রেলিং নিশ্চিহ্ন, পাটাতন পুরোটাই ভেঙে গেছে। পাটাতনের একটি অংশে কাঠের তক্তা আড়াআড়ি বিছানো, বাকি অংশে গর্ত যেন হাঁ করে আছে। তবু এটি একটি সেতু।
সেতুটির অবস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম রহমতাবাদ মসজিদ সড়কে। শিয়ালখালের ওপর এই ভাঙা সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। চলাচল করতে গিয়ে এর আগে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সেতুটি নতুন করে নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে এলাকার মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।
পশ্চিম রহমতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো.
জেবল হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, চলাচলের জন্য নিজের অর্থায়নে এলাকাবাসী বারবার কাঠ বসিয়ে কোনোরকমে চলাচল করছে। কিন্তু কাঠগুলোও কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় এর ওপর দিয়ে একটি সাইকেলও চলাচল করা সম্ভব হয় নয়। ফলে এলাকার মানুষকে পাঁচ মিনিটের পথ এক কিলোমিটার ঘুরে মালপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন জানান, মসজিদ সড়ক দিয়ে মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম রহমতাবাদ, পূর্ব ইছাখালী গ্রামের কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অসুস্থ মানুষ প্রতিদিন এ সেতু বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছে।
স্থানীয় কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে আসতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। সেতুর ভাঙা অংশ দিয়ে এর আগে তিনটি গরু খালের মধ্যে পড়ে যায়। এ ছাড়া একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। সেতুটি নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে মো. মহিউদ্দিন ইউএনও বরাবরে গত জানুয়ারি মাসে একটি আবেদনও করেছেন।
মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিউজ্জামান মিলন জানান, সেতুটি নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি চলতি বছর নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী একটি আবেদন দিয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রস্তাব তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখানে টেন্ডার হলে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। ঈদের পরেই সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ র জন য এল ক ব স র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পাগলা মসজিদে এবার যত টাকা পাওয়া গেল
কিশোরগঞ্জ শহরের আলোচিত পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে ২৮ বস্তা টাকা গণনা করে এবার পাওয়া গেছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। এসব টাকা রূপালী ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সকাল ৭টায় দান বাক্সগুলো খোলার পর টাকা গণনা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম ও পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ আলীর উপস্থিতিতে দান বাক্সগুলো খোলা হয়। এতে দেশিয় মুদ্রার পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা এবং গহনা পাওয়া গেছে। টাকাসহ সকল দানের উপাদান ২৮টি সিনথেটিক বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় গণনার কাজ শুরু হয়। বিদেশি মুদ্রা ও গহনা পরবর্তী সময়ে মূল্য নির্ধারণ করে ব্যাংকে জমা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।
এর আগে সর্বশেষ গত বছর ৩০ নভেম্বর ১১টি দান বাক্সে পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা।
পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদাসার ৭৫ জন ছাত্র, ৪৫ জন শিক্ষক ও স্টাফ, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ১৯৪ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন স্টাফ টাকা গণনার কাজে অংশ নেন। নিরাপত্তায়য় প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ কর্মকর্তা, ১৪ সেনা সদস্য, ৩০ পুলিশ সদস্য ও ৯ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি তিন মাস অন্তর দানবক্স খোলার নিয়ম থাকলেও এবার রমজানের কারণে খোলা হয়েছে চার মাস ১২ দিন পর। দানবাক্সের বাইরেও মানতকারীরা বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর, দুধ এবং সবজিও দান করে থাকেন। এগুলো উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করে মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেছেন, দান বাক্সে পাওয়া টাকার লভ্যাংশ থেকে অসহায় জটিল রোগীদের অনুদান দেওয়া হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদরাসার এতিম ছাত্রের সমুদয় খরচসহ মসজিদ পরিচালনার খরচও মেটানো হয়। জমানো টাকা থেকে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের আরও দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের কাজও করা হবে।