ইমাম, শাফিক ও ইয়াসিরের পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এসেছে, কিন্তু তারাই নেই
Published: 14th, March 2025 GMT
ইমাম হাসান ভূঁইয়া তাইম, শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ ও মো. ইয়াসির সরকারের চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডও এসেছে। তবে এই তিনজন পরীক্ষা দিতে পারবেন না। মানুষগুলোই তো আর পৃথিবীতে নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে তিনজনই শহীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। এই তিন শহীদের পরিবারে সন্তানের পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে নেই কোনো উচ্ছ্বাস। স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। নতুন করে ক্ষোভেরও জন্ম দিচ্ছে তাঁদের মনে। কারণ, সন্তানেরা যে বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিল, সেই বাংলাদেশের দেখা মিলছে না।
রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেলেও এই তিনজনের নামে প্রবেশপত্র হবে না। কারণ, টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তারা পৃথিবী ছেড়েছে।
মো.
শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গত ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত হন কলেজছাত্র মো. ইয়াসির সরকার (১৮)। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাছের কুতুবখালীর প্রধান সড়কে ইয়াসির গুলিবিদ্ধ হন। নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজীনগর এম ডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন ইয়াসির। বাসা রাজধানীর শনির আখড়ার গ্যাস রোড এলাকায়। ইয়াসিরের বাবা ইউসুফ সরকার ক্যানসারের রোগী। ইয়াসির ছাড়াও তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে আছে।
ইয়াসিরের বোন হাফসা জানালেন, বয়সে ছোট হলেও ইয়াসির পরিবারের ভরসার জায়গা ছিল। মা-বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, ছোট বোনকে মাদ্রাসায় আনা-নেওয়া করা, বাবার সঙ্গে বাজার করা—সবই করতেন। নিজের শখ বলতে ছিল, মাঝেমধ্যে সাইকেল চালিয়ে ঢাকার বাইরে ঘুরতে যাওয়া।
ইয়াসির সরকার ও তার রেজিস্ট্রেশন কার্ডউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরীক্ষার শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে ইংরেজি ১ম পত্রের প্রশ্ন
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় এইচএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের ‘আমাদের চৌহালী গ্রুপ’ নামে একটি গ্রুপে উল্লিখিত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি আপলোড করা হয়।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বেকায়দায় পড়ে চৌহালী উপজেলা প্রশাসন। এরপর চৌহালী উপজেলা প্রশাসন তৎপর হলে বেলা ১১টার দিকে গ্রুপ থেকে আপলোডকারীরা ওই প্রশ্নপত্র সরিয়ে ফেলেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তোলপাড় শুরু হলে গ্রুপের অ্যাডমিন মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ দেন চৌহালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিযুক্ত ‘আমাদের চৌহালী গ্রুপে’র অ্যাডমিন মনিরুল ইসলাম চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়ার বাসিন্দা। বর্তমানে ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। গত দশ বছর থেকে গ্রুপটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
অন্যদিকে, ‘আমাদের চৌহালী গ্রুপে’ ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি নিয়ে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হলেও পরীক্ষায় প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন ইউএনও নিজেই।
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন চৌহালী থেকেই আপলোড করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো স্থান থেকে তা এখনও নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে।’
চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
‘আমাদের চৌহালী গ্রুপে’র অ্যাডমিন মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সানজিদা নামে একজন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে গ্রুপে এইচএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন পোস্ট করেন। পরে তিনি নিজেই তার পোস্ট ডিলিট করে দেন। সানজিদা নামের আইডিটি কার তা এখনও জানতে পারিনি। আইডি ভুয়াও হতে পারে। তবে, বিষয়টি বিব্রতকর।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, রাজশাহীর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বিকেল ৪টায় বলেন, ‘চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি ফেসবুক গ্রুপে এইচএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন আপলোড করার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এটি পরীক্ষার হল বা কেন্দ্র থেকে বা অন্য কোথা থেকে ঠিক কারা, কী উদ্দেশ্যে আপলোড করেছে বা তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানায়নি। পরীক্ষার হল বা কেন্দ্রের কেউ জড়িত থাকলে বোর্ড, অন্যথায় স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এতে পরীক্ষায় কোনও প্রভাবই পড়েনি।