মাগুরার সেই শিশুর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের কাজির পাড়া গ্রামের বাড়িতে। পরে পাশ্ববর্তী সোনাকুন্ডি গ্রামের গোরস্তানে দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত পৌনে নয়টার দিকে দাফন সম্পন্ন হয়।

ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মাগুরার শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছায়।

আরো পড়ুন:

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

টেকনাফে যৌথ অভিযানে অপহৃত উদ্ধার, আটক ৩

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মরদেহ বহন করা হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মরদেহ বহন করা হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে

শিশুটির মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। পরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, “এটা রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখছে। কারণ এত ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটা কারো জন্য মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।”

‘আমার মেয়ের মতো কষ্টে তারেও দেখতে চাই’
ধর্ষণের ক্ষত নিয়ে কয়েক দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছে মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়া। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানায় সেনাবাহিনী। শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ মা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করেন হাসপাতালের মেঝেতে।

এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার মণি যেভাবে মরছে, আমার মণি যেভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে মরছে, আমি তারও (অপরাধীর) ফাঁস দিয়ে বিচার চাই। (তার) এরম মৃত্যু চাই আমি, আমার মণির যেমন বেলেড দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেসে, ঠিক সেরকম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ওরকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।”

রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার, ধর্ষকের বিচার নিশ্চিত করা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বামপন্থী সংগঠনগুলোর আয়োজনে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই মিছিল হয়।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে মশাল হাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এরপর মোমবাতি হাতে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুতে শোক পালন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পুলিশ যা বলছে
মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো.

আলাউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “কেউ যদি ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টা করে বা এখন যেহেতু মারা গেছে, তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হত্যা সংক্রান্ত যে বিধান আছে, সে অনুযায়ী বিচার চলবে। সেভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে।”

আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ
মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা হয়

এর আগে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিনগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবার জানায়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মারা যায় সে।

মাগুরা/শাহীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম র ম মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে ২০ সংগঠনকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমঞ্চে তুলতে প্রশাসনের নিষেধ

‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ তুলে প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের সংগঠকদের কাছে এই তালিকা পাঠানো হয়। পরে ফোন করে তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোকে আগামীকাল সোমবারের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার জন্য বলা হয়।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া স্মারকলিপিতে এই সংগঠনগুলোকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের বিষয়ে জাসাস চট্টগ্রামের সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ (শিপন) প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসররা নববর্ষ অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি। ডিসিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা নববর্ষের অনুষ্ঠান করতে পারবে না।’

সংগঠনগুলোর মধ্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, খেলাঘর, রক্তকরবী, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ড্যান্স, ঘুঙুর নৃত্য একাডেমি অন্যতম।

ডিসি হিলে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে প্রায় ৫৫টি সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে। শুরু থেকে ডিসি হিলে অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়েও দেনদরবার করতে হয় অনেক। এখন নতুন করে ২০টি সংগঠনকে বাদ দিতে বলায় বিপাকে পড়েছেন আয়োজকেরা।

সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার আমাকে একটা তালিকা পাঠান। পরে ফোন দিয়ে বলা হয় এই সংগঠনগুলোকে মঞ্চে তোলা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তারা নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর।’

সুচরিত দাশ আরও বলেন, ‘স্টাফ অফিসারকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি কোনো সংগঠনকে বাদ দিতে আমরা পারব না। প্রয়োজনে ডিসি হিলের অনুমতি বাতিল করে চিঠি দিয়ে দিক আমাদের। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে মঞ্চে তুলব না। কিন্তু সংগঠন বাদ দিতে পারব না।’

জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার মো. ইস্রাফিল জাহান তালিকা পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক ভালো বলতে পারবেন।

সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটি, রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজ থেকে কিছু সংগঠনের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তাদের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও হয়েছে। তাদের একটি তালিকা আয়োজকদের দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা উদীচী কীভাবে ফ্যাসিস্টের দোসর হলো এমন এক প্রশ্নে শাহীদ ইশরাক বলেন, ‘আসলে বিষয়টা বিব্রতকর। আমরা নানামুখী ঝামেলায় আছি।’

তবে বর্ষবরণের অপর অনুষ্ঠান সিআরবির শিরীষতলার আয়োজকদের কাছে কোনো সংগঠনের তালিকা পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে। এই সংগঠনগুলোর অনেকে ওখানেও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে ২০ সংগঠনকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমঞ্চে তুলতে প্রশাসনের নিষেধ