ঢাবিতে শিশুটির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত
Published: 13th, March 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনায় নিহত শিশুর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজ পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেকুল ইসলাম। এরপর কফিন নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে আসেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর অনুষ্ঠান শেষ হয়। 'ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ' এ গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে।
আজ বেলা একটার দিকে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট বছরের শিশুটি।
জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুটির মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এই ভয়াবহ হত্যার বিচার হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুটির জন্য পুরো জাতি দোয়া করছেন। তার মৃত্যু এই ক্রান্তিকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। আর কোনো শিশু যেন হারিয়ে না যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা আইন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তার মতো আর কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমাদের বোনের হত্যার ন্যায়বিচার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। তার ধর্ষণ ও খুনের বিচার মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষকের সাহায্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ষণকে কেবল শারীরিক শ্লীলতাহানি হিসেবে নয়, হত্যার সমপরিমাণ নিকৃষ্ট অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, যে পরিমাণ নিপীড়ন শিশুটির উপর হয়েছে, তাতে তার বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হয়েছে শিশুটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এ ঘটনার বিচার হতে হবে। আমরা এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ সময় ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১.
২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
৪. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।
এ দিকে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, আছিয়া হত্যার বিচারসহ একাধিক দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি নীলক্ষেত হয়ে হলপাড়া ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলের পুর্বে তারা শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।
মশাল মিছিলে লড়াই লড়াই লড়াই চাই- লড়াই করে বাঁচতে চাই, শিশু হত্যাকারীদের- বিচার করো করতে হবে, খুন ধর্ষণ হয়নি শেষ- রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, আমার বোন মরলো কেন- রাষ্ট্র জবাব চাই, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার- অপসারণ করতে হবে, খুন ধর্ষণ যেখানে- লড়াই হবে সেখানে, খুন ধর্ষণ নিপীড়ন- রুখে দাও জনগন, হামলা মামলা হুলিয়া- নিতে হবে তুলিয়াসহ একাধিক স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।
মিছিল শুরুর পূর্বে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আজ শিকার হয়ে আমাদের বোনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর সাথে আমরা কেউ প্রতারণা করবো না। এই স্বরাষ্ট্র পদত্যাগ করিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ করবো। একথা বলছি এজন্য যে, যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না তার এই পদে থাকার কোনো দরকার নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ ৮ বছরের শিশুটি মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শিশুটির বোনের স্বামী, স্বামীর ভাই এবং স্বামীর মায়ের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৭ দিন হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পর ১৩ মার্চ সম্মিলিত সামরিক হাসতাপালে মৃত্যবরণ করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত আম দ র অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীকে বিদায় বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন স্বামী
স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে বিদায় বলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খায়রুল বাসার সুজন (৩৫) নামের এক পোশাকশ্রমিক। পরক্ষণে স্ত্রী শুধু চলন্ত ট্রেনের শব্দ শুনতে পান। পরে একাধিকবার কল দিলেও সাড়াশব্দ মেলেনি। ঘটনাটি ঘটে আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশন এলাকায়।
নিহত সুজন কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কুরশা গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে উপজেলার চন্নাপাড়া গ্রামের জনৈক সুলতানের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
স্থানীয়রা জানান, আজ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকাগামী দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন তিনি। এ সময় চলন্ত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় তার। দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীপুরের স্টেশনমাস্টারকে জানানো হয়।
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘সকালে একসঙ্গে বাসা থেকে বের হই। পরে আর বাসায় ফেরেনি। বিকেলে কোথায় আছে জানতে ফোন করি। তখন তিনি জানায়, শ্রীপুরে। একটু পর ফোন করে শুধু বলে, বিদায়। তখন আমি শুধু ট্রেনের শব্দ শুনতে পাই। এরপর বারবার ফোন করলে সে ফোন ধরেনি। সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার খবর পাই। ঘটনাস্থলে এসে স্বামীর মরদেহ দেখতে পাই। আমাকে বিদায় বলে সে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছে।’
শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার শামীমা জাহান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।