বন্দরে চাঁদা না দেয়ায় জামায়াত নেতার ভাইয়ের দোকানে তালা
Published: 13th, March 2025 GMT
বন্দরে দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে জামায়াত নেতার ছোট ভাইয়ের দোকানে তালা ঝুঁলিয়ে দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মোজাম্মেল গং এর বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বন্দর থানার সোনাকান্দা চৌধুরীপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা কাজী মামুন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসলে ওই সময় পুলিশ রহস্য জনক কারনে অভিযোগটি গ্রহন করেনি বলে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা জানিয়েছে।
বিভিন্ন তথ্য ও জামায়াত নেতা কাজী মামুন আরো জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বন্দর থানার সোনাকান্দা চৌধুরীপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ মুন্সী ছেলে জামায়াত নেতা কাজী মামুনের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম (৩৯) এর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সজিব ও রুপালী আবাসিক এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলী ছেলে অহিদগং।
এর ধারাবাহিকতা গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে উল্লেখিত চাঁদাবাজদের দোসর সোনাকান্দা চৌধুরীপাড়া এলাকার নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল ও তার ছোট ভাই আলাউদ্দিন, একই এলাকার মৃত সোবহান আলী ছেলে মিন্টু ও নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিনসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জন সন্ত্রাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছোট ভাই আমিনুল ইসলামের দোকান তালা ঝুঁলিয়ে দোকানের সাটারের মধ্য স্টিকার যুক্ত সাইনবোর্ড স্থাপন করে দোকানটি দখলের পাঁয়তারা করে।
পরে বিষয়টি লোক মারফতে জানতে পেরে এ ব্যাপারে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসলে পুলিশ অভিযোগটি গ্রহন করেনি। আমি ন্যায় বিচারের আশা বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বন্দরে কর্মরত গনমাধ্যমকর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে থানায় আসলে ওই সময় তাকে থানায় পাওয়া যায়নি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ জ ম য ত ইসল ম ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে ১৫ জুলাই হামলা: ৭০ শিক্ষক ও ছাত্রলীগের ১২২ শিক্ষার্থী শনাক্ত
জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় তথ্যানুসন্ধান কমিটি ৭০ জন শিক্ষকের প্রমাণ পেয়েছে, যারা নানাভাবে হামলায় ইন্ধন জুগিয়েছেন-উস্কানি দিয়েছেন। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা খুঁজে পেয়েছে কমিটি। এছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ১২২ শিক্ষার্থী হামলায় প্রত্যক্ষ জড়ান।
আজ বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে এই প্রতিবেদন জমা দেন তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্যরা। এরপর সাংবাদিকদের প্রাথমিক খুঁটিনাটি তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক বিভাগের আইন সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ। প্রতিবেদনে হামলার ঘটনায় মাত্র ২৫ শতাংশ তারা তুলে আনতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছি। বহিরাগত অনেকেও হামলায় জড়িয়েছে। বিশেষত মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদেরকে বাস থেকে নামাচ্ছে এবং পেটাচ্ছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বিশেষত মেয়েগুলোকে ধরে ধরে পেটানো হচ্ছে। একজন মেয়ে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল, তার হাত ধরে রেখেছে, এটা তো শ্লীলতাহানীর পর্যায়ে পড়ে।
হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে মাহফুজুল হক বলেন, ১৫ জুলাইয়ের হামলা ছিল পুরোটাই পরিকল্পিত। সেখানে দুইটি গ্রুপ ছিল সাদা ক্যাপ পরিহিত; একটি গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে, আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে। হামলায় সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পাওয়া গেছে। আগে থেকে পরিকল্পনা না হলে এভাবে সম্ভব না।
কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের ফটকের এবং জরুরী বিভাগের ভেতরেও হামলা হয়েছে। ডাক্তারদের চিকিৎসা না দিতে বলা হয়েছে। সেসব ভিডিও আমরা পেয়েছি।
প্রতিবেদনে কমিটি জানায়, হামলার নিকৃষ্টতম দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং হাসপাতালে গিয়েও হামলা করা হয় এবং ডাক্তারদের চিকিৎসাপ্রদানে বাধা প্রদান করা হয়। এটিকে তারা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
আহ্বায়ক আরও বলেন, যারা হামলায় বেশি নৃশংসতা দেখিয়েছে, তারা অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তার ৬ বছরে অনার্স শেষ করার কথা, অথচ ১১ বছরে ধরে অনার্স চলছে। কীভাবে? অনেক ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তারা হলে ছিল। কীভাবে ছিল? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মাহফুজুল হক বলেন, যারা হলপাড়ায় শিক্ষার্থীদের মেরেছে, তারাই মলচত্বরে পেটাচ্ছে, তারাই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পেটাচ্ছে। এরা ওই শিক্ষার্থী, যারা অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে।
সুপণ বলেন, সেদিন মেয়েদেরকে টার্গেট করে মারা হয়েছে। মেয়েদের ওপর হামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও (ছাত্রলীগের)। এসব হামলায় প্রশাসন অবগত থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে প্রশাসনের নেগলিজেন্সের (অবহেলা) প্রমাণ পেয়েছি আমরা।
কমিটির আহ্বায়ক আরও বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কিছু জানেন না। ১৬ তারিখ বাইরে থেকে বাস এনে মুহসীন হলের মাঠে রাখা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা দেখেনি। মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ করানো হয়েছে, হলের কর্মচারীরা প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের ফোন দিয়েছে। তারা ফোন ধরেননি। এখানে শুধু অবহেলা হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়, হয়তো তারা এসব জানতো। জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মাহফুজুল হক বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। আমাদের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে, উপাচার্য বা প্রশাসনের কেউ উঁকিও দেননি। কোনো মন্তব্য করেননি। পরবর্তীতে কোনো ব্যবস্থাও নেননি।
প্রায় ৭০ জন শিক্ষক হামলা উস্কে দেওয়ার ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে কমিটি প্রধান বলেন, আমরা তদন্তে দেখেছি- যারা আন্দোলন করছে, তাদেরকে ‘পাকিস্তানের দালাল’, ‘শিবিরকর্মী’ বা ‘ছাত্রদল কর্মী’- বলে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন এসব শিক্ষকরা। ছাত্ররা এসব পোস্ট প্রিন্ট করে আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। সেসব শিক্ষকরাও এমন কথা স্বীকার করেছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এই প্রতিবেদনে হামলা ও সহিংসতার কতটুকু কাভার করা হয়েছে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরও শনাক্ত করার সুযোগ আছে। তবে আমরা মনে করি, ২৫ ভাগ তুলে আনতে পেরেছি আমরা।
সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে মাহফুজুল হক বলেন, আমরা ব্যক্তিগত ভিডিও সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আমরা সিসিটিভির ফুটেজ পাইনি। প্রত্যেক হলের হার্ডড্রাইভ খুলে নিয়ে গেছে। ভিসি চত্বরের হার্ডড্রাইভে আমরা কিছু পাইনি। অনেক জায়গায় ক্যামেরা এমনভাবে লাগানো, কেবল গাছ দেখা যায়।
প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া সংবাদ সংক্ষেপে সত্যানুন্ধান কমিটি জানায়, হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছিল তার সঙ্গে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কন্টেন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বিচার বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন গ্রহণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটে তোলা হবে। এরপর তদন্ত কমিটি ও ট্রাইবুনাল গঠনসহ আইনি প্রক্রিয়াগুলো হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হামলায় প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী আহত হন।