মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমারকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে তিনি মারধর করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

পরে গতকাল রাতে এ ঘটনায় এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মেহেরপুর সদর থানায় মামলা করেন তার মা। মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন। পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর বায়েজিদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের অবহেলায় তিন আসামি জামিন পেয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা আমাদের নানা কায়দায় হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমার উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এ সময় এসআই সুজয় কুমার আসামিদের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ দিতে থাকেন।’

ওই খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা তুষার আহমেদ ও সিয়াম হোসেন থানায় যান। তাঁরা ধর্ষণ মামলার মীমাংসা করার প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই ওই দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেন। তাঁরা এসআই সুজয় কুমার ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ সময় মামলার বাদীর ভাই সাংবাদিকদের জানান, এসআই সুজয় কুমার আসামিদের বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির শুরু করেন। তিনি টাকা নিয়ে মামলা মীমাংসা করার কথাও বলেন। তাঁরা বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জানান। ছাত্রনেতারা থানায় এসে আসামিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান। এসআই সুজয় কুমার দুই ছাত্রনেতাকে মারধর করেন।

থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হলে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাঁর কাছে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো এক ঘণ্টার মধ্যে এসআই সুজয় কুমারকে বরখাস্ত, বাদীকে হুমকি দেওয়ায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও তাঁদের পক্ষের লোকজনকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন, এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ র ও কর সদর থ ন এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা পরিচয়ে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগ

সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি পরিচয়ে নেতা জমির মালিকানা দাবি করে জোরপূর্বক জমি দখল, হামলা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল ১০টার সময়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী ক্যানেলপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ সময় থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী আকলিমা আক্তার ডলি। অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মাহবুব তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার কথিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস ও জয়নালের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, রামদা ও চাপাতি নিয়ে, জমির মালিকানা দাবি করে বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা করে, এক ভুক্তভোগীর জমির সীমানা প্রাচীন ভাঙচুর করে এবং দখল করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়।

এসময় বাড়িওয়ালারা তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ভুক্তভোগীদের উপর হামলা, নারীদের শ্লীলতাহানি, স্বর্ণালংকার লুট ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় ঘটনাস্থলের সামনে স্থাপিত আল জাকির মাদ্রাসার সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙ্গচুর করা হয়। যেখানে ধরা পরেছিল অভিযুক্তদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কিছু চিত্র।

এদিকে এবিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হামলা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ তোলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

অভিযোগকারী খাদিজা ও আসমা আক্তার জানান, তাদের সম্পদের ক্ষতি সাধন কালে তারা বাঁধা দিতে গেলে, ১৫-২০ জন যুবক তাদের উপর হামলা করে এবং তাদের গলাচিপে ধরে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

অপর এক ভুক্তভোগী সাবেক পুলিশ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে আমাদের উপর হামলার বিষয়ে জানিয়ে সাহায্য চাইলেও আমাদের সাহায্যে এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্য আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে এখন থানায় এসে অভিযোগ দিলাম।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালাদের বাকবিতন্ডা হয়েছে এবং অভিযোগকারীর একটি দোকানের তালা খুলেছিল বসার জন্য, পরে এসআই মাহবুবের নেতৃত্বেই সেই তালা পুনরায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

এছাড়া নারী নির্যাতন, স্বর্ণালংকার লুট, ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙ্গচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে  আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমিক দল নেতার হামলায় ৩ পুলিশ আহত, গ্রেপ্তার ২
  • মাদারীপুরে হাতকড়াসহ ২ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক ২৭ 
  • হাতকড়াসহ ২ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক ২৭ 
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা পরিচয়ে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগ