মাগুরায় ঘুমিয়ে গেল আছিয়া, জাগিয়ে গেল দেশ
Published: 13th, March 2025 GMT
মাগুরার সেই শিশুর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের কাজির পাড়া গ্রামের বাড়িতে। পরে পাশ্ববর্তী সোনাকুন্ডি গ্রামের গোরস্তানে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত পৌনে নয়টার দিকে দাফন সম্পন্ন হয়।
ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মাগুরার শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছায়।
আরো পড়ুন:
সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন
টেকনাফে যৌথ অভিযানে অপহৃত উদ্ধার, আটক ৩
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মরদেহ বহন করা হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মরদেহ বহন করা হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে
শিশুটির মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। পরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, “এটা রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখছে। কারণ এত ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটা কারো জন্য মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।”
‘আমার মেয়ের মতো কষ্টে তারেও দেখতে চাই’
ধর্ষণের ক্ষত নিয়ে কয়েক দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছে মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়া। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানায় সেনাবাহিনী। শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ মা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করেন হাসপাতালের মেঝেতে।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার মণি যেভাবে মরছে, আমার মণি যেভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে মরছে, আমি তারও (অপরাধীর) ফাঁস দিয়ে বিচার চাই। (তার) এরম মৃত্যু চাই আমি, আমার মণির যেমন বেলেড দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেসে, ঠিক সেরকম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ওরকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।”
রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার, ধর্ষকের বিচার নিশ্চিত করা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বামপন্থী সংগঠনগুলোর আয়োজনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই মিছিল হয়।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে মশাল হাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এরপর মোমবাতি হাতে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুতে শোক পালন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পুলিশ যা বলছে
মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো.
আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ
মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা হয়
এর আগে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিনগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবার জানায়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মারা যায় সে।
মাগুরা/শাহীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম র ম মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের বিধান নেই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের জোরালো দাবি উঠেছে। তবে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোন বিধান যুক্ত করা হয়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে একাট্টা। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় বছরের পর বছর তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে ছাত্র সংসদ না থাকায় দক্ষ নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না বলে ভাবছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংসদ গঠন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কণ্ঠ
কুবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রের চর্চা, সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার বিকাশ, ক্যাম্পাসের শান্তি বজায় রাখা, লেজুড়বৃত্তিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা।
উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেওয়ার প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইভা বলেন, “দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও নোংরা রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। বর্তমানে বলা হয়ে থাকে, কুবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। আদতে কতটুকু নিষিদ্ধ আমি জানি না।”
তিনি বলেন, “হয়তো আমার মতো অন্যরাও এমনটাই ভাবে! নির্বাচন হয়ে গেলেই দেখা যাবে ক্ষমতা আবার একটা পক্ষের কাছে কুক্ষিগত হয়ে যাবে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা হলে নেতৃত্বের দক্ষতা, সমস্যার সমাধান, ডেমোক্রেটিক প্রক্রিয়ার চর্চা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।”
থিয়েটার কুবির সাধারণ সম্পাদক হান্নান রহিম বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরাজনীতির কণ্ঠরোধ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না, তা বোঝার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই। তাদের থাকে হীন উদ্দেশ্য।”
তিনি বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোর আওয়াজ তোলা উচিত, এটা সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্ব সিলেক্ট করবে। এতে উঠে আসা নেতৃত্ব অধিকতর ছাত্রবান্ধব হবে, তারা কারো উপর বসগিরি-দাদাগিরি চালাবে না। হল-ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে নির্মল শান্তির জায়গা।”
কুবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে প্রশাসন থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি একটি সাংবিধানিক অধিকার। এটা বন্ধ হওয়া কখনো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারে না। কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ।
তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র সংসদের বিপক্ষে না। প্রশাসন যদি সব ছাত্র সংগঠনগুলোকে উন্মুক্তভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে ক্রিয়াশীল কোন ছাত্র সংগঠনকে যদি রুদ্ধ রেখে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হব।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ বছর ছাত্র সংসদ নিয়ে কেউ ভাবেনি। তবে এখন চিন্তা করতে হবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। অন্য যারা আছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে বসতে হবে।”
ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ যেমন, কুবির ছাত্র সংসদও তেমন হবে।”
ঢাকা/মেহেদী