রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও মারধরের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ২
Published: 13th, March 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও তাঁর সহপাঠীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রীর সহপাঠী। মামলার পর বিকেলে অভিযুক্ত দুজনকে নগরের রাজপাড়া থানার হর্টিকালচার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো.
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ক্যাম্পাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাজলা গেট দিয়ে ছাত্রাবাসে ফিরছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী। এ সময় বহিরাগত তন্ময় ও তাঁর সহযোগীরা ছাত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করলে তন্ময় মারার জন্য তেড়ে আসেন। ওই ছাত্র বাধা দিলে তন্ময় ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের ওপর চড়াও হন। এ সময় ছাত্রকে মারধর করা হয় এবং ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সহায়তায় ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর পোশাক নিয়ে মন্তব্য ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পেনাল কোডে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের বিচার দাবিতে আজ দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। কর্মসূচি থেকে দ্রুত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানানো হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার শিশুটির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা-কফিনমিছিল
মাগুরায় আট বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে গায়েবানা জানাজা পড়েছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে এই জানাজা হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
গায়েবানা জানাজা শেষে একটি প্রতীকী কফিনমিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। এ সময় ‘জাস্টিস জাস্টিস/ উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই/ ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের নেতারা বক্তব্য দেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘সার্বিকভাবে দেশের নারী নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। যখনই নারী নিরাপত্তা নিয়ে রাস্তায় নামতে যাবেন, সব সময়ই কোনো না কোনো ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। এই ইস্যুগুলো নিয়ে যখন রাস্তায় নামার চেষ্টা করি, কথা বলার চেষ্টা করি, তখন যেন একটা ভয়, একটা ভীতি সবার মধ্যে কাজ করে।’
শিশুটির ধর্ষক ও হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, শুধু মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় অনেক শিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সেগুলো খবরের কাগজে আসে না। তিনি বলেন, তাঁরা এমন বাংলাদেশ চান, যেখানে ধর্ষণের শিকার কোনো শিশুর জন্য প্রতিদিন রাস্তায় নামতে হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা এই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন এবং সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার শিশুটি আজ আর নেই। কিন্তু তার সেই হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করার পবিত্র দায়িত্ব আপনার ও আমার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন বলেন, মাগুরার শিশুটির ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড দেখতে চাই। এর বাইরে আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখতে চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী নিকিতা নাওয়ার বলেন, শিশুটির ধর্ষকদের বিচার যেন খুব দ্রুত সময়ে কার্যকর হয়। আসামির ফাঁসি হতেই হবে। পরবর্তী সময়ে যেন আর ধর্ষণ না হয়, তার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
এ সময় কলেজ শিক্ষার্থী মাইশা মাহা বলেন, ‘আর কত রাস্তায় দাঁড়ালে আমাদের বোনেরা নিরাপদে এই রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবে, এর জবাব কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিতে পারবে?’ নারীদের হেনস্তা, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে মাইশা মাহা বলেন, ‘স্বাধীন রাষ্ট্রে আমরা এখনো পরাধীন। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচার চাইতে হচ্ছে।’