প্রতিটি গল্পের একটি গন্তব্য থাকে, যাকে বলা হয় পরিণতি। মহাভারতেরও গন্তব্য ছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে পক্ষ-প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনের সারিতে যারা ছিলেন, তাদের ঘিরে এগিয়েছে আখ্যান। এর বাইরে গল্পের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে নানা চরিত্র। অনেক চরিত্র আবার গল্পের প্রয়োজনে হারিয়ে গেছে। তবে কিছু চরিত্র না হারালেও পায়নি বিশেষ গুরুত্ব। তেমনি পাঁচ নারী চরিত্র নিয়ে মাহমুদুর রহমান লিখেছেন ‘পঞ্চকন্যা’।
হিড়িম্বা, সত্যবতী, সুভদ্রা, অম্বা ও গান্ধারী– এই বইয়ের প্রধান চরিত্র। প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এই পাঁচ নারীকে আলাদাভাবে উপস্থাপন বা পড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা পাঠক হিসেবে আমার বলা সাজে না। সেটি লেখকের বলাই শ্রেয়। লেখক ফ্ল্যাপে কিছুটা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘আধুনিক অগ্রসর যুগেও পুরাণের নারীকে দেখা হয় অবাস্তব চরিত্র হিসেবে। তাদের বাস্তবতা প্রকাশ এবং নারীর প্রত্যয় শক্তি ও মনের দ্বন্দ্ব নিয়েই এই বই।’
আর পাঠক যদি চরিত্রের স্বরূপ এবং সমাজ বাস্তবতা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারীর অভিযোজনের ক্ষমতা বুঝতে চান, তাহলে এই বইয়ের পাতায় চোখ বোলানো আবশ্যক।
গান্ধারীর মা সুধর্মা বলেছিলেন, ‘নারীকে এক জীবনকালে বহুবার জন্মগ্রহণ করতে হয়/ পরিস্থিতির সঙ্গে আপনাকে পরিবর্তন করার শক্তি পুরুষের নেই, নারীর মধ্যে তা বর্তমান।’
কিন্তু মায়ের বাক্য সত্য, না এই প্রকারে নানা সময় নারীকে চালনা করা হয়েছে পুরুষ আর চলমান ব্যবস্থার অধীনে? এমন প্রশ্নে জর্জরিত গান্ধারীর জীবন বিশদভাবে এনেছেন লেখক। তুলে ধরেছেন লোভের আড়ালে থাকা সত্যবতীর হৃদয়ের অনুশোচনা। শুরুটা করেছেন তার জন্মের ইতিহাস দিয়ে। যার গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে কুরুবংশের উত্থানে এবং এখানে লেখকের মুনশিয়ানা প্রকাশ পেয়েছে।
পঞ্চকন্যার গল্প বলতে গিয়ে লেখক হারাননি প্রকৃত পুরাণের পথ। একেকটা গল্পকে বরং তিনি অ্যাঙ্কর হিসেবে দাঁড় করিয়ে মহাভারতের মূল ঘটনাগুলো পাঁচ গিঁটে বেঁধেছেন। এতে মহাভারত না পড়া একজন নবীন পাঠকও বইটি পড়ে সহজে আঁচ করতে পারবেন এর মূল। বিশেষত সুভদ্রা চরিত্র নিয়ে যাবে আর্যাবর্তের ভবিতব্যে।
লেখকের আরেকটি মুনশিয়ানার জায়গা হলো শব্দচয়ন। এই পাঁচ কন্যা যে একুশ শতকের নারীদের গল্প নয়, সময়ের সেই ভাষাগত গাম্ভীর্য লেখক ধরে রেখেছেন, অথচ ব্যবহার করেছেন সরল কিছু শব্দ।
সেই সরলতা দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন হিড়িম্বার ইতিহাস, যার খোঁজ রাখেনি নগরবাসী। গহিন অরণ্যে যেমন সূর্যালোক পৌঁছায় না, তেমনি এই ভীমপত্নীর যাপন, ত্যাগ, যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনের গল্প এসে পৌঁছায়নি মানুষের নগরে। তবে অম্বার কথা সবার জানা, ‘প্রণয় কিংবা প্রতিশোধ– মনুষ্য তার নিমিত্ত কী না করে।’
এই বইটিতে রয়েছে অলংকরণও। পাঠক কল্পনায় যেমন চিত্রিত করবেন দৃশ্য, তেমনি মাঝেমধ্যে পেয়ে যাবেন চাক্ষুষ দৃশ্যও। অলংকরণের এই কাজটি করেছেন শিল্পী চন্দ্রিকা নূরানী ইরাবতী। সব মিলিয়ে ক্রাউন সাইজের এই বই একটি মহাভারতের পার্শ্বিক সংস্করণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলা যায়। এটি পড়ার পর, লেখকের হাত ধরে, পুরাণের আরো নারীকে জানার আগ্রহ জাগতে পারে পাঠকের মনে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, ক্লাস শুরু ৪ মে
সংঘর্ষের জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার রাতে কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া সভায় শিক্ষার্থীদের জন্য ২ মে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ৪ মে।
কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, সোমবার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানো নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি জানান, সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে থেকে শুরু এবং সকল আবাসিক হল ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে এতে সন্তুষ্ট হয়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের: তবে হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ৩টা থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের দাবি ছিল আজ সোমবার রাত থেকেই হল খুলে দেওয়ার। এছাড়া সিন্ডিকেট সভা শেষে তারা অপেক্ষা করছিলেন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো তাদের জানাবে। কিন্তু কেউ তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্তগুলো জানাননি। হল খোলা ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর অনেক দিন দেরি রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া হলে থাকতে না পারায় তাদের টিউশনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।