মেহেরপুরে থানায় ধর্ষণ মামলার সালিস, প্রতিবাদ করায় মারধর, পরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
Published: 14th, March 2025 GMT
মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমারকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে তিনি মারধর করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
পরে গতকাল রাতে এ ঘটনায় এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মেহেরপুর সদর থানায় মামলা করেন তার মা। মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন। পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর বায়েজিদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের অবহেলায় তিন আসামি জামিন পেয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা আমাদের নানা কায়দায় হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমার উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এ সময় এসআই সুজয় কুমার আসামিদের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ দিতে থাকেন।’
ওই খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা তুষার আহমেদ ও সিয়াম হোসেন থানায় যান। তাঁরা ধর্ষণ মামলার মীমাংসা করার প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই ওই দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেন। তাঁরা এসআই সুজয় কুমার ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় মামলার বাদীর ভাই সাংবাদিকদের জানান, এসআই সুজয় কুমার আসামিদের বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির শুরু করেন। তিনি টাকা নিয়ে মামলা মীমাংসা করার কথাও বলেন। তাঁরা বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জানান। ছাত্রনেতারা থানায় এসে আসামিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান। এসআই সুজয় কুমার দুই ছাত্রনেতাকে মারধর করেন।
থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হলে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাঁর কাছে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো এক ঘণ্টার মধ্যে এসআই সুজয় কুমারকে বরখাস্ত, বাদীকে হুমকি দেওয়ায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও তাঁদের পক্ষের লোকজনকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন, এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘ র ও কর সদর থ ন এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
সমন্বয়ক পরিচয়ে পুলিশকে মেরে আসামি ছিনতাই
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে দুই পুলিশকে মারধর করে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই পিযুষ সরকার ও কনস্টেবল রাজীব সিকদার আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন বেগুনবাড়ি সেতুর ঢালে জমিদার সিটি এলাকায় কালু বেপারীর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় বেগুনবাড়ি এলাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই পিযুষ সরকার দু’জন কনস্টেবল নিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আসিফ উল্লাহকে (২৫) গ্রেপ্তার করেন। এ সময় আসিফের ছোট ভাই মারুফ হোসেন পুলিশের কাছে এসে নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দেন। মারুফ পুলিশের কাছে ওয়ারেন্টের কাগজ দেখতে চান। পুলিশ ওয়ারেন্টের কাগজ বের করে দেখালে মারুফ পুলিশের হাত থেকে ওয়ারেন্টের কাগজ নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। মারুফ ফোনে কল করে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনসহ ২০-২৫ জনকে জড়ো করেন। এ সময় তারা দুই পুলিশকে মারধর করে হাতকড়া পরা অবস্থায় আসামি আসিফকে ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনা এসআই পিযুষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করেন। তাদের মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে অভিযান চালিয়ে শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরি এলাকা থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় আসামি আসিফ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মারুফসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নেওয়া আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সমন্বয়ক পরিচয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আসামির আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেখানে সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে কিনা বিষয়টি তিনি নিশ্চিত নন।