নেদারল্যান্ডসে দুই দিনের বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শনী শুরু ১৭ এপ্রিল
Published: 13th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের শিল্প খাতের সাফল্যগাথা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে আবারও হতে যাচ্ছে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ সম্মেলন ও প্রদর্শনী।
আমস্টারডামের অন্যতম আইকনিক ভেন্যু বেয়ার্স ভ্যান বারলেজে আগামী ১৭ এপ্রিল ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ শুরু হবে। এতে বাংলাদেশের আট শিল্প খাতে অর্ধশত প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। তারা নিজেদের উদ্ভাবনী পণ্য, টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার ক্ষেত্রগুলো প্রদর্শন করবে। এতে দেড় হাজারের বেশি দর্শনার্থী অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন আয়োজকেরা।
দ্বিতীয়বারের মতো বেস্ট অব বাংলাদেশ আয়োজন করছে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই)। এই আয়োজনে সহায়তা করছে পিডিএস লিমিটেড, সিটি ব্যাংক ও কেডিএস গ্রুপ। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই সম্মেলন ও প্রদর্শনী আয়োজনে সহযোগিতা করছে। বিএইর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
আয়োজকেরা জানান, দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া প্যানেল আলোচনা এবং ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হবে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও পরিবর্তিত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেবে।
এবারের প্রদর্শনীতে ফোরএ ইয়ার্ন ডাইং, ব্রেইন স্টেশন ২৩, বিগাইট গ্রুপ, বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস, সিটি ব্যাংক, সেন্ট্রোটেক্স, সাইক্লো, ডেলমাস অ্যাপারেলস, ডিজাইনার ফ্যাশন, ফকির গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, নিট এশিয়া, লেদারিনা, ম্যাপড ইন বাংলাদেশ, নুরিশ ফিডস, নোইজ জিন্স, প্যাডকস জিন্স, প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড, পিডিএস, প্যাসিফিক নিটেক্স, প্যারাগন গ্রুপ, রিভার্স রিসোর্স, রাইজিং গ্রুপ, শিন শিন অ্যাপারেলস, শাঙ্গু টেক্স, তুর্জ টেক্স, টারাঙ্গোসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, শিল্পের উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক এবং বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ একটি দুর্দান্ত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রদর্শনী, নেটওয়ার্কিং সেশন ও প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রধান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরবে এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই আয়োজন ইউরোপীয় ভোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে তৈরি মানসম্মত পণ্য ও অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো জানার সুযোগ করে দেবে।
২০২৩ সালের ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর আমস্টারডামের গ্যাশউডার ওয়েস্টারগাস ভেন্যুতে প্রথম বেস্ট অব বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার পোশাক-বস্ত্র, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স ট অব ব ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
রৌদ্রকরোজ্জ্বল বৈশাখী দিন ফিরে এল আবার। সুরে-বাণীতে, সাজসজ্জায়, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উল্লাসে আজ সোমবার বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’
বাংলা নববর্ষের চেয়ে বড় কোনো সর্বজনীন উৎসব দেশে আর নেই। এ কারণে মানুষে মানুষে মহাপ্রাণের মিলন ঘটানোর বর্ষবরণের এই উৎসব গভীর তাৎপর্যময় হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য তাই ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয়ভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। উৎসব অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ছায়ানট।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে। এই শোভাযাত্রার যে মোটিফগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে
২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি শনিবার ভোররাতে কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরও তাদের শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্যভাবেই পথে নামবে পয়লা বৈশাখ সকালে।
পয়লা বৈশাখের উৎসব গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল, তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার প্রতিবাদে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব উদ্যাপিত হয়। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট প্রথমবারের মতো আয়োজন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। কালক্রমে বর্ষবরণ উৎসবে যুক্ত হয় আরও অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলার শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য করে তোলে আয়োজন। বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ষবরণ বহু প্রাণের বিপুল উৎসবে পরিণত হয়।
বাংলা বর্ষবরণের উৎসব যত আড়ম্বর, উৎসাহের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়, ব্যবহারিক জীবনে বাংলা সনের প্রয়োগ তেমন ব্যাপক নয়। প্রাত্যহিক জীবনের কাজকর্ম, শিক্ষা, ব্যবসা—সবই গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে বাংলা দিনপঞ্জি পুরোপুরি অব্যবহৃতও নয়। কৃষকেরা চাষাবাদ, ফসল রোপণ, ফসল তোলার ক্ষেত্রে বাংলা সনের হিসাব অনুসরণ করেন। অনেক ধর্ম সম্প্রদায়ও তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে। কাজেই সমাজে নানা ক্ষেত্রে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রয়োগ রয়েছে। সে কারণে নতুন বছর শুরু হলে নতুন প্রত্যাশা নিয়েই মানুষ তাকে বরণ করে নেয়।
নতুন বছরকে বরণ করার রীতি পৃথিবীর বহু দেশের সংস্কৃতিতে বহমান। আমাদের দেশে বছরের পয়লা দিনটিকে কেন্দ্র করে এই উৎসবে তুলে ধরা হয় দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। রাজধানীতে রমনার বটমূলে এবার ৫৮তম বারের মতো ছায়ানট আয়োজন করবে তাদের বর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবীতে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রায় দুই ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে সকাল ৬টায় শুরু হবে সহস্রকণ্ঠের গানে গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল নয়টায়। আগেই জানানো হয়েছে, এবার শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকগুলো নিয়ে অংশ নেবেন। শোভাযাত্রাটি টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে।
সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হবে বিসিকের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে তিনটা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে থাকবে একক ও দলীয় আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেলা তিনটা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চলবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য ড্রোন শো।
এসব প্রধান অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক এলাকাভিত্তিক এবং বহুতল আবাসিক ভবনগুলোতে ছোট ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বরাবরের মতো ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে অনেক সংগঠন শহর ঘুরে সংগীত, আবৃত্তি পরিবেশন করবে।
রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রবাসী বাঙালিরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব অনুষ্ঠানের সঙ্গেও দেশবাসীর এক রকমের সংযোগ ঘটে। এমন নানা আয়োজন উদ্যোগের ভেতর দিয়ে কালক্রমে বাংলা নববর্ষের উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। প্রসারিত হচ্ছে বিপুল পরিসরে।