ছাত্রদল কর্মীদের বিরুদ্ধে চবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ
Published: 13th, March 2025 GMT
তুচ্ছ ঘটনায় ছাত্রদলকর্মী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন আইইআর ভবন মাঠে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
প্রক্টর বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আজারুল ইসলাম বিপ্লব, অর্ণব সরকার, চারুকলার ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অঙ্কিতা বশাক, কনক কুমার চাকমা, মো.
অভিযোগপত্রে লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শাকিব ও আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কাপিলসহ মোট ৭-৮ জন মিলে এ হামলা চালায় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
আরো পড়ুন:
‘ওসিকে বলেন আসতে, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’
ছাত্রীকে ‘ধর্ষণচেষ্টার’ অভিযোগ: ছাত্রদল নেতাসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন আইইআর ভবন মাঠে শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল চলছিল। হামলার নেতৃত্ব দানকারী শাকিবের গলায় ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলের সেচ্ছাসেবক কার্ড ঝুলানো ছিল। এছাড়া হামলার কয়েকটি ফুটেজেও সাকিবের গলায় ছাত্রদলের কার্ড ঝুলতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগপত্রে বলেন, আমরা পুরাতন আইইআর ভবন প্রাঙ্গণে ইফতার করার জন্য যাচ্ছিলাম। বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা বাইক প্রচণ্ড জোরে আসে। আমাদের কারণে তাদের বাইক স্লো করতে হয়েছে। এজন্য তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও মারমুখি আচরণ করে।
এর একটু পর আমরা যখন ইফতার করতে বসি, তখন তারা বহিরাগতসহ কয়েকটা বাইক নিয়ে আসে। আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলেই অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা মেয়েদের গায়েও হাত তুলেছে। কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার কর্মী আশেপাশে থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি। উল্টো হামলাকারীদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় আমাদের ছবি ও ভিডিও নেয় এবং যাওয়ার সময় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ঘটনার বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, “আজ আমাদের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন। প্রোগ্রাম শেষে আমি তাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে সে ব্যাপারে খবর নিতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী আমাদের কেউ এখন পর্যন্ত মব জাস্টিসের মতো ঘটনায় যুক্ত হননি। এরপরেও আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব। কারো বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ পাই তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাইদ বিন কামাল চৌধুরী বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করেছি। এ নিয়ে আমরা প্রক্টরিয়াল বডিতে আলোচনা করব। অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল শ ক ষ বর ষ র ছ ত রদল র আম দ র ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা মাত্র
বাবেলের অধিবাসীরা যখন হজরত ইবরাহিমের (আ.) কথা কর্ণপাত করল না, শক্ত যুক্তিও মেনে নিতে রাজি হলো না, তখন তিনি দাওয়াত দেওয়ার ভিন্ন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন। তাদের মন্দিরে অনেকগুলো কাঠের দেবদেবী ছিল, এর মধ্যে একটি ছিল প্রধান দেবতা। তিনি পরিকল্পনা করলেন তার জাতিকে দেখাবেন এই প্রতিমাগুলো কত দুর্বল—নিজের শরীর থেকে একটি মাছি তাড়াবারও শক্তি এদের নেই।
একদিন বাবেলে ধর্মীয় মেলা হবে, লোকজন ইবরাহিমকে (আ.) সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। ইবরাহিম (আ.) আকাশের তারকার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি অসুস্থ।’ তিনি ঠিক মিথ্যা বলেননি, তার জাতির কুফরি কাজকর্মে তিনি আত্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারা তার কথা বিশ্বাস করে। (সুরা সফফাত, আয়াত: ৮৮-৯০) ইবরাহিম (আ.) আস্তে আস্তে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিমাগুলোর কায়দা করব।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৫৭)
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কখন পড়ব০৪ মার্চ ২০২৫এরপর তারা যখন চলে যায়, তিনি চুপি চুপি প্রতিমাগুলোর কাছে গেলেন। যাদের সামনে ছিল থরেথরে সাজানো ফলমূল আর সুস্বাদু খাবার। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি খাবে না? তোমাদের কী হয়েছে, কথা বলছো না কেন?’ (সুরা সফফাত, আয়াত: ৯১-৯৩) তিনি সজোরে মূর্তিগুলোর ওপর আঘাত হানলেন। কিন্তু বড় মূর্তিটাকে কিছু করলেন না, যেন ওটার ওপর সব দোষ চাপানো যায়।
লোকজন ধর্মমেলা থেকে ফিরে যখন মন্দিরের এই হাল দেখল, রেগেমেগে একদম বেহাল হয়ে হয়ে গেল। তারা বলল, ‘কে আমাদের দেবদেবীর এই অবস্থা করল? সে নিশ্চয় সীমালংঘনকারী। কেউ কেউ বলল, এক যুবককে দেখেছি এদের সমালোচনা করতে, তার নাম ইবরাহিম। তারা বলল, তাকে জনতার সামনে উপস্থিত করো, যেন তারা তাকে দেখতে পারে।’
ইবরাহিমকে (আ.) উপস্থিত করার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমিই কি আমাদের দেবদেবীদের এই হাল করেছ? ইবরাহিম (আ.) বললেন, ওই বড় দেবতাটাই এসব করেছে, ওটাকে জিজ্ঞেস করো, যদি কথা বলতে পারে!’
এ কথা শুনে তারা চিন্তায় পড়ে গেল। তারা একে অপরকে বলল, তোমরা দেবদেবীদের অরক্ষিত রেখে গেছ, তোমরাই বরং সীমালঙ্ঘনকারী। তারপর লজ্জায় তাদের মাথানত হয়ে গেল। তারা ইবরাহিমকে (আ.) বলল, ‘তুমি তো ভালো করেই জানো এরা কথা বলতে পারে না।’
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইবরাহিম (আ.) এই মন্তব্য শোনারই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করো, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক তোমাদের এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৫৯-৬৭)
মূর্তিপূজার অসারতার এমন স্পষ্ট প্রমাণের পর বাবেলের অধিবাসীদের উচিত ছিল এক আল্লাহয় বিশ্বাস করা, হজরত ইবরাহিমকে (আ.) নবী বলে মেনে নেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে ফন্দি আঁটতে থাকে কীভাবে মূর্তি ভাঙার প্রতিশোধ নেওয়া যায়, কীভাবে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া যায়।
আল্লাহর শরিয়ত কোনো প্রাণীকেই জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অনুমতি দেয় না, আর মানুষ তো সবচেয়ে সম্মানিত প্রাণী, তার বেলায় তো আরও আগে না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৩,৫৪২) কিন্তু কাফেরদের নীতিতে ইনসাফ নাই, মানবতা নাই, আছে কেবল পাশবিকতার জয়গান। আর তাই বাবেলের মূর্তিপূজারীরা সিদ্ধান্ত নেয়—এই যুবককে নিরস্ত করার একটাই উপায় আছে, আর তা হলো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা।
আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫