আশুলিয়ায় তিন দিনে তিন শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলায় আসামি স্বজনেরা
Published: 13th, March 2025 GMT
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমানী বেগম (ছদ্মনাম)। জীবিকার তাগিদে কাজ নেন আশুলিয়ার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। তবে স্বামী বাসায়ই থাকেন, সঙ্গে থাকে আসমানীর আগের সংসারের দুই মেয়ে। এর মধ্যে ১৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আসমানীর স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী কিশোরীর মা আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসমানীর দ্বিতীয় স্বামীকে (৪০) গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই ব্যক্তির বাড়ি ফরিদপুরে।
আশুলিয়া থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে গত তিন দিনে তিনটি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছর। প্রতিটি মামলায় আসামিরা ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য কিংবা নিকটাত্মীয়। তিনটি মামলায় দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যিনি ধর্ষণ করেন, তিনি একদিনে ধর্ষক হয়ে ওঠেন না বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে পরিবারের সদস্য রয়েছে। পরের পর্যায়ে রয়েছে নিকটাত্মীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে পরিচিত লোক। একদম অপরিচিত লোকের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা খুবই কম। যিনি ধর্ষণ করেন, তিনি একদিনে ধর্ষক হয়ে ওঠেন, এমন নয়। এ মনটা তাঁর তৈরি হয় ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে। ধর্ষণের আগে একজন ধর্ষককে নারীদের হেনস্তা বা উত্ত্যক্ত করা, যৌন নিপীড়ক ও ইভটিজার হতে হয়।
ধাপে ধাপে ধর্ষক হয়ে ওঠার এই বিষয়টির ওপর নজর দিতে হবে উল্লেখ করে রেজওয়ানা করিম আরও বলেন, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকায় থাকে। সিনেমাগুলোয় দেখানো হচ্ছে চাইলেই একটা মেয়েকে শিস দেওয়া যায়, ওড়না ধরে টান দেওয়া যায়, যখন–তখন তার হাত ধরে ফেলা যায়। কিন্তু নারী বা পুরুষ কারও গায়ে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে যে সম্মতি লাগে, এই ভাষা এখনো আমরা শিখতে শুরু করিনি। যদি এই শিখনপ্রক্রিয়ার মধ্যে না ঢুকি, তাহলে আমরা ধর্ষণ থামাতে পারব না। গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে গণসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত কাজ করতে হবে।’
১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী ধর্ষণের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসমানী বেগম (ছদ্মনাম) দিনের বেলায় কাজে গেলে দুই মেয়েকে তাঁর দ্বিতীয় স্বামী দেখাশোনা করতেন। প্রায় এক বছর আগে বড় মেয়েকে (১৪) হত্যার হুমকি দিয়ে প্রথমবার ধর্ষণ করেন তিনি। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কৌশলে ওই কিশোরীকে আবার ধর্ষণ করেন তিনি। গতকাল বুধবার পারিবারিক বিষয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদে সৎমেয়েকে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন ওই ব্যক্তি। ভুক্তভোগী কিশোরীও বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরে প্রতিবেশীরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে আশুলিয়া থানা–পুলিশকে বিষয়টি জানান। আজ ভুক্তভোগী কিশোরীর মা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা দায়ের করলে সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে ১০ বছরের সৎমেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল দিবাগত রাতে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলা হয়। ভুক্তভোগী শিশুর মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ১০ বছর আগে তাঁর প্রথম স্বামী ক্যানসারে মারা যান। তিন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। একপর্যায়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে সাভারের একটি আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। গত রোববার রাতে সৎবাবা (৪০) ঘুম থেকে ডেকে তুলে মেয়েকে (১০) ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। শিশুটির চিৎকারে বাসার অন্যরা সেখানে গেলে ওই ব্যক্তি শয়নকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। সকালে তিনি কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় গতকাল দিবাগত রাতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিশুর মা।
এদিকে আশুলিয়ার আরেকটি এলাকায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মঙ্গলবার মামলা হয়েছে। শিশুটির বাবার করা মামলায় আসামি হয়েছেন দূরসম্পর্কের চাচা (১৯)। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিশুটি মা–বাবার সঙ্গে আশুলিয়ায় থাকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে আসেন শিশুটির এক চাচা (বাবার মামাতো ভাই)। গত সোমবার সকালে শিশুটির মা–বাবা দুজনই বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে বের হয়ে যান। তখন শিশুটিকে ধর্ষণের পর ওই তরুণ (১৯) পালিয়ে যান। পরে শিশুটির বাবা আশুলিয়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে গতকাল কেরানীগঞ্জ থানার বনগ্রাম এলাকা থেকে ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব–৪, সিপিসি–২ ও র্যাব–১০–এর সদস্যরা।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর য য় প রথম ব ষয়ট আসম ন ঘটন য় গতক ল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী-টেন্ডারবাজি শিবিরের আদর্শে নেই: নুরুল ইসলাম
শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, হল দখল, টেন্ডারবাজি- এসব শিবিরের আদর্শে নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভ ভবনের মিলনায়তনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, “১৯৭৭ সাল থেকে শিবিরের ব্যাপারে গুম, খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। রগকাটার মতো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন মানুষ সচেতন, শিবিরের কারিকুলাম ও আদর্শ বর্তমান প্রজন্মকে আকর্ষণ করছে।”
বস্তুবাদী শিক্ষাকে ধর্ষণের অন্যতম কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, “নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পরিবর্তে শুধু বস্তুবাদী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ফলে শত আন্দোলনেও এ সমাজ থেকে কখনও নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ কমবে না। সমাজের মোরাল স্টান্ডার্ড নির্ভর করে শিক্ষার উপর।”
শেকৃবি শাখা শিবিরের সভাপতি আবুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান নাঈমের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি এইচ এম সালাউদ্দিন, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল, শেকৃবির কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ।
এসময় শেকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন (২৪ ব্যাচের) শিক্ষার্থীদের মাঝে পবিত্র কোরআন শরীফ বিতরণ করা হয়।
ঢাকা/মামুন/মেহেদী