সবুজ কাপড়ে মোড়ানো কফিন। আট বছরের ছোট্ট শিশু আছিয়া খাতুন সেই কফিনে ‘ঘুমে’। মমতামাখা হাতে সেই কফিন স্পর্শ করছিলেন মা আয়েশা আক্তার। ততক্ষণে জানা হয়ে গেছে, আর কখনও ঘুম ভাঙবে না বুকের নিধি আছিয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরের সামনে তখন পিনপতন নিঃশব্দ। মধ্যদুপুরে আছিয়া নামে ‘ছোট্ট ফুল’ অকালে ঝরে যাওয়ায় ফাল্গুনের শেষ বিকেলটায় সবার মনে যন্ত্রণার পীড়া। আছিয়ার কফিন যখন বের করে আনা হয়, তখন হঠাৎ ভেঙে যায় নীরবতা। মায়ের হৃদয়ভাঙা আর্তনাদে উপস্থিত সবার চোখের আঙিনায় নোনাজল। ‘আছিয়া আছিয়া’ বিলাপ যেন থামছিল না আয়েশার। মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আছিয়া দেশ-বিদেশের কোটি মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে গতকাল দুপুরে চলে গেল অনন্তলোকে।

সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর ১টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেদনার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সিএমএইচ থেকে আছিয়ার কফিন নেওয়া হয় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ যায় মাগুরায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষে শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডিতে আছিয়াকে দাফন করা হয়। এদিকে গতকাল রাতে শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। 

মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গেল ৬ মার্চ আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। সেই খবরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। পালিত হয়ে আসছে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি। মাগুরার নিভৃত পল্লি শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডির আছিয়া হয়ে ওঠে শিশু ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ‘মশাল’। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মিছিল ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলছে। আছিয়ার মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলো– শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

‘এতটুকু আবদার’ 

সিএমএইচের হিমঘরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন আছিয়ার মা আয়েশাসহ স্বজনরা। আয়েশাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও বারবার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করতে করতে আয়েশা বলতে থাকেন, ‘আমার নাবালক সোনামণিরে যেভাবে মারছে, আমার মণিকে যেভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে মারছে– আমি তাগোর (অভিযুক্ত) ফাঁস দিয়ে বিচার চাই। এরম মৃত্যু চাই আমি, আমার মণিরে যেমন বেলেড দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেছে, ঠিক সেরকম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। এতটুকু আবদার। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ও রকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।’

সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে আয়েশা বলেন, ‘ওর আপার বাড়িতে যাওয়ার পর, ওর আপাকে ধরে মেরেছিল। তখন আছিয়া বলেছিল, সে বাড়িতে গিয়ে মাকে সব বলে দেবে। এর পরই সেই রাতে এরকম ঘটনা ঘটেছে। বড় মাইয়াটারে ইচ্ছামতো মেরে আলাদা ঘরে থুইয়া দিছিল। পরে রাত ১১টার দিকে আমার কাছে ফোন দিয়ে বলছে আমার মণি অসুস্থ। আমি গিয়ে দেখি সদর হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। তারে রাইখে পলাইছে ওই মহিলা।’ 
আয়েশা বলেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে শেষ কথা কিছু অইল না। এটা বড় কষ্ট থাকল। মেয়ে বোনের শ্বশুরের বাসায় যেতে চাইছিল না। জোর করে পাঠাইছিলাম। যদি না পাঠাইতাম তাহলে এই অবস্থা হতো না।’

হিমঘরের সামনে আছিয়ার মামা ইউসুফ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসার আমার বোনের। তাঁর স্বামী কৃষক ছিলেন। কয়েক মাস আগে গ্রামে একটা মারধরের ঘটনায় বোনজামাইর মাথায় লাঠির আঘাত পায়। এর পর থেকে তার মানসিক সমস্যা। বোনজামাইর দুরবস্থা ও সংসারের টানাপোড়েনের কারণে চার মাস আগে হিটু শেখের ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আছিয়ার বোনের। কে জানত ওই পরিবার এত খারাপ! আগে জানলে কি ওই ঘরে আত্মীয়তা করতাম।’ 

হেলিকপ্টারে নেওয়া হলো গ্রামে 

শিশুটির লাশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরা যান। ফরিদা আখতার বলেন, ‘এটি রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ, এই ধর্ষণের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।’ এর আগে সিএমএইচে আছিয়ার মা আয়েশা ও স্বজনকে সান্ত্বনা দেন তিনি। 

সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরা যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। এর আগে সিএমএইচে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনকে যেভাবে হারিয়েছি; এটি পুরো দেশের জন্য লজ্জার। যারা এই ঘটনায় দায়ী, অবিলম্বে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো বোনকে আমরা এভাবে হারাতে চাই না। ধর্ষণ নামের নৃশংসতাকে চিরতরে বন্ধ করতে হবে।’

সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এ ঘটনায় ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একই স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন দু’জন। তারা লিখেছেন, ‘আমাদের বোন আর নেই। তার ধর্ষণের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্ষকদের শাস্তির এক দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক। বিচারহীনতা, বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দীর্ঘসূত্রতা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে যে ধ্বংসাবশেষ জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, শিশুটির ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে সেই বিচার ব্যবস্থা আবার জেগে উঠুক। পুরো বাংলাদেশ বোনটির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, লজ্জিত।’ 

সেনাবাহিনীর সমবেদনা

আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির গতকাল সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে সেনাবাহিনী। শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মাগুরা থেকে ফরিদপুর, এর পর ঢাকায় 

পুলিশ ও আছিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৬ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আছিয়া। পরদিন অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর পর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। 

মামলায় যা বলা হয়েছে 

আছিয়া ধর্ষণের মামলার এজাহারে বলা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকত। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি। ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় আছিয়া। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার স্পর্শকাতর অঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। তখন বড় বোন মনে করেন, সে ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এর পর সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়। 

এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করে। এ কথা কাউকে বললে আছিয়াকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখে। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেয়। তখন আছিয়ার মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীর সহায়তায় মাগুরা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স এমএইচ বড় ব ন পর ব র আম র ম র ঘটন গতক ল ঘটন য় অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও’

যশপ্রীত বুমরার ডেলিভারিটি ছিল লেগ স্টাম্পে। খুব দ্রুতই অবস্থান তৈরি করে নিলেন করুন নায়ার, ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা!

নিজের বোলারকে ছক্কা হজম করতে দেখেও হাততালি দিয়ে উঠলেন মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারের পঞ্চম বলে আবার ছক্কা। এবার স্লোয়ার ডেলিভারি উড়ে গেল লং অফ দিয়ে। অবাক চোখে চেয়ে দেখলেন বুমরা। এই দুই ছক্কার মাঝে হয়েছে একটি চারও। সব মিলিয়ে ছয় বলেই ১৮ রান। সময়ের সেরা পেসার বুমরার বলে নায়ারের এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠার কথা অনেকেরই।

নায়ার সেই বিরল দুর্ভাগাদের একজন, যিনি ভারতের হয়ে অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও তিন ম্যাচ পর বাদ পড়ে আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। আইপিএলে ব্র্যাত্য হয়ে পড়েছিলেন ৩০ বছর বয়সেই। হারিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকেই। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নায়ার টুইট করেছিলেন, ‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।’

গতকাল রাতে নায়ারের সেই টুইট দিয়ে একটি পোস্ট করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমাদের হৃদয় ভরে গেছে।’ সঙ্গে চোখের কান্না লুকানোর ইমোজি, ভালোবাসারও। শনিবার রাতে আইপিএলের মুম্বাই–দিল্লি ম্যাচ সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হওয়ার কথা নায়ারেরই।

দিল্লি ক্যাপিটালসের ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান আইপিএলে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন প্রায় তিন বছর পর। ফাফ ডু প্লেসির ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে নেমে করেছেন ৪০ বলে ৮৯ রান। ৫ ছক্কা আর ১২ চারে শুধু দিল্লির জন্য রানই তোলেননি, নিজের ভেতরে জমে থাকা খেদই যেন একের পর এক বের করে দিয়েছেন।

আইপিএলে নেমেছেন বছর তিনেক পর, তবে ফিফটিটি করেছেন প্রায় সাত বছর বিরতির পর। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ২ হাজার ৫২০ দিন পর। আইপিএলে আর কোনো ব্যাটসম্যানের দুটি ফিফটির মধ্যে এত বড় ব্যবধান নেই।

নায়ার মাঝের দীর্ঘ সময়ে খেলার সুযোগই পেয়েছেন মাত্র তিন আসর। মাঠে নেমেছিলেন ৮ ম্যাচে। তাতে মাত্র ৩৭ রান তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।

২০২২ সালের পর আর সুযোগই পাননি। ওই সময় বাদ পড়েছিলেন রাজ্য দল কর্নাটক থেকেও। অমন ঘোর অন্ধকার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটে উঠেছিল নায়ারের সেই আর্তি—প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।

ক্রিকেট তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। অর নায়ার তা দুই হাত ভরে লুফে নিয়েছেন। সেটা কতটা, কিছু সংখ্যায় চোখ রাখলেই বোঝা যাবে। এক মৌসুম অপেক্ষা করে বিদর্ভে যাওয়া নায়ার সেই টুইটের পর থেকে গতকালের আগপর্যন্ত প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন ৩ হাজার ৩৫ রান, সেঞ্চুরি ১২টি। ভারতের আর কোনো ক্রিকেটার এই সময়ে এর চেয়ে বেশি রান বা সেঞ্চুরি করতে পারেননি।

ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়েও খেলেছেন দুই মৌসুম, রান করেছেন ৫৬ গড়ে। এ সময়ে দলগতভাবে জিতেছেন রঞ্জি ট্রফি, ফাইনালে উঠেছেন বিজয় হাজারে ট্রফির। ওয়ানডে সংস্করণের বিজয় হাজারেতে নায়ারই ছিলেন শীর্ষ ব্যাটসম্যান। ব্যাট করেছেন আট ইনিংসে, আউট হয়েছেন মাত্র দুবার। অপরাজিত ইনিংসগুলো ছিল এ রকম—১২২*, ৮৮*, ১৬৩*, ১১১*, ১২২*, ৮৮*। যে দুটিতে আউট হয়েছেন, তার একটিতে ১১২, আরেকটিতে ২৭।

প্রায় একা হাতে বিদর্ভকে ফাইনালে তোলার পর ট্রফি জিততে না পারলেও নায়ার আবার আইপিএলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। যদিও দিল্লি তাঁকে সস্তা দামেই কিনেছে (৫০ লাখ রুপি)।

নায়ারের দৃষ্টি ছিল অবশ্য মাঠে নামার সুযোগ পাওয়ার দিকেই। যদিও দিল্লির প্রথম চার ম্যাচে সেই সুযোগটা আসেনি। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে সুযোগ এসেছে ডু প্লেসিকে চোটের কারণে তুলে নেওয়ায়। আর আইপিএল প্রত্যাবর্তনের প্রথম সুযোগেই নায়ারের ব্যাটে ছুটল আগুনের ফুলকি, যে আগুনে পুড়লেন বুমরার মতো বোলারও।

ম্যাচটা অবশ্য নায়ারের দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। মুম্বাইয়ের ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১২ রানে। তবে নায়ার জিতেছেন ঠিকই। প্রিয় ক্রিকেট তাঁকে আরেকটা সুযোগ তাঁকে দিয়েছে। বয়স এখন ৩৩ বছর। কখনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সুযোগ না পাওয়া নায়ার এখন সেদিকেও হয়তো একটা সুযোগ চাইতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ