আজ থেকে দশ বছর আগে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্বের ৬০টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যার অবস্থান ছিল আঠারোতম। পনেরো বছর মেয়াদি এই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে; বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা, শিশু ও পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার কমানো, মাতৃমৃত্যু হার কমানো, টিকা গ্রহণের পরিধি বাড়ানো, সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো ইত্যাদি পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য। এমডিজির আটটি অভীষ্টের মধ্যে শুধু ৭ নম্বর অভীষ্ট অর্থাৎ ‘পরিবেশগত টেকসইতা’ বাদে বাকি সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যপক সফলতা অর্জন করে। দশ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, ‘বাংলাদেশ এমডিজি (২০০১-২০১৫) অর্জনে উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যতম বড় সাফল্যগাথা।’
পরে বিশ্বব্যাপী ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ অর্জনের জন্য ১৫ বছর মেয়াদি (২০১৬-৩০) নতুন পদক্ষেপ শুরু হয়। ‘টেকসই উন্নয়ন’ হলো এমন একটি সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র, যার মূল লক্ষ্য গণমানুষের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে সহনশীল রেখে অদূরভবিষ্যতে মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে রাখা। বিশ্বায়নের এই ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি)’ প্রত্যাশিত ফলাফল এমন একটি বসবাস উপযোগী সমাজ, যেখানে গণমানুষের জীবনমান ও নানাবিধ সম্পদের সুষম ব্যবস্থাপনা এবং স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন না করে মানুষের চাহিদা পূরণ করে। টেকসই উন্নয়ন মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে গৃহীত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ফলে যেন প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে অর্থাৎ প্রকৃতিকে ঠিক রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা হয়। টেকসই উন্নয়ন শুধু পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়; বরং সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নও এর আওতাভুক্ত।
সময়ের প্রয়োজনে এবং বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতেই বাংলাদেশ সরকার এসডিজির অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে। সংগত কারণেই এসডিজির পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নেতৃত্বে শুরু হয় এসডিজি কর্মকৌশল। সরকারের পাশাপশি মূলত বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নের ফলে এনজিওগুলো প্রথম সাত বছরে (২০১৬-২২) মোটামুটি সাফল্য লাভ করে। ইতোমধ্যে এসডিজি কর্মসূচির দশ বছর পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে ব্যাপক পট পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এসডিজির পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রভাব তেমন চোখে পড়েনি।
এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশটি যেন হঠাৎ করেই হোঁচট খেয়েছে! সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করেছেন। জাতীয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে যেসব দেশ এতকাল আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যে অন্যতম। মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি ঘোষণাতেই রাতারাতি গৃহীত প্রকল্পসহ নানাবিধ কর্মসূচি আপাতত বন্ধ হয়ে গেল।
টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হবে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় বলা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা কাটেনি। এ অবস্থার দ্রুত অবসান চায় তারা। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা বর্তমান সরকারই করতে পারে। কারণ তাদের কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই, কোনো দল বা গোষ্ঠীর কাছে তারা দায়বদ্ধ নয়। তাদের দায়বদ্ধতা একমাত্র দেশবাসীর কাছে। সে ক্ষেত্রে সব জঞ্জাল সরিয়ে দেশের আপামর জনতা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে– এই প্রত্যাশা সবার।
মো.
তানজিমুল ইসলাম: প্রাবন্ধিক
aronnyok@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদক ষ প র জন য এসড জ
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গল গ্রহকে বসবাসের উপযোগী করতে অভিনব প্রস্তাব
লাল গ্রহ মঙ্গল নিয়ে মানুষের মাতামাতি থেমে নেই। মঙ্গল গ্রহের মাটিতে পারক্লোরেট রয়েছে, যা সাধারণভাবে মানুষ বা অন্য সব প্রাণের জন্য ক্ষতিকর। কীভাবে মানুষ মঙ্গল গ্রহকে প্রাণ ধারণের উপযোগী করা যায়, তা নিয়ে নানা পরীক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল গ্রহকে বসবাসের উপযোগী করার নানা উপায় নিয়ে অসংখ্য তত্ত্ব রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিক মরুভূমির মস বা লাইকেনের মতো উদ্ভিদ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছেন। এসব উদ্ভিদ মঙ্গলের কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুনমঙ্গল গ্রহে থাকা অদ্ভুত কাঠামো কি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ০৮ এপ্রিল ২০২৫সম্প্রতি পোলিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী লেজেক চেকভস্কি মঙ্গল গ্রহকে প্রাণের উপযোগী করতে অভিনব এক প্রস্তাব দিয়েছেন। মঙ্গল গ্রহকে বসবাসের উপযোগী করতে বিভিন্ন গ্রহাণু দিয়ে আঘাত করার কথা বলেছেন তিনি। তাঁর মতে, মঙ্গল গ্রহের মাটি পারক্লোরেট পূর্ণ বলে প্রাণের জন্য ক্ষতিকর। গ্রহের নিম্ন বায়ুমণ্ডলীয় চাপ মানুষের শরীরের জলীয় অংশকে দ্রুত শুকিয়ে ফেলবে। তাই মঙ্গল গ্রহে গ্রহাণু বিধ্বস্ত করার মাধ্যমে প্রাণের উপযোগী করে তোলার একটি পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
লেজেক চেকভস্কির তথ্যমতে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে গঠিত বলে স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে হিমায়িত কোনো গ্রহাণুর আঘাতে গ্রহটির পরিবেশ বদলে যেতে পারে। গ্রহাণুর আঘাতে বায়ুমণ্ডল তৈরি হলে সেখানে সহায়ক গ্যাস নির্গত হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
আরও পড়ুনমঙ্গল গ্রহে স্পেসএক্সের রকেট পাঠানোর সম্ভাব্য সময় জানালেন ইলন মাস্ক১০ এপ্রিল ২০২৫