প্রলয় গ্যাং সদস্যের হাতে নির্যাতিত শিক্ষার্থীই পাল্টা মামলার আসামি
Published: 13th, March 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত প্রলয় গ্যাং সদস্যের হাতে নির্যাতনের শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলভী আরসালানই উল্টো সেই গ্যাং সদস্যদের করা মামলায় আসামি।
এছাড়া ওই ছাত্রের মা এবং তার বান্ধবীকেও আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে তার মা কারাগারে এবং তিনি ও তার বান্ধবী গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলভী আরসালন এবং তার পিতা অধ্যাপক ডা.
আরো পড়ুন:
আছিয়ার মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক
ঢাবির এএফআর হলে নিম্নমানের ইফতার পরিবেশনের অভিযোগ
২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রলীগ কর্মীদের তৈরি কথিত প্রলয় গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষার্থী মীর আলভী আরসালান। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসালটেন্ট ডা. রেহানা আক্তার। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া ঢাবি কর্তৃপক্ষ কয়েকজন অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।
চলতি বছর গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ওই ঘটনায় উল্টো ডা. রেহেনা, তার সন্তান আলভী এবং সেদিন আলভীর সঙ্গে থাকা এক বান্ধবীর নামে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে আছেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন এবং তাহমিদ ইকবাল মিরাজ। তারা তিনজনই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, প্রলয় গ্যাং সদস্যদের সেই মামলায় ডা. রেহেনাকে গ্রেপ্তার করে কয়েকদিনের মধ্যে আরো কয়েকটি মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে ডা. রেহেনা কারাগারে আছেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীর পিতা ডা. মীর মোশাররফ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে আমার দুই ছেলে সম্মুখযোদ্ধা ছিল। ছোট ছেলে পুলিশের ছররা গুলিতে আহতও হয়েছে। আমি আমার ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছি।”
তিনি বলেন, “গত ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার ছেলে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে বসে থাকার অপরাধে ছাত্রলীগের কথিত প্রলয় গ্যাং সদস্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মামলা করলে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ করে আমাদের অবগত করা ছাড়াই মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। এরপর আমরা আপিল করি।”
তিনি আরো বলেন, “এই আপিল করার অপরাধে আসামিরা আমার স্ত্রী, সন্তান এবং তার বান্ধবীর নামে মামলা দেয়। অথচ সেদিন তারা ছিল ৯-১০জন। আর বিপরীতে ছিল শুধু আমার ছেলে ও তার বান্ধবী। তারাই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। এখন তাদের মামলায় আমাদের আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশও কোন তদন্ত ছাড়াই মামলা গ্রহণ করেছে।”
ডা. মীর মোশাররফ বলেন, “গত ৪ ফেব্রুয়ারি চেম্বার থেকে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। আর আমার ছেলে এবং তার বান্ধবিকে খুঁজতে বাসায় যায় পুলিশ। এখন তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাসায়ও থাকতে পারছে না। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমার স্ত্রীকে কোর্টে তোলা হলে আদালাত জামিন দেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৪ আগস্ট গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায়।”
ডা. মীর মোশাররফ আরো বলেন, “এর কয়েকদিন পর বংশাল থানায় করা ৫ আগস্টের আরেকটি হত্যা মামলায়ও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখায়। অথচ গত ২৮ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আমার স্ত্রী হাসপাতালের সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙে বাসায় বেডরেস্টে ছিল। যার সত্যতা নিশ্চিত করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আমার স্ত্রীর অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করেছে।
“এছাড়া ৪ আগস্ট গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি এই ঘটনায় ১৪৪ ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। সেই তালিকায়ও আমার স্ত্রীর নাম নেই। সে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য উপকমিটির সদস্য হওয়ার অপরাধে এই মিথ্যা মামালাগুলো দিয়েছে। বর্তমানে সে কোনো উপকমিটির সদস্যও না,” যুক্ত করেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের পুরোটা সময় সে আওয়ামী লীগের কোন সভা সমাবেশে পর্যন্ত অংশ নেয়নি। বরং আন্দোলন চলাকালে সন্তানদের গ্রাফিতি আঁকাসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ সহায়তা দিয়েছে, কখনো আন্দোলনে যেতে বাধা দেয়নি। যে কথাটা সন্তানরা ৩ আগস্ট যমুনা টিভির এক সাক্ষাৎকারে বলেছেও। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকাও দিয়েছে আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়াতে।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাই আন্দোলনই মানুষকে মাপার একমাত্র টেস্ট। সেই আন্দোলনে আমাদের পরিবার অংশগ্রহণ করেও আজ মিথ্যা মামলায় আমার স্ত্রীকে জেল খাটতে হচ্ছে আর সন্তানকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার বিষয়।”
ভুক্তভোগী আলভী আরসালান বলেন, “বইয়ে পড়েছি, ১৯৭১ সালে মায়েরা নাকি ছেলেদের মাথায় পতাকা বেঁধে যুদ্ধে পাঠাতো। সেটি আমি অনুভব করেছে এ জুলাই অভ্যুত্থানে। আমার আম্মুর পা ভাঙা থাকায় নিজে আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতে পারলেও নিজের দুই ছেলেকে মাঠে নামিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এখন আমার মা জেলে, আমরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। আমাদের আন্দোলন ছিল ন্যায়বিচারের জন্য। অথচ এখন আমরাই অন্যায়ের শিকার হচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী ও যুগ্ম সদস্য সচিব মাহবুবুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
ওমর ফারুক বলেন, “জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উনারা ছিলেন না। উনি, ওনার স্বামী ও ছেলে এ আন্দোলনে সহযোগিতা করেছেন। এভাবে হয়রানি মামলা দেওয়ার পিছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিত। পুলিশকে বলবো, আপনারা মামলা দেবেন পর্যাপ্ত তদন্ত ও প্রমাণ সংগ্রহ করে। ছবি থাকলেই মামলা দেওয়া তো ফ্যাসিস্ট আমলে চরিত্র।”
অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলার আসামি এবং পাল্টা মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, “এই অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের করা মামলাটাই সত্য। ডা. রেহেনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। সে সময় পুলিশ আমাদের কোনো কথা শুনেনি। তাই আমরা এখন মামলা করেছি।”
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “হলে থাকতে হলে সবাইকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়েছে। সেভাবেই আমরা ছিলাম।”
মামলার বিষয়ে জানতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেছিলেন, “যাদের আসামি কথা হয়েছে, সেই মা ও ছেলে ফ্যাসিস্টের দোসর।”
এ সময় তিনি এই সংবাদদাতার হোয়াটসঅ্যাপে ডা. রেহেনার সঙ্গে আওয়ামীলীগের কয়েকজন এমপি মন্ত্রীর গ্রুপ ছবি পাঠান এবং ছেলে আলভীর একটি স্ক্রিনশট পাঠান। সেখানে দেখা যায় আলভী একজন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এ কয়েকটি ছবি ২০২৪ সালের শুরুর দিকের ও তার আগের বছরের।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর আম র স ত র ক ম র ম শ ররফ আম র ছ ল আম দ র সদস য আগস ট আরস ল তদন ত ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
খামারবাড়িতে বদলি ঘিরে উত্তেজনা
রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদের বদলিকে কেন্দ্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ কিছু কর্মকর্তা গেটে তালা ঝুলিয়ে বদলি বাতিলের দাবি জানান।
মাহবুবুর রশীদকে মেহেরপুরের বারাদি হর্টিকালচার সেন্টারে উপপরিচালক পদে বদলির প্রজ্ঞাপন বৃহস্পতিবার জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপপরিচলক (আমদানি) মো. মুরাদুল হাসানকে। বদলির প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন কিছু কর্মকর্তা। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. মুরাদুল হাসানের ২০৭ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কয়েকজন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন। বদলি বাতিল না হলে তারা খামারবাড়ি অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এ বিষয়ে মো. মুরাদুল হাসান বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাব।
প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পরিচালক মো. হাবিবউল্লাহ্ বলেন, সরকারি চাকরিতে বদলি-পদায়ন স্বাভাবিক নিয়ম। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর থাকব।
এদিকে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বলেন, তারা গেটে তালা দেননি। বদলির প্রজ্ঞাপনের পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মাহবুবুর রশীদ বিএনপিপন্থি হওয়ায় আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাঁকে প্রশাসন উইংয়ে পদায়ন করা হয়। এখন বদলি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন না।