাধান জরুরি। প্রথমেই তিনি সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করা এবং স্থায়ী শান্তির পথে এগোনো যায়—এমন যুদ্ধবিরতি চান বলে জানান।

তার বক্তব্যে আরও বেশ কিছু বিষয় বা শর্ত স্পষ্ট ছিল। এর মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধবিরতিতে সেনা সংগ্রহের মাধ্যমে আরও সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া যাবে না এবং রাশিয়ার দখলে থাকা কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয়দের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়। অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজনে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পরামর্শ দেন পুতিন।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ চান তিনি। বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন, ক্রেমলিন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেন এতে সমর্থন জানিয়েছে।

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘ধারণাটি নিজেই সঠিক এবং আমরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার। আমি মনে করি, আমাদের মার্কিন সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত।’ পুতিন বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংঘাতের অবসানের ধারণাকে সমর্থন করি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের গাজা খালি করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসাকে স্বাগত জানাল হামাস

গাজা উপত্যকা খালি করতে ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। এর আগে গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে পাকাপাকিভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেন, ‘গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে কেউ সরিয়ে নেবে না।’ এদিন ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এর পরপরই বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানায় হামাস। বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটির মুখপাত্র হাজেম কাসেমি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য গাজা উপত্যকার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার ধারণা থেকে সরে আসার প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।’

হামাসের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদারত্বকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করার মাধ্যমে এই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই।’

গত মাসে ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাব সামনে এনেছিলেন। বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে পাকাপাকিভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ট্রাম্পের আকস্মিক এমন প্রস্তাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরেও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

গাজার পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কাতারে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার স্পষ্ট বিরোধিতা করা হয়।

বৈঠকে কাতার, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মহাসচিব অংশ নেন। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মিসরের কায়রোয় ৪ মার্চ আরব লীগের সম্মেলনে এই পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা পুনর্গঠনে বিকল্প প্রস্তাবে সমর্থন ওআইসির ০৮ মার্চ ২০২৫

গত শনিবার ৫৭ সদস্যের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ট্রাম্পের গাজা দখল এবং এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগের বিকল্প প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে। সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির এক জরুরি বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। মিসরের উদ্যোগে বিকল্প প্রস্তাবটি সামনে এসেছে।

কাতারের দোহায় গত মঙ্গলবার নতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করছি, চলমান আলোচনায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির দিকে দৃশ্যমান অগ্রগতির সূচনা হবে।’

যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য ইসরায়েলও প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। তবে দেশটি দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে চায়।

আরও পড়ুনগাজার জন্য ‘বাস্তবসম্মত’ আরব পরিকল্পনায় সমর্থন ৪ ইউরোপীয় দেশের০৯ মার্চ ২০২৫

এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনায় যোগ দিতে মঙ্গলবার দোহায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।

আরও পড়ুনগাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা০৩ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনঅস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ছাড়তে হবে হামাসকে১১ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কথা বলবেন পুতিন-ট্রাম্প
  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে কিছু শর্তে সম্মত পুতিন
  • ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে কিছু শর্তে সম্মত পুতিন   
  • ট্রাম্পের গাজা খালি করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসাকে স্বাগত জানাল হামাস
  • অস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ছাড়তে হবে হামাসকে