Samakal:
2025-04-13@06:41:15 GMT

অপরিকল্পিত কৃষির দায়

Published: 13th, March 2025 GMT

অপরিকল্পিত কৃষির দায়

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরে সুপেয় পানি লইয়া যেই হাহাকার দৃশ্যমান, উহা মনুষ্যসৃষ্ট। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধান চাষে ভূগর্ভের পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারেই আলোচ্য সংকট তৈয়ার হইয়াছে। একই কারণে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য গভীর নলকূপেও পানি মিলিতেছে না। পুকুর-জলাশয়েও পানির সংকটে অনেককে সুপেয় পানি ক্রয় করিতে হইতেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে সুবর্ণচরের লক্ষ লক্ষ মানুষের এইরূপ দুর্ভোগ নেহাত দুর্ভাগ্য নহে। সুবর্ণচর রবিশস্যের উপযোগী হইলেও স্থানীয় কৃষকরা যেইভাবে ধান চাষে ঝুঁকিতেছে, উহা উদ্বেগজনক। ইহাতে পানি সমস্যা, তৎসহিত পরিবেশের অন্যান্য সংকট বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রহিয়াছে।

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুবর্ণচরে দুই যুগ পূর্বেও যথায় মাত্র ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হইত, এই বৎসর উহা ১৮ হাজার হেক্টরে উপনীত। এই ধান চাষে ব্যবহার হইয়াছে অর্ধকোটি কিউসেক পানি। যাহা উদ্বেগের, তন্মধ্যে ৭০ শতাংশ পানিই ভূগর্ভ হইতে উত্তোলন করিতে হয়। ধান চাষে ভূগর্ভের পানির ওপর অতিনির্ভরতার কারণে সুবর্ণচরের মানুষ খাবার ও গৃহস্থালিতে সুপেয় পানি হইতে বঞ্চিত। এমনকি ১২ শত ফুট গভীরেও পানি দুষ্প্রাপ্য। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এইরূপে বোরো আবাদ চলিতে থাকিলে ভূগর্ভের পানি আরও নিম্নগামী হইবে এবং ইহাতে মহাবিপর্যয়ও ঘটিতে পারে। এখন প্রশ্ন হইল, সেচে কেন ভূপৃষ্ঠের পানি কাজে লাগানো হইতেছে না? বিশেষজ্ঞরা জানাইয়াছেন, সুবর্ণচরে বৃহৎ খালগুলি ও লেক সেচের আওতায় আনিলে দুই লাখ হেক্টর পর্যন্ত জমি চাষ করা যাইবে; এমনকি কেবল মেঘনা লেক কাজে লাগাইলে ২০ কোটি কিউসেক পর্যন্ত পানি পাওয়া যাইতে পারে। 

আমরা মনে করি, কৃষি বিভাগের ভ্রান্ত নীতির কারণেই সুবর্ণচরে পানির হাহাকার তৈয়ার হইয়াছে। রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করিবার বিষয়ে বিধান থাকিলেও এই ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কার্যকর ভূমিকা পালন করিতেছে না কেন? উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলিয়াছেন, ভূগর্ভের পানি রক্ষা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের লক্ষ্যে তাহারা কৃষককে রবি মৌসুমে অন্যান্য লাভজনক ফসল চাষের পরামর্শ দিতেছেন। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি গভীর নলকূপের অনুমোদন দিতেছে কীরূপে? সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর না হইলে এই অবিমৃষ্যকারিতা চলিতেই থাকিবে এবং তাহাতে দীর্ঘ মেয়াদে উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটে পড়িবে। 

জরুরি হইল, সুবর্ণচরে বোরো ধান আবাদ নিয়ন্ত্রণ করা। ধান চাষ নিয়ন্ত্রণ করিলেই কেবল পানির সংকট হ্রাস পাইতে পারে। ইরি ধান চাষাবাদে কৃষককে নিরুৎসাহিত করিতে হইবে, যাহারা ভূপৃষ্ঠের পানি দিয়া চাষাবাদ করিবে, কেবল তাহাদেরই ধান চাষের অনুমোদন দেওয়া যাইতে পারে। বৃষ্টিসহ বর্ষায় ভূপৃষ্ঠের পানি সঞ্চয় করিয়া উহা কৃষিতে ব্যবহারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কৃষি বিভাগ গ্রহণ করিতে পারে। সুবর্ণচরে আমন ধান চাষে গুরুত্ব দিয়া শুষ্ক মৌসুমে রবিশস্য বিষয়েও তদারক করিতে পারে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তরমুজ, ডাউল, বাদাম, মরিচ, শীতকালীন সবজি, সরিষা প্রভৃতি রবি ফসলের মাধ্যমে কৃষকও যাতে অধিক লাভবান হইতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি। 

প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়া কিছু করিতে গেলেও উহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য। সুবর্ণচরে কীভাবে সময়ের আবর্তনে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান কৃষকের প্রধান ফসল হইয়া উঠিল, উহা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। ইহাতে কেবল কৃষকই দায়ী নহে; তাহাদের জন্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরারাও দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, সুবর্ণচরের বাস্তবতা অনুধাবন করিয়া বিপর্যয়ের পূর্বেই কৃষি বিভাগ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় সামরিক অভিযান বাড়ানোর ঘোষণা ইসরায়েলের

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে শিগগিরই ‘জোরালোভাবে’ সামরিক অভিযান বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটা রাফা ও খান ইউনিস শহরকে পৃথক করেছে।

এরই মধ্যে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে আকাশপথে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও হামাস কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় হামাসের ওপর আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে।

শনিবার কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, শিগগির গাজার আরও বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হামলা জোরদার করবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে। হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করে আনা এবং যুদ্ধের অবসানের এটাই শেষ মুহূর্ত।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য এটা।

এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, যা এখনো চলছে। নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গড় ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ