‘৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই’
Published: 13th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার সাথে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। সবকিছু সাচিবিক প্রক্রিয়ার করা হয়েছে। তিলকে তাল বানানো হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার কাগজ কেনা হয়েছে, অথচ বলা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এটা হাস্যকর।’’
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
সালাউদ্দিন তানভীর বলেন, ‘‘এনসিটিবিতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপানো হয়। এর আগে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তাদের দোসর বন্ধু রাষ্ট্র থেকে খুবই নিম্নমানের বই ছাপিয়ে নিয়ে আসতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশেই উন্নত মানের কাগজে বই ছাপানো হবে। যখন এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছিল; এ সময়ে কিছু কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমাদের। তখন যে সমস্ত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছিল, সেই সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ি।’’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর জনআকাঙ্ক্ষার দল জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ অভিযোগ। আমি নাগরিক পার্টির একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমার দ্বারা এ ধরনের কোনো একটা কার্য সম্পাদন হবে, এটা হতেই পারে না। যখনকার অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, তখন আমাদের দল গঠনই হয়নি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে স্পষ্ট করতে চাই, আমিও মানহানির মামলা করেছি, বাংলাদেশের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও এ ব্যাপারে জানেন যে কীভাবে কী হয়েছে। কীভাবে সিন্ডিকেটের হাত থেকে পাঠ্যপুস্তক উদ্ধার করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সবাই যেহেতু জানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও বলবো। আপনার আপনাদের জায়গা থেকে প্রতিবেদন দেবেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার বিরুদ্ধে যদি এক পয়সারও লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি নিজের ইচ্ছায় এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবো। আইন অনুযায়ী শাস্তি মাথা পেতে নেব।’’
এদিকে, ভুয়া ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ এনে সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারসহ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন গাজী সালাউদ্দিন তানভীর।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আগামী রবিবার আদেশের দিন রেখেছেন।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার ফাঁদ
ফরিদপুর সদর উপজেলায় একটি পরিবারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে প্রবাসীসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে অর্থ ওঠানো হলেও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় কোনো বাস্তব উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। প্রস্তাবিত মাদ্রাসার জন্য এখনও এক ছটাক জমিও কেনা হয়নি, এমনকি কোনো ব্যাংক হিসাব নম্বরও খোলা হয়নি। শুধু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলে টাকা তোলার একটি কার্যক্রমই দৃশ্যমান!
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মীর ইন্তাজ আলী ও তাঁর তিন ছেলে মো. ইব্রাহীম আলী, ইয়ামিন আলী ও ইয়াসিন আলী। যে মাদ্রাসার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানের নাম ‘দারুল কুরআন মীর ইন্তাজ আলী মাদ্রাসা’। সরেজমিন ওই মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইন্তাজ আলীর ভাতিজা মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির নামে ২০২১ সাল থেকে তাদের এই অভিনব প্রতারণা শুরু হয়। মাদ্রাসার কথা বলে এ পর্যন্ত চারটি ওয়াজ মাহফিল করা হয়েছে। মুফতি আমির হামজাও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন। প্রতি ওয়াজেই মাহফিলের মাঠ থেকে মাদ্রাসার নামে লাখ লাখ টাকা ওঠানো হয়েছে। এমনকি প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
কল্পিত মাদ্রাসার নামে গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ ইন্তাজ আলী বা তাঁর ছেলেরা মাদ্রাসার নামে তোলা অর্থের বিষয়ে কারও কাছেই হিসাব দেননি। মাদ্রাসার জন্য এক ছটাক জমিও কেনেননি।
ইন্তাজ আলীর প্রতিবেশী ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ মোল্লা বলেন, ইন্তাজ আলী ও তাঁর ছেলেরা একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসার নাম দিয়ে প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিল করেন। তাদের বক্তব্য ছিল, এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করবেন। তারা প্রতিবছর অর্থ সংগ্রহ করেন কিন্তু মাদ্রাসার জন্য কিছু করেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. মিলু বলেন, ওই মাদ্রাসার দৃশ্যমান কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো কিছুই নেই।
অভিযোগ অস্বীকার করে মীর ইন্তাজ আলী বলেন, ইসলামের অগ্রগতির জন্য তিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে মাদ্রাসার নামে কোনো অর্থ সংগ্রহ করা হয়নি।
ইন্তাজ আলীর ছেলে ইয়ামিন আলীর ভাষ্য, এটি একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ইন্তাজ আলীর আরেক ছেলে প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহীম আলী বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান এ.কে.এম বাশারুল আলম বাদশা বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওই পরিবার প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা নিজেরা কোটিপতি হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা না করে আর কোনো ওয়াজ মাহফিল তারা আয়োজন করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা ইউএনও ইশরাত জাহান বলেন, এখনও তাঁর কাছে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।