খুলনায় বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান মনির বিরুদ্ধে তার সৎ ভাইয়ের স্ত্রীকে মারধর ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলার আবেদন করেছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রণয় কুমার দাস আবেদনটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। হাফিজুর রহমান খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর। 

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী রুবেল খান জানান, আগামী ২০ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের ভুক্তভোগী বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আমার ভাশুর হাফিজুর রহমান আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে আমাকে মারধর করেন। আমি চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে তিনি দ্রুত চলে যান। আমি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমি সোনাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করি। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান বলেন, পারিবারিক বৈঠকে অবাধ্যতা এবং খারাপ ব্যবহার করায় অভিভাবক হিসেবে আমি তাকে দুটি চড় দিয়েছি। এটা আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনেই ঘটেছে। আদালতে যেসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, তা আমার জন্য লজ্জাকর।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ হ ফ জ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ