জামায়াতকে নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্য মিথ্যা: গোলাম পরওয়ার
Published: 13th, March 2025 GMT
‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ বলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের করা মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি আশা করেন, মাহফুজ তাঁর ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহফুজ আলমের বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক অসৎ অভিপ্রায় থেকে অথবা কোনো অপশক্তির ইন্ধনে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপরিণামদর্শী আকাঙ্ক্ষা থেকে হতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল এই নিন্দা প্রতিবাদ জানান। মাহফুজ আলমের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সেখানে বলেন, ‘আমি তাঁর এই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যে বিস্মিত।’
গতকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ বলে মন্তব্য করেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল দলীয় বিবৃতিতে বলেন, ‘মাহফুজ আলম জামায়াত সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও অসত্য বক্তব্য দিয়ে একটি প্রতিবেশী দেশের গুপ্তচর কারাবন্দী শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন। তাঁর স্মরণ রাখা উচিত যে তিনি একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা। সে কারণে কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে সমালোচনা ও অসত্য বক্তব্য দেওয়ার কোনো নৈতিক ও বিধিগত অধিকার তিনি রাখেন না। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে রাজনীতির ময়দানে এসে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন।’
মাহফুজ আলমের বক্তব্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাহফুজ আলমের জানা থাকার কথা, শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে যুদ্ধাপরাধের জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তাতে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জামায়াতের কারও সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে শেখ মুজিব নিজেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দিয়েছিলেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করে গেছেন। জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েই নাগরিকত্ব ফিরে পান।
বিগত সরকারের একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্যাঙারু কোর্ট বসিয়ে জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল এবং তাদের দলীয় লোকদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে জামায়াত নেতাদের যে বিচার করেছিল, তা দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে যে বিচার করা হয়েছে, তা ছিল বিচারের নামে একটি প্রহসন। এমনকি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে হাসিনা সরকারের ওই বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জামায়াতের আকিদার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টির উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আহলে সুন্নত আল জামায়াতের পূর্ণ অনুসারী। জামায়াতের আকিদার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ অবান্তর ও এখতিয়ারবহির্ভূত।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আশা করি আমাদের এই বক্তব্যের পর তাঁর (উপদেষ্টা মাহফুজ) মনের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং তাঁর ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ পর ধ র সহয গ গ ল ম পরওয় র র জন ত ক উপদ ষ ট সরক র র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার: জামায়াত
দুর্নীতি, বৈষম্যমুক্ত এবং বিনিয়োগবান্ধব দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নিয়ে দলটি এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্মেলনের আয়োজন করে। পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কথা বলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে পারলে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে, সবার ত্যাগ এবং স্বপ্ন স্বার্থক হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সুশাসন, সততা, নিষ্ঠা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক নীতি প্রণয়ন করে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। প্রকৃতি, নদী ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, এগুলোর আধুনিকায়ন করা হলে এবং সময়ক্ষেপণ না হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়ন, টেক্সটাইল, কৃষি, কেমিক্যাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। চায়না চেম্বার অব কমার্সের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামীর স্টল পরিদর্শন করেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের নকশিকাঁথাসহ অন্যান্য সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশসহ বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে খোলামেলা আলোচনা ও মতবিনিময় হয়। এদিন চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা জামায়াত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেন। তারা বিভিন্ন উদ্বেগের কথা জানান।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন– বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিজনেস বিভাগের সহসভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম রাজু, সেক্রেটারি ড. আনোয়ারুল আজিম ও সদস্য মাসুদ কবির।