প্রতারকচক্রের তৈরি করা ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামক মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের কথা বলে ৮৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীতে মামলা হয়েছে। সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বুধবার (১২ মার্চ) রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আদালতের বিচারক মামলাটি চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী সাইফুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর উপরভদ্রা এলাকায়। তার আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার মামলার আবেদন করার পর বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটি চন্দ্রিমা থানার ওসিকে তদন্তের জন্য দিয়েছেন।

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের বাংলাদেশ প্রধান সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদী হাসান (৩৩), কান্ট্রি লিডার মোতালেব হোসেন ভুঁইয়া (৩৫), রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), সোহাগের স্ত্রী ও রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমাতুজ জহুরা মিলি (৩২), রাজশাহীর এজেন্ট মিঠুন মণ্ডল (৩৬), ওয়াজেদ আলী খেবির (৬০), মোজাহার আলী (৫৫) ও মো.

ওবাইদুল্লাহ (৪৩)।

আরো পড়ুন:

সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী নিহত
হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি সাবেক মেয়র মিজান

‘ওসিকে বলেন আসতে, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’

তাদের মধ্যে সজীব কুমার ভৌমিকের বাড়ি নোয়াখালী। মোতালেবের বাড়ি লক্ষ্মীপুর, ওবাইদুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। বাকি আসামিদের বাড়ি রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায়।

মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বিনিয়োগ করেছিলেন ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া মামলার সাক্ষী জাকির হোসেন ১২ লাখ, শারমীন সুলতানা ২০ লাখ, তাহেরুল ইসলাম ৬ লাখ, রাজীব সাহা ১৭ লাখ, আনোয়ার হোসেন ৮ লাখ ও আশরাফুল রহমান ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। হাতিয়ে নেওয়া মোট টাকার পরিমাণ ৮৭ লাখ।

মামলার আরজিতে বলা হয়, আসামিরা প্রতারক। তারা ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামের একটি মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে প্রতি এক লাখ টাকার জন্য মাসে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা আসতে থাকবে।

প্রতারকচক্র তাদের একটি সেমিনারে ডাকেন। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা ওই সেমিনারে গেলে তাদের বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর তারা আসামিদের হাতে বিনিয়োগের টাকা তুলে দেন। তখন তারা মোবাইলে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপ চালু করে দেন, কিন্তু এতে কখনো কোনো মুনাফা আসেনি। কথা ছিল, যে কোনো সময় বিনিয়োগকারীরা মূল টাকা তুলে নিতে পারবেন কিন্তু তারা সেই টাকাও তুলতে পারেননি।

এভাবে তারা প্রতারণার শিকার হন। হঠাৎ গত ২১ ফেব্রুয়ারি আসামি ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ, ফাতেমাতুজ জহুরা মিলি, ওয়াজেদ আলী খেবির ও মিঠুন মণ্ডলের সঙ্গে বাদী সাইফুল ইসলামের দেখা হয়। এ সময় তিনি টাকা ফেরত চাইলে তারা তা দেবেন না জানিয়ে দেন। ভবিষ্যতে টাকা চাইলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও তারা হুমকি দেন। ফলে তিনি এ মামলা করেন।

আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় জানান, ২০২৪ সালের শুরুতে রাজশাহীর আদালতে এ সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল। এরমধ্যে নতুন একটি মামলা হলো। আগামী ২৯ এপ্রিল এ মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ রয়েছে।

ঢাকা/কেয়া/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউএস অ য গ র ম ন ট ব ন য় গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আমাকে হয়রানির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: টিউলিপ

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। দুদকের করা একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এ অভিযোগ করেছেন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনার শাসন আমলের নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুদক। তার অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গতকাল রোববার টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার একটি আদালত।

আজ সোমবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা “মিডিয়া ট্রায়াল” চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনো এর জবাব দেয়নি।’

টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে তাঁকে প্রত্যর্পণের জন্য এক দেশ আরেক দেশের কাছে আবেদন করতে পারে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ ‘২বি’ প্রত্যর্পণ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত। এর অর্থ প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ও বিচারকদের সামনে অবশ্যই স্পষ্ট প্রমাণ তুলে ধরতে হবে।

আরও পড়ুনতারিক সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক ও সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু১৫ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনপদত্যাগ করেছেন টিউলিপ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, তিনি একক ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। আর গতকাল রোববার টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বলেছেন, দুদক বিগত কয়েক মাসে ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে’ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন অভিযোগ’ এনেছে।

বিবিসির নজরে আসা এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড বলেছেন, ‘অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা এবং টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা সেগুলো লিখিতভাবে মোকাবিলা করছেন।’

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। এ তদন্ত করা হচ্ছে ববি হাজ্জাজ নামে একজনের ধারাবাহিক অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সদস্য।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা, রেহানা, টিউলিপ, রাদওয়ানসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা১৩ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনটিউলিপের বিরুদ্ধে জাল সই ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের অভিযোগ১৪ মার্চ ২০২৫

বিবিসির নজরে আসা আদালতের নথি অনুযায়ী, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় সহায়তা করেন টিউলিপ সিদ্দিক। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশে একটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এর আগে বিবিসিকে বলেছিলেন, অভিযোগগুলোয় কোনোভাবেই কাউকে ‘নিশানা’ করে করা হয়নি এবং সেগুলো ‘ভিত্তিহীন নয়’। ‘দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে’ তদন্ত করা হচ্ছে।

দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশের আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকা ঠিক হবে না। আমি টিউলিপ সিদ্দিককে (বাংলাদেশে) এসে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো আইনি সহায়তা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য স্বাগত জানাব।’

আরও পড়ুনগুলশানে বিলাসবহুল ভবনের বাসিন্দার তালিকায় ছিল টিউলিপের নাম০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনলন্ডনে টিউলিপের ব্যবহৃত সেই ফ্ল্যাট কেনা হয় অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে১২ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনলাইন জুয়া ও বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন বন্ধে রিট
  • সাবেক দুই এমপি-আইজিপি-ওসি রিমান্ডে
  • ১১ আসামিকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ
  • ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে আইন সমিতির মানববন্ধন ও পথযাত্রা কর্মসূচি
  • একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামিন পেলেন এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল
  • আদালতের ভেতরে পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক
  • ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’ স্লোগানে মুখর আদালতপাড়া 
  • অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে
  • আমাকে হয়রানির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: টিউলিপ
  • ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবার হবে