শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া বালুবাহী নৌযান (বাল্কহেড) থেকে দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ডুবুরিদের সহায়তায় উপজেলার মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। সন্ধ্যায় তাঁদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজে ব্যবহৃত বালুবাহী একটি নৌযান মঙ্গলবার গভীর রাতে নদীতে ডুবে যায়। তখন ওই নৌযানে দুই শ্রমিক ঘুমিয়ে ছিলেন। লাশ উদ্ধার হওয়া শ্রমিকেরা হলেন নড়িয়ার নাওপাড়া ইউনিয়নের খালাসিকান্দি এলাকার বারেক সরদারের ছেলে আল আমিন সরদার (৩৭) ও পিরোজপুরের নাজিরপুরের মধ্য লেবুজিল বুনিয়া এলাকার মোস্তফার ছেলে আরিফ মিয়া (২৬)।  

শরীয়তপুরের সুরেশ্বর নৌপুলিশ ফাঁড়ি সূত্র জানায়, জাজিরার কুন্ডেরচর থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধ শক্তিশালী করতে বাঁধের পাশে নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে নড়িয়ার মুলফৎগঞ্জ এলাকায় কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। পরে সেটি আরেকটি নৌযানের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ রশি ছিড়ে নৌযানটি ডুবে যায়। তখন নৌযানে দুই শ্রমিক ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁরাও নৌযানটির সঙ্গে তলিয়ে যান।

বুধবার সকাল থেকে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও পাউবোর লোকজন দুই শ্রমিককে উদ্ধারে অভিযান শুরু করেন। শ্রমিকদের স্বজনেরাও বেসরকারি ডুবরি দল দিয়ে আজ সেখানে অভিযান চালান। ওই ডুবুরি দলের সদস্যরা বিকেল পাঁচটার দিকে ডুবে যাওয়া নৌযান থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করেন। পরে স্বজনদের কাছে লাশ দুটি হস্তান্তর করে নৌ পুলিশ।

সুরেশ্বর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুর জব্বার বলেন, বালুবাহী নৌযানটি ডুবে যাওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, দুই শ্রমিক আটকা পড়েছেন। তারপরই তাঁরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। আজ বিকেলে ডুবুরিরা নৌযানের ভেতর থেকে তাঁদের লাশ দুটি উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পরিবার চাইলে মামলা করতে পারেন। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

শরীয়তপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধের শক্তিশালীকরণের কাজ চলছে। সেই কাজের ঠিকাদার নৌযানে করে বালুভর্তি জিও এনেছিলেন। বালু পরিবহনের একটি বাল্কহেড মঙ্গলবার গভীর রাতে হঠাৎ পদ্মায় ডুবে যায়। ওই নৌযানে আটকে পড়া দুই শ্রমিকের লাশ আজ উদ্ধার হয়েছে। তাঁরা যেকোনো প্রযোজনে ওই দুই শ্রমিকের পরিবারের পাশে থাকবেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরার সেই শিশুটির মৃত্যুর পর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি

মাগুরায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন সেই শিশুটিকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটায় মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকেরা। শিশুটির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাড়িতে মাতম চলছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

আজ দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ও ছোট বোন বাড়িতে আছেন। মা ও বড় বোন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় আছেন। শিশুটির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর শিশুটির বাবা  মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করছেন, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না৩ ঘণ্টা আগে

শিশুটির চাচা (বাবার ফুপাতো ভাই) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ দুপুরে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। এলাকার গোরস্থানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

শিশুটির আরেক আত্মীয় বলেন, ‘ওর বাবা নির্বাক হয়ে গেছে। সকাল থেকে কিছু খাননি। তাঁকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না। লোকজনের ভিড়ে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

বাড়িতে ভিড় করা এলাকাবাসী ও স্বজনেরা বলছেন, দুপুরের পর তাঁরা শিশুটি মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শিশুটির সঙ্গে এতটাই নির্মমতা হয়েছে যে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, এরপর আর চেতনা ফেরেনি। তাঁরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর ১০ মার্চ ২০২৫

এর আগে বেলা একটায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ সকালবেলা দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তাঁর হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ বেলা একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

আরও পড়ুনমাগুরার শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন, এক দিনে চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’১৫ ঘণ্টা আগে

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। সেদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্‌! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’০৯ মার্চ ২০২৫

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তাকে সিএমএইচের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

এর আগে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মাগুরার এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনা চলছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক০৮ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনবোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শিশু ‘ধর্ষণের’ শিকার, ২৪ ঘণ্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি ০৭ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরার সেই শিশুটির মৃত্যুর পর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি
  • রাজশাহীতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত