বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আছিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত
Published: 13th, March 2025 GMT
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আছিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতের বিভিন্ন সময়ে তারা এসব কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডি ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
রাত পৌনে ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে আছিয়ার গায়েবানা জানাজা আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজা শেষে কফিন মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন তারা।
গয়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
গায়েবানা জানাজা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “এ শিশুটির জন্য পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কোনো শিশু এভাবে হারিয়ে না যাক। দেশের বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হোক। আছিয়ার পরিবারকে আল্লাহ হেফাজত করুক। আমরা যার যার জায়গা থেকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াব।”
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, ‘তোমার বোন আমার বোন, আছিয়া আছিয়া’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্যা রেপিস্ট’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনীদের বিচার চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই’, ‘জুলাইয়ের বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ঢাবি শিক্ষার্থী মেঘলা বলেন, “আছিয়ার এ ঘটনার পর আমরা যে এত আন্দোলন করলাম, কী লাভ হলো? আজো রামপুরায় এক মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।”
শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন বলেন, “আছিয়া যুদ্ধ করতে করতে মারা গেছে, সেই লড়াইয়ে জিততে পারেনি। কিন্তু সেই লড়াইয়ের ভার আজ আমাদের উপর দিয়ে গেছে। আমরা যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছি, তার প্রথম দফায় ছিল ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আইনের প্রতি ততক্ষণ শ্রদ্ধা থাকবে, যতক্ষণ ওই আইন ন্যায়বিচার করতে পারবে।”
সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা যখন নারী নিপীড়নের বিচার চাইতে রাজপথে নামি, তখন আমাদেরকে ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। আমরা এমন বাংলাদেশ চায়, যেখানে আর কোনো আছিয়াকে ধর্ষিত হতে হবে না। আমরা আমাদের ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে দাবি জানিয়েছি, ধর্ষণবিরোধী একটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “সারা দেশে ধর্ষিত নারীদেরকে প্রমাণ দেওয়ার জন্য দুইটা ল্যাব রয়েছে। যার দুটোই ঢাকায়। তাহলে কখন এ ল্যাবে আলামত সংগ্রহ হবে, আর কখনই-বা বিচার হবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য আইনজীবীর হাতে ছেড়ে দেন। তারা এত কিছু বোঝেন না।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)
সন্ধ্যা ৭টায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বেরোবিতে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল থেকে তারা ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান, যাতে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য অপরাধ কেউ করার সাহস না পায়।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা একযোগে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানিয়ে বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। যাতে আর কোনো শিশুর ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট না হয়।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)
সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়ার গায়েবানা জানাজা আদায় করেছেন যবিপ্রবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেন তারা।
জানাজা শেষে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের মূল সড়ক হয়ে প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বিক্ষোভ-মিছিলটি শেষ হয়।
বিক্ষোভ-মিছিলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বোন আছিয়ার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। মাগুরার শিশু আছিয়ার ধর্ষকদের দ্রুত প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া ভবিষ্যতে ধর্ষকদের পাথর নিক্ষেপ করে শাস্তি দেওয়া হোক। আমরা চাই বাংলাদেশে এমন আইন বাস্তবায়ন করা হোক, যাতে দ্বিতীয়বার কেউ এমন অপরাধ করার আগে ভাবে।
ঢাকা/সৌরভ/সাজ্জাদ/ইমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চপাণ্ডব ‘অধ্যায়ের’ অম্লমধুর সমাপ্তি!
সাকিব আল হাসান নিজ থেকে কী আর ঘোষণাটা দেবেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক প্রকার ‘নির্বাসিত’ সাকিব। লাল সবুজের জার্সিতে আরেকবার তাকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। নামের পাশে তাই অবসর লিখে দিলেও ভুল হবে না কিছুতেও।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক আগের থেকেই ক্রিকেটে নেই। তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন নিকট অতীতে। মুশফিকুর রহিম সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ বাকি ছিলেন। দাঁড়ি টেনেছেন তিনিও। সাকিবের ঘোষণার এখন খুব একটার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাতে যা দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বহু প্রচলিত পঞ্চপাণ্ডব অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েই গেল।
মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ- বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যে অবস্থানে এসে পৌঁছেছে, তার শুরুটা তো ওই দিনেই হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহানসবার্গে বাংলাদেশের ম্যাচ। ৬৪ রানে ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশ একইসঙ্গে পেয়েছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম একইসঙ্গে দেশের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন প্রথমবারের মতো।
এরপর পদ্মা-মেঘনায় গড়িয়েছে অনেক জল, তার কোনো সীমা নেই। সময়ও অনেক চলে গেছে। সাফল্য দুহাত ভরে এসেছে, আবার রয়েছে ব্যর্থতার মিছিল। সবকিছুতেই জড়িয়ে আছেন এ পঞ্চপাণ্ডব। সময়ের ধারাবাহিকতায় তারা এখন খুলে রেখেছেন রঙিন জার্সি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘পাঁচক’-র কীর্তি খুব বেশি নেই। এর আগে ৬৪ ‘পাঁচক’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশে এবারই প্রথম।
কোনো সন্দেহ ছাড়াই পঞ্চপাণ্ডবের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড বহন করেছেন। ওয়ানডে, টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি রান করেছেন। মুশফিকুর রহিমও তাই। দেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। টেকনিক্যালি দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
মাহমুদউল্লাহ সব সময়ই ছিলেন বিশেষ ভূমিকায়। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ডেথ ওভারে বিগ হিটারের ভূমিকা পালন করছেন বছরের পর বছর। এ পাঁচের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাশরাফি ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। ঘরের মাঠে এবং দেশের বাইরে সাফল্যর রূপকার তো মাশরাফিই। মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণভাবে দলকে সামলেছেন মাশরাফি। অধিনায়ক থেকে হয়ে উঠেছেন নেতা।
পঞ্চপাণ্ডবের অনেক সুখস্মৃতি থাকলেও রয়েছে একাধিক আক্ষেপ। ২০১২ ও ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে নাটকীয় হার, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল (মাশরাফি ছাড়া) এবং ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল (সাকিব ও তামিম ছাড়া) আক্ষেপ হয়ে আছে তাদের কাছে। ২০১৯ সালের সাকিব, মুশফিক বাদে বাকিদের বিবর্ণ পারফম্যান্স কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
২০০৭ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত ১১১ ওয়ানডে তারা একসঙ্গে খেলেছেন। তাদের অধীনে দল জয় পেয়েছে ৫৪ ম্যাচে। হেরেছে ৫৩ ম্যাচ। ফল আসেনি ৪ ম্যাচে। পারফম্যান্সের বিচারে তারা সাফল্য-ব্যর্থতার অনুপাত ফিফটি-ফিফটি।
ঢাকা/ইয়াসিন