জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে পরিকল্পিতভাবে গবেষণা রিপোর্টে নাম্বার কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন, জাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আশীষ কুমার দত্ত। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন, একই বিভাগের মো.

রবিন হোসেন।

জানা গেছে, জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রজেক্ট/রিচার্স রিপোর্ট কোর্স বাধ্যতামূলক। এটি দুই ক্রেডিটের একটি মূল্যায়নভিত্তিক কোর্স, যেখানে প্রথম পরীক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে বিভাগের অন্য একজন শিক্ষক নম্বর প্রদান করেন।

আরো পড়ুন:

লাকি আক্তারের গ্রেপ্তার দাবিতে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

‘জাবিয়ানদের সাথে গণইফতার’

বিভাগের বনপ্রাণিবিদ্যা গবেষক শিক্ষকদের মধ্যে দুইটি গ্রুপ রয়েছে। একটি আওয়ামীপন্থি গ্রুপ, যার নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও জুলাই হামলায় অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান। তাদের মধ্যকার দ্বন্দের প্রভাব পরীক্ষার ফলাফলের ‍ওপর পড়ে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. রবিন হোসেন জানান, তিনি ওয়াইল্ডলাইফ ব্রাঞ্চের অধ্যাপক ড. মনিরুল হাসান খানের অধীনে তার গবেষণা রিপোর্ট সম্পন্ন করেন। কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে মনোনীত আওয়ামীপন্থি গ্রুপের আশীষ কুমার দত্ত ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ফেল করানোর জন্য অত্যন্ত কম নম্বর দেন। পরবর্তী ধাপে তৃতীয় পরীক্ষকও একই গ্রুপের হওয়ায় তিনিও তার নম্বর বাড়াননি।

তিনি বলেন, “আমি বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার ও উপাচার্য স্যারের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। আমার গবেষণা রিপোর্ট অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যয়ন করা হোক। যদি আমার অভিযোগ মিথ্যা হয় মেনে নেব, অন্যথায় এ বৈষম্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।”

প্রাপ্ত গ্রেডশিট অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী অন্যান্য সকল বিষয়ে ভালো ফল করলেও শুধু রিসার্চ রিপোর্ট কোর্সে ‘ডি’ (২.০০) পেয়েছেন। তার অন্যান্য বিষয়গুলোতে তিনি ‘এ+’ (৪.০০), ‘এ’ (৩.৭৫) এবং ‘বি+’ (৩.২৫) পেয়েছেন, যা স্পষ্টতই তার সাধারণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, অন্য গ্রুপের শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করায় এটার প্রভাবে বিপরীত গ্রুপের শিক্ষকরা আমার ভাইভাতে সর্বনিম্ন নাম্বার দিয়েছিলেন। যা আমার অন্য কোর্সের সঙ্গে কোনভাবেই সমঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের বলি সর্বদাই শিক্ষার্থীরা হয়, এটা খুবই নিন্দনীয়। এসব শিক্ষক একাডেমিক ও নৈতিক দিক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।

অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক আশীষ কুমার দত্তের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মানছুরুল হক বলেন, “এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না, কখন পারব তা বলা মুশকিল। অফিসে এসে দেখা করেন।” এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র য় পর ক পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে অধ্যাপক মুহসিনকে অব্যাহতি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, মুহসিন উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক, যিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের একজন। তাঁকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া সম্পূর্ণ অনিয়ম ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ আল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন আমাদের পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ব্যক্তিগত আক্রোশপ্রসূত। তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন, তখন অব্যাহতি দেওয়া যেত। এখন দেওয়া মানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা।’

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আতিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের শিক্ষককে যদি মূল্যায়ন করা না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

প্রসঙ্গত, ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসরসহ নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট সভা চলছিল। সভায় উপস্থিত না থেকে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ